Ads

স্রষ্টায় বিশ্বাস করা কতটুকু যৌক্তিক

আরিফ মাহমুদ

অনেকেরই বদ্ধমূল ধারণা বিশ্বাস আর যুক্তি , বিজ্ঞান আর ধর্ম পানি আর তেলের মতো সম্পূর্ন বিপরীত দুটো ব্যাপার। এদের মিলন সম্ভব নয়।মন যদি মুক্ত হয় ধর্ম বিশ্বাস করার কোনো মানে হয় না। কিন্তু সত্য হলো মনের অন্তর চোখকে যদি আসলেই মুক্ত করা যায়, আর দৃষ্টিকে এই বিপুল বিশ্বের দিকে ছড়িয়ে দেয়া যায়। তবে শুধু ধর্মের খাতিরেই যে স্রষ্টায় বিশ্বাস বিশ্বাস তা নয় একেবারে লজিক আর কমনসেন্স দিয়ে উপলব্ধি করা যায়- একজন এমন অসীম ক্ষমতাবান আছেন যিনি সৌর জগৎ থেকে ভূজগৎ, ছায়াপথ থেকে মেঠোপথ, মানব গঠন থেকে জলের সন্তরণের সব জায়গায় তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট এঁকে দিয়েছেন।

কিভাবে? লজিক কি? প্রমাণ কোথায়?
তেরশ শতকের বিখ্যাত দার্শনিক এবং চিন্তক থমাস এ্যকুইনাস স্রষ্টার অস্তিত্ত্বের ব্যাপার তার যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন স্রষ্টায় বিশ্বাস তৈরির জন্য। আর বোস্টন কলেজের দার্শনিক পিটার ক্রেফট তার যুক্তিগুলো ব্যাখ্যা করেছেন।

কোনো কারণ ছাড়া কোনো কিছু নড়ে না। গতি, পরিবর্তন কোনো কিছুই এমনি ঘটে না। কোনো না কোনো কারণের বশে ঘটে। আর এই কারণটা কেউ না কেউ ঘটিয়ে থাকেন। কিন্তু এই কার্য-কারণের ঘটনা পেছনে যেতে যেতে চেইন রিএ্যাকশনের মতো ক্রম চলমান থাকে না। একটা পয়েন্টে গিয়ে স্থির হয়। যেখান থেকে কোনো এক শক্তি এই মোশনটা তৈরি করে দিয়েছেন। সেটা হলো সূচনা বা শুরুর পয়েন্ট। যার মাধ্যমেই এই চেইন ম্যুভিংটা শুরু হয়েছে। যিনি এটা ঘটিয়েছেন তাকে বলা যায় আনম্যুভড ম্যুভার। এই আনম্যুভড ম্যুভারই হলেন স্রষ্টা।

কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান এই যুক্তিকে নাকচ করে দেয়। কোয়ান্টাম মেকানিক্সে এমন কিছু চলমান জিনিস আছে উদাহরণ স্বরুপ রেডিওএ্যক্টিভ ডিকে । যা গতিপ্রাপ্ত হওয়ার পেছনে কোনো সুষ্পষ্ট কারণ বিজ্ঞান খুঁজে পায়নি। কিন্তু বিজ্ঞান এর পেছনে কোনো কারণ নেই এটাও আবার অস্বীকার করে না। প্রত্যেকটা জিনিসের একটা আদি কারণ আছে। যে আদি কারণটা বিজ্ঞান রাজ্যের বাইরে অবস্থান করছে। শুধুমাত্র আমাদের একটা গ্যালাক্সির ভিতরে যে রহস্য লুকিয়ে আছে তা উদঘাটন করতেই পৃথিবীর সব মানুষের সব সময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। হাতের এক চিমটি পরিমান জীবানু মিলে পুরো পৃথিবীকে কব্জা করে ফেললো। মানুষ অসহায় হয়ে মৃত্যু বরণ করলো। মানুষের ক্ষমতা আর অহংকারের দর্প সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো। কারণ- বিপুল বিশ্বের কাছে বিজ্ঞান তো শিশু। সে তো এখনো থ্রি ডাইমেনসনের ধুলো বালি নিয়ে নাড়াচাড়া করছে।

