Ads

সিয়ামঃ ইসলামের অন্যতম রুকন

মির্জা মুহাম্মদ নূরুন্নবী নূর

সাওম বা সিয়াম আরবি শব্দ। যার বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে বিরত থাকা, দূরে থাকা, অবিরাম চেষ্টা ও আত্ন সংযম। আর ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে যাবতীয় পানাহার এবং যৌনাচার থেকে বিরত থাকাকে সাওম বা সিয়াম বলা হয়। তবে সুবহে সাদিক উদয় হওয়ার পূর্ব থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযার নিয়তে একাধারে এভাবে বিরত থাকলেই কেবল তা রোযা বলে গণ্য হবে। সূর্যাস্তের এক মিনিট আগেও যদি কোন কিছু খেয়ে ফেলে, পান করে কিংবা সহবাস করে তবে রোযা হবে না। অনুরূপ উপায়ে সবকিছু থেকে পূর্ণ দিবস বিরত থাকার পরও যদি রোযাদার রোযার নিয়ত না করে থাকে তাহলেও রোযা হবে না। সাওম বা রোযা ইসলামের মূলভিত্তি বা আরকানের অন্যতম। রোযার অপরিসীম ফযিলত রয়েছে। আমরা তা আলোচনা করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

অন্যদিকে সিয়ামের আরেক নাম হচ্ছে রামাযান। যার বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে ঝলসে দেয়া, পুড়ে দেয়া বা প্রজ্বলিত করা। জানা যায় যে সময় রামাযানের নামকরণ নির্ধারণ করা হয় সেই বছর প্রচন্ড গরম পড়েছিল, যার কারণে সবকিছুকে ভস্মীভূত করে দিচ্ছিল তাই লোকেরা এ মাসের নাম রামাযান রেখেছিল। তবে আলেমগণের মতে, আল্লাহ তায়ালা যেহেতু এই মাসে স্বীয় অনুগ্রহে বান্দার জীবনের গুনাহগুলোকে জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করে নিস্পাপে পরিণত করে দেন, তাই এই মাসের নাম রাখা হয়েছে রামাযান।

রোযা পালন মূলত সর্বযুগেই প্রচলিত ছিলো। হযরত আদম আঃ থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ সাঃ পর্যন্ত সকল নবী রাসুলগণই সিয়াম পালন করেছেন। আল্লামা ইমামুদ্দীন ইবনে কাসির রঃ বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে তিনদিন রোযা রাখার বিধান ছিলো। পরে রামাযানের রোযা ফরয হলে তা রহিত হয়ে যায়। (দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, পৃষ্ঠা-২৯৫)।

হিজরতের আঠারো মাস পরে কিবলাহ পরিবর্তনের পরে শাবান মাসে রোযা ফরয হওয়ার নির্দেশ সম্বলিত আয়াত নাযিল হয়। প্রত্যেক বয়ঃপ্রাপ্ত, সুস্থ, মুকীম ও সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন মুসলিম নর-নারীর উপর রোযা পালন করা ফরয। সঙ্গত কারণে রামাযানের মাসে রোযা পালন করতে না পারলে তা পরে কাযা আদায় করে নেয়া ফরয। এছাড়া কাফ্ফারা ও ফিদইয়া আদায়েরও বিধান রয়েছে। মানুষের আত্নিক ও সামাজিক জীবনে রোযার বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে। আমরা আলোচনায় তা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধানের নাম। ইসলাম তার প্রতিটি ইবাদতের বিধান বিস্তারিত বর্ননা করেছে। অন্যান্য ইবাদতের ন্যায় রামাযানের বিধানও আলোচিত হয়েছে বিস্তারিতভাবে। ইসলাম রোযা পালনকে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরয করে দিয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনুল কারীমে বলেন-

হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়ামকে ফরয করে দেয়া হয়েছে। যেমনটি ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা আল বাকারা, আয়াত-১৮৩)।

