।। মূলঃ মুফতি মেনক ।।
।। অনুবাদঃ মাসুম খলিলী ।।
এক. আমাদের যেভাবে লালন-পালন করা হয়েছে তা আমাদের মাটির সাথে রাখে এবং একইভাবে নেতিবাচকতার প্রতিক্রিয়া বা উত্তর দেওয়া থেকে বিরত রাখে। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।
দুই. লোকেরা আপনাকে গালাগাল করবে, আপনাকে অপমান করবে, আপনাকে হেয় করবে, আপনাকে অপদস্ত করবে এবং আপনার বিরুদ্ধে রায় দেবে। এই সব আপনাকে , আপনার পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ, ত্যাগ বা আপনি কতদূর এসেছেন না জেনে করে। তারা কখনই আপনার সাথে দেখা করেনি, আপনার সাথে কথা বলেনি অথবা আপনার সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি। এসব কিছু ভুলে যান এবং চলতে থাকুন।
তিন. নিজের শত্রু হয়ে উঠবেন না। অতীতকে নিয়ে পড়ে থাকা বন্ধ করুন। আপনার করা প্রতিটি ভুল নিয়ে চিন্তা করা বন্ধ করুন। অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা বন্ধ করুন। যিনি আপনাকে তৈরি করেছেন তার কাছ থেকে আপনার শক্তি সন্ধান করুন। ক্ষমা করুন এবং এগিয়ে যান।
পূনশ্চঃ
এক. যখন কেউ তাদের আসল রঙ দেখায়, তখন তাদের বিশ্বাস করুন। এটা হতাশাজনক ও কষ্টদায়ক কিন্তু আপনাকে লক্ষণ দেখানোর জন্য সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ দিন । তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না। সত্য না জেনে জীবনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার কথা কল্পনা করুন।
দুই. মাঝে মাঝে, আমরা ভাল লোকদের নিন্দা করি কারণ আমরা তাদের সাথে কয়েকটি বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করি। তারা যে ভালো করছে তা আমরা দেখতে অস্বীকার করি। মতবিরোধ স্বয়ংক্রিয়ভাবে একজন ব্যক্তিকে চরম, খারাপ বা মন্দ করে না। যে সম্মানের সাথে একমত নয় এবং যে মন্দ তার মধ্যে পার্থক্য করতে শিখুন!
আরও পড়ুন-
তিন. সর্বশক্তিমান যখন আমাদের অপেক্ষা করতে বাধ্য করেন, তখন এতে প্রজ্ঞার বিষয় থাকতে পারে। এটিকে শাস্তি বলে মনে করবেন না। এটি কোনও সুরক্ষা অথবা সম্ভবত অন্য কিছুর প্রস্তুতিও হতে পারে। সর্বদা ভাল চিন্তাভাবনাটি করুন কারণ তিনি সর্বদা আমাদের জন্য সেরাটি চান। এটি আমরা যা কল্পনা করেছিলাম তা নাও হতে পারে তবে এটি হলো সেটি যা আমাদের সেই সময়ে প্রয়োজন!
চার. অন্যরা ভালো করলে আমরা কেন খুশি হতে পারি না? আপনি যখন আপনার সাফল্যের গল্প বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করেন তখন বিদ্বেষীদের পূর্ণ শক্তিতে বেরিয়ে আসার জন্য প্রস্তুত থাকুন। তারা আপনাকে উপহাস করতে পারে, আপনার সম্পর্কে গুজব ছড়াতে পারে অথবা এমনকি কঠোর শব্দও প্রয়োগ করতে পারে। চিন্তা করবেন না। যা সঠিক তার উপর ফোকাস করুন এবং কাজ চালিয়ে যান।
পাঁচ. সর্বশক্তিমান। অশ্লীল কথাবার্তা, অজ্ঞতাপূর্ণ কাজ, যুক্তিতর্ক এবং অপমান করা থেকে আমাদের দূরে রাখুন, এই কারণে যে এসব কিছু আপনার ক্রোধ সৃষ্টি করে। এই জাতীয় কাজগুলি প্রায়শই আঘাত করা, ভয় দেখানো, মানসিক বিপর্যয় ঘটানো ইত্যাদির উদ্দেশ্যে হয়। আসুন আমরা আমাদের কাজগুলিকে পরিশুদ্ধ করি ।
ছয়. আমরা একেবারে নিখুঁত নই। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ভুল করতে থাকব। তবে এটি প্রক্রিয়ারই অংশ। নিজের ব্যাপারে এবং নিজের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ শুরু করবেন না। নিজের প্রতি সদয় হোন। নিজের ছোট খাট বিচ্যুতিকে ক্ষমা করুন। সর্বদা সর্বশক্তিমান দ্বারা পরিচালিত হন এবং একটি বরকতময় যাত্রা করুন।
দ্রষ্টব্য:
নারী, সন্তান-সন্ততি, জমাকৃত সোনা-রূপার ভান্ডার, পছন্দসই (চিহ্নিত) ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামার প্রভৃতি কমনীয় জিনিসকে মানুষের নিকট শোভনীয় করা হয়েছে। এ সব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহর নিকটেই উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে। বল, আমি কি তোমাদেরকে এ সব বস্তু হতে উৎকৃষ্ট কোন কিছুর সংবাদ দেব? যারা সাবধান (পরহেযগার) হয়ে চলে তাদের জন্য রয়েছে উদ্যানসমূহ যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, তাদের জন্য পবিত্রা সঙ্গিনীগণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তার দাসদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত। যারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা বিশ্বাস করেছি; অতএব আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা কর এবং দোযখের শাস্তি থেকে আমাদেরকে রক্ষা কর।’ যারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, দানশীল এবং রাত্রির শেষাংশে ক্ষমাপ্রার্থী। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত :১৪-১৭)
আরও পড়ুন-
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন, রাতের অর্ধেক অথবা দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে মহান ও প্রাচুর্যময় আল্লাহ পৃথিবীর আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন, কোনো প্রার্থনাকারী আছে কি যাকে প্রদান করা হবে? কোনো আহ্বানকারী আছে কি যার আহ্বানে সাড়া দেওয়া হবে? কোনো ক্ষমাপ্রার্থনাকারী আছে কি, যাকে ক্ষমা করা হবে? আল্লাহ তায়ালা ভোর বিকশিত না হওয়া পর্যন্ত এরূপ বলতে থাকেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬৫১);
হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ বলেন, ‘তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তা হলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ (তিরমিজি : ৩৫৪০);
হজরত ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, কোনো ব্যক্তি নিয়মিত ক্ষমাপ্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। (আবু দাউদ : ১৫১৮)।
মূল লেখকঃ মুফতি মেনক, মুসলিম শিক্ষাবিদ, ইসলামী চিন্তাবিদ ও বক্তা
অনুবাদকঃ মাসুম খলিলী, কলাম লেখক ও কার্যনির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-
[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১) ।
মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে। আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।