আরেকটি কারণ হলো শূন্য থেকে কোনো কিছু তৈরি হয় না।যদি কোনো কিছু ঘটার পেছনে প্রথম কারণ না থাকে। তবে ২য় কারণ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তার মানে দাঁড়ালো স্রষ্টা যদি না থাকে তবে সৃষ্টিও থাকে না। এই স্রষ্টা হলো জগতের সবকিছুর আদি কারণ। মানে সৃষ্টি যেহেতু আছে স্রষ্টাও একজন আছেন।

তাহলে কি এমন হতে পারে না। শুরু থেকেই যেমন স্রষ্টা ছিলেন। ঠিক তেমনি এই বিশ্বজগতও ছিলো। কেউ কাউকে তৈরি করেনি। সব কিছু এমনি হয়েছে বা সবকিছু সব সময়ে অস্তিত্ত্বমান ছিলো। কিন্তু পৃথিবীর আস্তিক ,নাস্তিক সব বিজ্ঞানীরা অন্ততঃ এই ব্যাপারে একমত হয়েছে- না একসময় ইউনিভার্সের কোনো অস্তিত্ব ছিলো না। এটা অস্তিত্বে এসেছে। কোনো কিছুর শুরু আছে তার মানে শুরুর আগে এটার অস্তিত্ত্ব ছিলো না। আর যখন অস্তিত্ত্বে এসেছে তার মানে এটার পেছনে অবশ্যই একটা কারণ আছে।

বিগ ব্যাং কসমোলোজির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এও জেনেছেন- পুরো ইউনিভার্সের সূচনা প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে যা এখনো সম্প্রসারণ এবং শীতলিকরণ প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি ধাপে এর অস্তিত্ব তৈরি হয়েছে। কোনো বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে কোনো সংশয় প্রকাশ করেন না। ওল্ড টেস্টামেন্ট, নিউ টেস্টামেন্টে এবং কোরআনে ছয় দিনের যে কথাটি বলা হয়েছে। এটা আসলে দিন না। এটা হলো পিরিয়ড বা ধাপ। কোনো কিছুর কলোশনও এমনি এমনি ঘটে না। দুটো জিনিসের কলোশন ঘটাতে কিংবা বিষ্ফোরণ ঘটাতে হলেও একটা ফোর্সের দরকার হয়। বিগ ব্যাং তৈরির পেছনে যে ফোর্সটা কাজ করেছে সেটাই হলো সব কিছুর আদি কারণ। আর এই কারণটাই সব কিছুর সূচনা তৈরি করে দিয়েছে।

ধর্ম শুরু থেকে অদ্যাবদি একই কথা বলে আসছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা নানা ব্যাপারে তাদের মতবাদ পাল্টেছেন। নতুন তথ্য উপস্থাপন করেছেন। একেক তথ্য দিয়ে একেকজন একেক সময় নোবেল পুরষ্কারও পেয়েছেন। মতের পরিবর্তনের কারণে বিজ্ঞানকে কি মিথ্যা বলা যাবে। না। সত্য বলা যাবে- না। কারণ- বিজ্ঞান মিথ্যাও বলে না, সত্যও বলে না। বিজ্ঞান শুধু ফ্যাক্ট উদঘাটন করে। এই ফ্যাক্ট উদঘাটন করতেই বিজ্ঞান একসময় বলেছে- ক্রিয়েশনিজম ইন ডিসগাইস। এখন বলছে বিশ্বের সূচনার মূল কারণ হলো বিগব্যাং।

হয়তো একদিন বিজ্ঞান বলবে এই বিগ ব্যাং যিনি ঘটিয়েছেন তিনি হলেন বিগ ব্যাংগার। যাকে কেউ বলে স্রষ্টা, কেউ বলে ভগবান, কেউ বলে ঈশ্বর আর কেউ বলে আল্লাহ। বৈজ্ঞানিক প্রমাণ স্রষ্টায় বিশ্বাস তৈরিতে ভূমিকা রাখবে ।

কিন্তু সবচেয়ে যেটা দুঃখজনক সেটা হলো- এতো কিছু জানার পর। আপনি বুঝতে পারলেন স্রষ্টা বলে একজন আছেন। কিন্তু জানার পরও তার নির্দেশিত পথে আপনি চললেন না। এতে ক্ষতি হলো কার? স্রষ্টার না আপনার????

লেখকঃ কলাম লেখক 

আরও পড়ুন-

কুরআন পড়ুন আর পুলকিত হোন, শিহরিত হোন, বিষ্মিত হোন !

আরও পড়ুন