।। শামছুন্নাহার রুমি ।।
গীবত সচেতন আমাদের অনেকের অবস্থা এমন,নিজে কারো গীবত করি না ঠিকই কিন্তু কেউ যেচে পড়ে গীবত করলে শুনতে বাধ্য হতে হয়! এরূপ অবস্থায় গীবতকারীকে থামিয়ে দিয়ে কিছু বললে সে মনে কষ্ট পাবে,সম্পর্ক নষ্ট হবে ভেবে আমরাও চুপচাপ গীবত শ্রবণ করি; আর মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার অপরাধে অপরাধী হয়ে নিজের কষ্টার্জিত আমল নির্দ্বিধায় অন্যের নামে বিলিয়ে দিই। অথচ গীবত করে মজা লুটলো গীবতকারী,মাঝখান দিয়ে আমি কাবাব মে হাড্ডি!
আর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক যে তাতে আমার খারাপও লাগছে না,আমি নিজেকে এই আমল হারানো গুনাহ থেকে বিরতও রাখার চেষ্টাও করছি না! আচ্ছা কে বলেছে আমাকে এত অতিরিক্ত(!) ভালো হতে? কে বলেছে সম্পর্ক নষ্টের দোহাই আর গীবতকারী ব্যক্তির কষ্টের কথা ভেবে নিজেকে এমন আমল হারানো মিসকীন হতে? কে বলেছে নিজের মহামূল্যবান সম্পদ অন্য কেউ জিহ্বার মজায় মজায় ধ্বংস করে দিয়ে যাচ্ছে আর আমাকে তা মানবতা দেখিয়ে,ভদ্রতা দেখিয়ে অতি বড় বিনয়ী হতে? কে বলেছে?কে?কে?
নাহ,কেউ বলেনি!!কেউ বলে না। এটা আমাদের তৈরি নিয়ম যা আমাদেরকেই ধ্বংস করে ছাড়ে! এমন অতিরিক্ত ভালো হওয়া,অতিরিক্ত ভদ্র হওয়া, অতিরিক্ত বিনয়ী হওয়া,অন্যের কষ্ট ভাবতে গিয়ে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া অতি বড় দরদী হওয়া থেকে রবের কাছে পানাহ চাই!
আরও পড়ুন-
আমাদের গলার পরে থাকা ৩,৪ ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন,ডায়মন্ডের নেকলেসটা কেউ এভাবে আদর যত্ন করে গল্প করতে করতে আলতো বা হ্যাচকা টানে খুলে নিয়ে গেলে আমরা চুপচাপ দিয়ে দিতাম কখনো? কোনো প্রকার বাধা না দিয়ে স্বেচ্ছায় এত দামী জিনিস গুলো অন্যকে নিতে সাহায্য করতাম কখনো?না,তা কখনোই করতাম না! প্রশ্নই আসে না এমনটা করার।এত দামী সম্পদ,এত মূল্যবান জিনিস কেউ এভাবে নিতে দেয় কাউকে? যেভাবেই হোক আটকানোর চেষ্টা করবে,বাধা দিবে, চিৎকার করবে,মোট কথা নিজের সবটুকু বল,শক্তি,ক্ষমতা,কৌশল সব প্রয়োগ করে হলেও এই দামী জিনিস গুলো কে প্রটেক্ট করবে,নিজের করে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করবে,ক্ষেত্র বিশেষ জীবন বাজি রেখে হলেও আগলে রাখার চেষ্টা করবে, কখনো হারাতে চাইবে না,খোয়াতে চাইবে না।
বলি,দুনিয়ার সামান্য সম্পদ স্বর্ণ আর ডায়মন্ডকে রক্ষা করার জন্য যদি হয় এত এত প্রচেষ্টা, তবে আখিরাতের মহা মূল্যবান সম্পদ এবং একমাত্র সম্পদ নেক আমলকে রক্ষা করার বেলায় সেই তাগিদ নেই কেন? তবে কি দুনিয়ার সম্পদের চেয়ে আখিরাতের সম্পদের মূল্য কম হয়ে গেল? তবে কি নেক আমলের চেয়ে স্বর্ণের চেইন ডায়মন্ডের নেকলেসের মূল্য আমাদের কাছে বেশি? যদি উত্তর আসে,না না তা হবে কেন?নেক আমল তো অবশ্যই দামী।
তাহলে এবার প্রশ্ন আসে,যদি তাই হয় তবে এগুলো হেফাজত করার তাগিদ কেন নেই আমাদের? আমার কাছে গীবত করতে আসা কোনো ব্যক্তিকে সতর্ক করলে বিনিময়ে তার সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার চেয়ে কি আমার নেক আমল আমার কাছে দামী নয়?মূল্যবান নয়?শ্রেয় নয়? উত্তর যদি হয়,হ্যা।তবে বলবো,শুধু নেক আমল করলেই হবে না,নেক আমল হেফাজত করতেও শেখো প্রিয়!! আমল খেকো ছিদ্রগুলো বন্ধ করার হিম্মত অর্জন করো। না হলে যে সব বরবাদ!!
লেখকঃ কলাম লেখক
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-
[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১)
মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে। আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।