Ads

কুরআন পড়ুন আর পুলকিত হোন, শিহরিত হোন, বিষ্মিত হোন !

জিয়াউল হক 

আপনি তোতলা হলে কি কথা বলবেন না আপনার মায়ের সাথে? আপনি তোতলা বলে কি আল্লাহর সাথে কথা বলবেন না? কুরআন তেলওয়াত করা মানে তো আল্লাহর সাথে কথা বলা। আপনার পড়া সুন্দর নয়, উচ্চারণ আরবদের মতো নয়, মাদ্রাসায় পড়া হুজুরদের মতো নয়, মাখরাজ এখনও মাদ্রাসা পড়ুয়াদের মতো শুদ্ধ হয়নি, তাই বলে কি কুরআন পড়বেন না?

জানেন কি? আজও এমন হাজার হাজার বেদুঈন, স্বল্পশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত আরব আছে, যাদের কুরআন তেলওয়াত শুনলে আপনি ভিমড়ি খাবেন! কিন্তু তারা রিতিমত কুরআন পড়ছে, তেলওয়াত করছে, নামাজে কেরাতও পড়ছে।

জানেন প্রখ্যাত সাহাবি হযরত সুহাইব রুমী রা: কুরআন পড়তেন বড় আবেগ দিয়ে, পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় খোদ আমিরুল মুমিনিন হযরত ওমর রা: বুঝতে পারতেন না, সুহাইব রা: কি পড়ছেন? ফলে তিনি সাথে থাকা অন্যান্য সাহাবিগণকে জিজ্ঞেস করেতেন সুহাইব কি পড়ছেন? বলা হয়ে থাকে তিনি তোতলা ছিলেন, কিন্তু তার কোন প্রমাণ ইতিহসে পাওয়া যায় না, আমি খুঁজেও পাইনি। ছোটকালে তাকে লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বাইজান্টাইন অঞ্চলে। সেখানেই তিনি অনারবদের মধ্যে বসবাস করেছেন, বড়ো হয়েছেন, পরবর্তিতে তাঁর মুখের আরবি ভাষা (এবং কুরআন তেলওয়াতও) কখনই আরবদের মতো হয়নি স্বাভাবিক কারণেই। আর তাই তার কুরআন তেলওয়াত শুনে হযরত ওমর রা: ধাঁধাঁয় পড়ে যেতেন। তারপরেও কি কোনদিন এই সাহাবি কুরআন তেলওয়াত থেকে বিরত থেকেছেন?

ইংল্যান্ডে বাংলাদেশি পরিবারগুলোতে এরকম ঘটনা প্রায়শই দেখি। এদেশে এসে বসবাসকারীদের মধ্যে যাদের সন্তান জন্ম নিয়েছে সেই সব সন্তানরা ইংলিশ পরিবেশে, ইংরেজদের মধ্যে শৈশব থেকেই বেড়ে উঠেছে, এদের ইংরেজি উচ্চারণ হুবহু ইংরেজদের মতো, অথচ তাদের বাবা মায়ের মুখে ইংরেজি শুনলেই বুঝা যায় যে তারা বাংলাদেশি কিংবা ভারতীয় উপমহাদেশীয়। তাই বলে কি তারা ইংরেজদের সাথে ইংরেজিতে কথা বার্তা বলা বন্ধ করেছেন কখনও? লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি নানা পেশায় কাজ করছেন আরব দেশগুলোতে। প্রয়োজনের তাকিদেই তারা আরবি ভাষা শিখেছেন, তবে তাদের আরবি উচ্চারণ আরবদের মতো নয়, কিন্তু তাই বলে কি তারা আরবিতে কথা বলা বন্ধ করেছেন কখনও?

এ বাস্তবতাকে মাথায় রেখে একটাবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো, আপনার উচ্চারণ যথার্থ নয়, আপনার কন্ঠে বিশ্ববিখ্যাত ক্বারীদের মতো সূর নেই, তাই বলে কি আপনি কুরআন পড়া বন্ধ করবেন? আল্লাহ পাক কি আপনার জন্য রিয়েলিটি শো বসিয়ে রেখেছেন যে তিনি আপনার কন্ঠের যাদু দেখতে চান? আপনি কেন কুরআন পড়া বন্ধ করবেন?