আলোচ্য আয়াতের দ্বারা সিয়াম পালনকে ফরয করে দেয়া হয়েছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে কেউ যদি সিয়াম সাধনা ছেড়ে দেন তাহলে তিনি কাফির হয়ে যাবেন বলে ইজমা গৃহীত হয়েছে। এবিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর অনেক হাদিস বর্নিত হয়েছে। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্নিত। তিনি বলেন,

রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন- ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর স্থাপিত। ১। এই বলে স্বাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহর রাসুল। ২। সালাত প্রতিষ্ঠিত করা, ৩। যাকাত আদায় করা, ৪। হজ্জ পালন করা এবং ৫। রামাযানের রোযা আদায় করা। (সহীহ্ বুখারি ও মুসলিম)।

আলোচ্য হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইসলামের মৌলিক পাঁচটি ভিত্তির অন্যতম একটি রামাযান। তাই শরীয়তের ওজর ব্যতীত রোযা পালন থেকে বিরত থাকার মানেই হচ্ছে ইসলামের ভিত্তিকে অস্বীকার করা। যা কুফরীর শামিল। অতএব প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব হবে যথাযথ নিয়মে সিয়াম পালনে যত্নশীল হওয়া।

মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামাত হচ্ছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন। বিশ্বমানবতার মুক্তির দলিলপত্র হচ্ছে আল কুরআন। বিশ্বের একমাত্র পরিপূর্ণ জীবন বিধান হচ্ছে ইসলাম। আর এই ইসলামের যাবতীয় দিকনির্দেশনা রয়েছে আল কুরআনের পাতায় পাতায়। আয়াতে আয়াতে। সেই মহাদলিল আল কুরআন নাযিল হয়েছে পবিত্র রমযানুল মুবারকে। তার বর্ননা দিতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, রামাযান মাস হলো সেই মাস, যাতে আল কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্যে জীবন বিধান এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্যে সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ। আর হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসটি পাবে সে যেনো এ মাসের রোযা রাখে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ বা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূর্ণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্যে সহজ করতে চান, তোমাদের জন্যে কঠিন করতে চান না। যাতে তোমরা এ সংখ্যা পূর্ণ করতে পারো এবং তোমাদের হেদায়াত দানের জন্যে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ননা করো। যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে পারো। (সূরা আল বাকারা, আয়াত-১৮৫)।

এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, নিশ্চয়ই আমি একে (কুরআনকে) নাযিল করেছি মহিমান্বিত রাতে। আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত কি? মহিমান্বিত রাত হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিব্রাইল আঃ) অবতীর্ণ হয় তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে। আর শান্তি বর্ষিত হতে থাকে ফজরের উদয় পর্যন্ত। (সূরা আল কদর)। আলোচ্য আয়াত থেকেও প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র কুরআন মাজিদ রামাযান মাসেই অবতীর্ণ হয়েছে। আর রামাযানের এতো শ্রেষ্ঠত্বের মূল কারণ হচ্ছে আল কুরআন। তাই রামাযানের হক আদায় করতে হলে জীবন চলার পথে আল কুরআন থেকেই পথনির্দেশিকা গ্রহণ করতে হবে। অতএব আমলী জিন্দেগী গড়তে হলে কুরআনের জ্ঞান অর্জন অত্যন্ত জরুরী এবং ঈমানী দায়িত্বও বটে।

