Ads

যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের ফযিলত

 

(প্রতিটি মুসলিমের উচিত এই ফযিলত হাসিল
করার উদ্দেশ্যে কোমর বেঁধে প্রস্তুতি গ্রহণ করা)

“””””””””””””””””””””””””””””””””””””””””'””””””””””””””'”””””
♦আদম সন্তান মাত্রই পাপী। হাতে গোনা খুব কম মানুষই আছে যারা পাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারে।
তবে কি আমরা পাপ করে পাপী হিসাবেই এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিবো আর শেষ বিচারের দিন পাপী হিসবেই মহান আল্লাহর সম্মুখীন হবো?

রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন :

كُلّ ابْنِ آدَمَ خَطّاءٌ وَخَيْرُ الخَطّائِينَ التّوّابُونَ.

প্রতিটি বনী আদম ‘খাত্তা’-বারংবার পাপকারী। তবে ‘খাইরুল খাত্তাঈন’ অর্থাৎ পাপকারীদের মধ্যে উত্তম হল তারা, যারা ‘তাওয়াবূন’ অর্থাৎ যারা বেশি বেশি তওবা করে; গোনাহ হলেই তওবা করে নেয়।
(জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪৯৯)

এই হাদিস আমাদের মনে আশার সৃষ্টি করে। অর্থাৎ পাপ করলেও মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা পাওয়া যেতেও পারে। কাজেই আমরা যারা মনে করছি অনেক পাপ জমে গেছে তাদের এখনই কোমর বেঁধে লাগার সময়, যেন মহান আল্লাহ আমাদের তওবা কবুল করে ক্ষমাপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত করে নেন।

♦আল্লাহ তা‘আলা পরম দয়ালু এবং অসীম করুণাময়।তাই তিনি আপন বান্দাদের তওবার সুযোগ দিতে ভালোবাসেন।

তিনি চান বান্দারা ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করুক।কিন্তু মানুষ স্বল্প জীবনের অধিকারী। এই স্বল্প জীবনে কারো কারো ভুলের বোঝা এতো বিশাল আকার ধারন করে যে মনেহয় জীবদ্দশায় এ বোঝা আর হালকা করা সম্ভব নয়। কিন্তু মহান আল্লাহ্ তাঁর এই পাপী বান্দাদের উদ্দেশ্যে বছরে কিছু বরকতময় ও কল্যাণবাহী দিন রেখেছেন ; যাতে আমলের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়।

♦আমরা দুনিয়াবি পরীক্ষার দিনগুলোতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাই সবচেয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করার জন্য। তবে কেন আখেরাতের জন্য এসব পরীক্ষার দিনগুলোতেও সর্বাধিক প্রচেষ্টা ব্যয় করব না? এ দিনগুলোতে আমল করা তো বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি নেকী ও কল্যাণ বয়ে আনে।
এমন দিনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জিলহজ্জ মাসের এই প্রথম দশদিন। এ দিনগুলো এমন যে রাসূলুল্লাহ ﷺ সেগুলোকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাতে আমলের প্রতি তিনি সবিশেষ উদ্বুদ্ধ করেছেন।

আসুন জেনে নেই এই বিশেষ দশকের ফযিলত সম্পর্কে :

♦১. যিলহজ মাসের প্রথম দশদিন আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পরকালের পুঁজি সঞ্চয় করা যেতে পারে। এ দিনগুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

وَٱلۡفَجۡرِ ١ وَلَيَالٍ عَشۡرٖ ٢ – /سورة الفجر: ١، ٢

“কসম ভোরবেলার। কসম দশ রাতের”।
[সূরাহ ফাজর, আয়াত: ১-২]
.
ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন: এর দ্বারা উদ্দেশ্য যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিন।

.
♦২. আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

لِّيَشۡهَدُواْ مَنَٰفِعَ لَهُمۡ وَيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۖ ٢٨ /سورة الحج : ٢٨

‘যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।
[সূরাহ হজ, আয়াত: ২৮]‌’

এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিনসমূহ বলতে কোনো দিনগুলোকে বুঝানো হয়েছে সে সম্পর্কে ইমাম বুখারি রহ. বলেন,

قال ابن عباس: أيام العشر

“ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন: ‘নির্দিষ্ট দিনসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন”।
.
♦৩. বিশিষ্ট সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«ما من أيام العمل الصالح فيهن أحب إلى الله من هذه الأيام العشر، فقالوا يا رسول الله، ولا الجهاد في سبيل الله ؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم-: ولا الجهاد في سبيل الله، إلا رجل خرج بنفسه وماله فلم يرجع من ذلك بشيء. / رواه البخاري، والترمذي واللفظ له

যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনে নেক আমল করার মত অধিক প্রিয় আল্লাহর নিকট আর কোনো আমল নেই। তারা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদ করাও কি তার চেয়ে প্রিয় নয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে ঐ ব্যক্তির কথা আলাদা যে তার জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদে বের হয়ে গেল অতঃপর তার প্রাণ ও সম্পদের কিছুই ফিরে এলো না।
[বুখারি: ৯৬৯, তিরমিযি: ৭৫৭]
.
♦৪. ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নিকট কোনো দিন অধিক প্রিয় নয়, আর না তাতে আমল করা, এ দিনের তুলনায়। সুতরাং, তাতে তোমরা বেশি করে তাহলীল, তাকবীর ও তাহমীদ পাঠ কর।
[তাবরানী ফীল মুজামিল কাবীর]
.
♦৫. সাঈদ ইবনে জুবায়ের রাহিমাহুল্লাহর অভ্যাস ছিল, যিনি পূর্বে বর্ণিত ইবনে আব্বাসরে হাদিস বর্ণনা করেছেন: যখন যিলহজ্ব মাসের ১ম দশ দিন প্রবেশ করত, তখন তিনি খুব মুজাহাদা করতেন, যেন তার উপর তিনি শক্তি হারিয়ে ফেলবেন।
[দারামী: ২৫৬৪ হাসান সনদ]
.
♦৬. ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: যিলহজ্ব মাসের দশ দিনের ফযিলতের তাৎপর্যের ক্ষেত্রে যা স্পষ্ট, তা হচ্ছে এখানে মূল ইবাদতগুলোর সমন্বয় ঘটছে। অর্থাৎ সালাত, সিয়াম, সদকা ও হজ, যা অন্যান্য সময় আদায় করা হয় না।
[ফাতহুল বারী ১/২৬৩]
.
♦৭. জমহুর উলামায়ে কেরামের মতে : যিলহজ্ব মাসরে ১ম দশদিন সর্বোত্তম দিন, আর রমযান মাসের শেষ দশ রাত, সব চেয়ে উত্তম রাত। আল্লাহ্ই অধিক জ্ঞাত।
.
.
🔴যে রব আকাশসম গোনাহ ক্ষমা করে দেন, ক্ষমা করার জন্য বাহানা তৈরি করেন এবং বান্দার তওবায় এত খুশি হন তাঁর বান্দার কি গোনাহ রয়ে যাওয়া সাজে! আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে এই বিশেষ দশকের ফযিলাতের মাধ্যমে গোনাহের প্রায়শ্চিত্ত ও ক্ষমা অর্জন করার তাওফীক্ব দিন। আমীন।

লেখকঃ শাহীন আক্তার, কবি ও সাহিত্যিক।

আরও পড়ুন