পড়ুনঃ সমাজ বদলায় সময়োচিত প্রাজ্ঞ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপে, আবেগে নয়

কুরআন পড়ুন, যতোটুকু সামর্থ আছে, ততোটুকু দিয়েই পড়ুন, প্রতিদিন পড়ুন, সুযোগ পেলেই পড়ুন। মনে করুন আপনি তোতলা, তো কি হয়েছে? আল্লাহর সাথেই তো কথা বলছেন! আল্লাহ কি আপনার মনের আবেগটা টের পাচ্ছেন না? মনের মাধুরি মিশিয়ে কুরআন তেলওয়াত করুন, মুখস্থ না পারলে দেখে দেখে পড়ুন, তেলওয়াত করুন। এক পারা না পারলে এক পাতা, এক পাতা না হলে মাত্র একটা লাইনই পড়ুন না। কিসে আপনাকে আটকে রেখেছে? কে কি বললো সে কথা ভাববেন না, যে যাই বলুক, আপনার তাতে কি? আপনি কুরআন পড়ুন, সুযোগ পলেই পড়ুন, সুযোগ না পেলে সুযোগ করে নিন। কুরআন পড়ুন, খতম দেবার চেয়ে একটা পাতা পড়ুন, বুঝে পড়ুন, পড়ে ভাবুন, চোখ বুঁজে শুধু ভাবুন।

একবার যদি কুরআন আপনার সামনে নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করে তবে আপনি বিষ্ময়ে অবাক হবেন। অতিতে পড়া আয়াতগুলোই আপনার সামনে আবার নতুন করে এমনসব চিন্তা ধারনা মেলে ধরবে যে আপনি শিহরিত, পুলকিত হবেন, রোমাঞ্চিত হবেন। আপনার সাথে আল্লাহ নিজেই যে বিশেষভাবে স্পেশাল সময় নিয়ে কথা বলছেন, কেবলমাত্র আপনাকেই স্পেশাল বার্তা দিচ্ছেন, বিশেষ বিশেষ আয়াত পড়ার সময়, সেগুলো নিয়ে চোখ বুঁজে ভাববার সময় আপনার মনের ভেতরে এমনসব চিন্তা ও ধারনার উদ্ভব হবে যে, তা দেখে সেটা আপনি নিজেই টের পাবেন।

এক অনিন্দ সুখে আপনার অন্তর নেচে উঠবে, বিশ্বাস করুন। পৃথিবীর কোন হুজুর কি ভাবলো আপনার সুর, কন্ঠ আর মাখরাজ নিয়ে, সেটা ভাবার সময় কই আপনার? আপনি নিজের মতো চেষ্টা করে যান উচ্চারণ সঠিক করার, সেটা হলেই হলো।

কুরআন তেলওয়াতের উদ্দেশ্য যেন এটা না হয় যে, কতোটা খতম আপনি দিতে পারলেন। বরং উদ্দেশ্য যেন এটা হয় যে, আপনি কুরআন বুঝবেন, চারিপাশের মানুষগুলোকে জানবেন, চিনবেন, আপনার সমাজ সভ্যতাকেও জানবেন ও চিনবেন। কুরআন যখন সমাজ ও সভ্যতা চেনাতে শুরু করবে, তখন দেখবেন মনে মনে আপনি নিজেই হাসছেন একা একা, কারণ আপনি আপনার চারপাশের মানুষ ও সমাজকে চিনতে পারছেন এমনভাবে যে জন্মের পর এতোটা বছর কাছাকাছি বাস করেও তাদেরকে এর আগে এতোটা পরিস্কারভাবে জানতে পারেন নি, চিনতেও পারেননি।

কুরআন পুড়ন আর পুলকিত হোন, শিহরিত হোন, বিষ্মিত হোন। কুরআন পড়ে যদি আপনি শিহরিত, পুলকিত বিষ্মিত না হয়ে থাকেন, তা হলে বুঝে নিন, আপনার পড়ার মধ্যে এখনও ঘাটতি রয়েছে-

লেখকঃ ইংল‍্যান্ডের বেসরকারী মানসিক হাসপাতালের সাবেক সহকারী পরিচালক ও লেখক, ইংল‍্যান্ড

আরও পড়ুনঃ  মুসলিম উম্মাহর পতনের পাঁচ কারণ

 

আরও পড়ুন