ইসলামে সিয়াম সাধনার অনেক মর্যাদার কথা বর্নিত হয়েছে। আমরা কুরআন এবং হাদিস থেকে কিছুটা জানবার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। সিয়ামের ফজিলত বর্ননা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাঃ অসংখ্য হাদিস বর্ননা করেছেন। আমরা তার কয়েকটি উপস্থাপন করছি।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, রোযা ঢাল স্বরুপ। সুতরাং রোযা অবস্থায় যেন অশ্লীলতা হতে বিরত থাকে এবং অজ্ঞ মূর্খের মতো কোন কাজ না করে। কেউ যদি তার সাথে ঝগড়া-ফ্যাসাদ করতে চায়, অথবা গালি দেয় তবে সে যেন দুইবার বলে, আমি রোযাদার। ঐ স্বত্ত্বার শপথ যাঁর নিয়ন্ত্রণে আমার জীবন, অবশ্যই রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ তায়ালার নিকট মিশকের ঘ্রাণের চেয়েও অধিক উৎকৃষ্ট। সে আমারই জন্য পানাহার এবং কাম প্রবৃত্তি পরিত্যাগ করে। রোযা আমারই জন্য, তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করবো। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশগুণ। (সহীহ বুখারি)।

হযরত সাহল রাঃ হতে বর্নিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাঃ বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে রাইয়ান নামের একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কেবলমাত্র কিয়ামতের দিন রোযাদার লোকেরাই প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেয়া হবে, রোযাদার লোকেরা কোথায়? তখন রোযাদার লোকেরা দাঁড়াবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরেই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে না পারে। (কাযি খান)।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ হতে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, রোযা এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে আমার রব! আমি তাকে দিনের বেলা পানাহার ও যৌনক্রিয়া থেকে বিরত রেখেছি। তার সম্পর্কে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। তার সম্পর্কে আমার সুপারিশ কবুল করুন। তখন তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে। (বেহেশতী জেওর, দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, পৃষ্ঠা- ৩০১)।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলে করীম সাঃ ঘোষনা করেছেন, যে লোক রোযার মাসের রোযা রাখবে ঈমান ও চেতনা সহকারে (সওয়াবের আশায়) তার পুর্ববর্তী গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারি)।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ হতে বর্নিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি, যে লোক একদিন আল্লাহর পথে রোযা রাখবে, আল্লাহ তার মুখমন্ডল জাহান্নাম হতে সত্তর বছর দূরে সরিয়ে রাখবেন। (সহীহ্ বুখারি ও মুসলিম )।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, তোমাদের নিকট রামাযান মাস হাজির। এটি একটি অত্যন্ত বরকতময় মাস। আল্লাহ তায়ালা এ মাসে তোমাদের প্রতি রোযা ফরয করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায়, এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় ও সেরা শয়তানগুলোকে আটক করে রাখা হয়। আল্লাহর জন্য এ মাসে একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে লোক এ রাতের মহাকল্যাণ লাভ হতে বঞ্চিত থাকল, সত্যিই সে বঞ্চিত ব্যক্তি। (নাসায়ী, আহমদ ও বায়হাকী)।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, আদম সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের সাওয়াব দশগুণ হতে সাতশতগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, রোযা এই সাধারন নিয়মের ব্যতিক্রম। কেননা তা একান্তভাবে আমার জন্যেই হয়ে থাকে। অতএব আমিই (যেভাবে ইচ্ছা) এর প্রতিদান দেব। রোযা পালনে আমার বান্দা আমারই সন্তোষ বিধানের জন্য স্বীয় ইচ্ছা বাসনা ও নিজের পানাহার পরিত্যাগ করে থাকে। রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি ইফতারের সময় এবং আরেকটি তার মালিক আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাৎ লাভের সময়। নিশ্চয়ই জেনে রেখো রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট সুগন্ধি হতেও অনেক উত্তম। (সহীহ্ বুখারি ও মুসলিম)।

এছাড়াও রোযাদারকে ইফতার করানোর কারণেও অনেক নেকী অর্জন হয়। যেমন হযরত সালমান ফারসি রাঃ হতে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। ঐ রোযাদারের সাওয়াবের সমপরিমাণ সাওয়াব সে লাভ করবে। তবে ঐ রোযাদারের সাওয়াবে কোন কম করা হবে না। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল সাঃ! আমরা সবাই রোযাদারকে ইফতার করাতে সক্ষম নই। রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন, পানি মিশ্রিত এক চুমুক দুধ বা একটি শুকনো খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারাও যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে এই পরিমাণ সাওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে পরিতৃপ্তভাবে খানা খাওয়াবে আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাউজে কাউসার হতে এমন পানি পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্বে তৃষ্ণার্ত হবেনা। (দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, পৃষ্ঠা-৩০৬)।
উপরে আলোচিত হাদিস থেকে আমরা রামাযানের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জানতে পারলাম। তাই আমাদের উচিত হবে ব্যক্তিগত জীবনে রোযার হক যথাযথভাবে আদায়ের চেষ্টা করে এবং অপরকে রোযা পালনে উদ্বুদ্ধ করা।

ভারসাম্যপুর্ণ সমাজ বিনির্মাণে রোযার কার্যকর ভুমিকা রয়েছে। একজন ব্যক্তি যখন সিয়াম পালন করেন, তখন তার আকলের দ্বারা প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রিত হয়। পাশবিক শক্তি অবদমিত হয়। রূহানী শক্তি বৃদ্ধি পায়। জৈবিক ও পাশবিক শক্তি হ্রাস পাওয়ার কারণে মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয় বিধায় অন্তর-আত্মা বিগলিত হয়ে আল্লাহর প্রেমে আকুল হয়। যার ফলে আল্লাহ ভীতি ও তাকওয়া বৃদ্ধি পায়। রোযার ফলে মানব মনে নম্রতা ও বিনয় সৃষ্টি হয়। দুঃখীজনের ক্ষুধার জ্বালা-যন্ত্রণা বুঝতে পারে। ফলে অভাবীদের প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ববোধ জাগ্রত হয়।

যে ব্যক্তি কোনদিনও ক্ষুধার্ত বা পিপাসিত থাকেনি সে কখনও পিপাসার্ত ও ক্ষুধার্ত মানুষের কষ্ট বুঝতে পারে না। কিন্তু রোযা পালনের ফলে সেটা বুঝতে পারেন। যার কারণে সে ব্যক্তি অসহায়দের প্রতি যত্নশীল হতে উদ্বুদ্ধ হন। অনাহারক্লিষ্ট দুঃখীদের প্রতি তার অন্তরে সহানুভূতির উদ্রেক হয়। ক্ষুধামুক্ত সমাজ গঠনে এটি বিরাট ভুমিকা পালন করে। অসহায়দের প্রতি সহায়দের সহযোগিতার হাত প্রসারিত হতে সহযোগিতা হয়। যা স্থিতিশীল সমাজ গঠনে সহায়ক। মানবিক গুনাবলীর বিকাশসাধনে একটি কার্যকর পক্ষাবলম্বন। তাই সুস্থ এবং স্থিতিশীল সামাজিক পরিবেশ বিনির্মাণে রোযার কার্যকর ভুমিকা রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে আরো বেশি যত্নশীল ভুমিকা নিতে পারলে আলোকিত সমাজ গড়তে সহজ হবে। রোযা থেকে শিক্ষা নেয়া এই মহান আদর্শ আমরা কাজে লাগাবো সমাজ গঠনে। দেশের কল্যাণে। মানবতার কল্যাণে।

সিয়াম সাধনা আল্লাহ তায়ালার দেয়া নির্ধারিত ইবাদাতের অন্যতম একটি ফরয ইবাদাত। আমাদের উচিত হবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রোযার গুনাবলীগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করা। যা হবে আমাদের সকলের জন্য মঙ্গলজনক। দেশ ও জাতির জন্য হবে সুষ্ঠু পরিবেশ গঠনের সহায়ক উপাদান। আমরা সকলের জীবনে রামাযানের শিক্ষা বাস্তবায়নে প্রচেষ্টায় রত থাকবো অনন্তকাল। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের জন্য নেক কাজে সহায় হোন। আমীন।

লেখকঃ সাহিত্যিক ও কলাম লেখক 

আরও পড়ুন