।। মহীয়সী অনলাইন ডেস্ক ।।
বাংলাদেশের জাহিদ সবুর গুগলের একজন বড় কর্মকর্তা । ২০০৭ সালে তিনি গুগলে যোগ দেন । জাহিদ সবুরের বাড়ি পটুয়াখালীতে হলেও জন্মগ্রহণ করেছেন সৌদি আরবে । তার বাবা সৌদি আরবের কিং ফয়সাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক । তিনি প্রথমে মিরপুরের মণিপুর হাইস্কুলে ভর্তি হন । পরে ইংলিশ মেডিয়াম স্কুল “অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে” ভর্তি হন । পরে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সিএসএ তে ভর্তি হয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন । সম্প্রতি তার একটা পোস্ট নিয়ে বেশ হৈচৈ পরে যায় । তার ফলোয়াররা সেই ইস্যু নিয়ে টাকে গালাগালি করায় তিনি আজকে এই মুহূর্তে লাইভে এসে জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি ফেসবুকে আর সেভাবে আসবেন না । তার পরিবার টাকে এই কাজ করতে নিষেধ করেছেন ।
বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যাপারে যে পোস্ট করেছেন তাতে কেন নাখোশ হয়েছে তার ফলোয়াররা । কি বলেছিলেন তিনি কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে? তার পোস্ট টা নিম্নে,
“আমার বাবা মা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। অনেকেরই হয়তো পরিবারে কেউ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। কাজেই আমরাই সংখ্যায় অনেক অনেক বেশি। যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাদের জন্যে আমরা কতটুকু সুবিধা দিতে চাই? শূন্য? স্বার্থপর হলে তাহলে এটাই সঠিক। সবার ভালবাসা পাবার আশায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে নিজেদের পক্ষে কথা বলা খুব সহজ। আমি সেই মানুষ নই। তেমন মানুষ ভাল না লাগলে আমাকে আনফলো করে বিদায় হন।
আর বাকিরা যাদের মধ্যে নিঃস্বার্থ নীতি বলতে কিছু আছে, আপনারা কতটুকু সুবিধা দিতে চান মুক্তিযোদ্ধাদের? ৩০% এর জায়গায় ২০%? নাহয় ধরলাম ১০%? বছরে কয়টা সরকারী পোস্টে নতুন মানুষ নিয়োগ দেয়া হয়? ৩০% এর জায়গায় ১০% ধরলে ২০% নিয়ে যদি মতের অমিল হয়ে থাকে, তাহলে তাতে বছরে কয়টা নিয়োগের অমিল হয় সেটা হিসেব করে দেখেছেন? আমাদের জনসংখ্যার ০.০০০১% কি হয় তাতে? বাকিরা কি করবেন?
আপনাদের এত দুর্নীতির অভিযোগে যে সরকারী চাকরির পরীক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে নিয়োগ নিয়ে সেই চাকরির জন্যে এত যুদ্ধ? আজকের যুগে যেখানে পরিশ্রম করলে পৃথিবী আপনার, সুযোগের অভাব নাই, সেখানে এই শর্টকাট নিয়ে ঘুষ খাবার বন্দোবস্ত করতে পারবেনা বলে এত হাহুতাশ, এত যুদ্ধ। আপনারাই তো বলেন সরকারী চাকরীর বেতন কম, তারপরও বেশিরভাগ ঘুষ নিয়ে রাতারাতি বড়লোক হবার জন্য এই পথ বেছে নেয়। তারপর নিজেরাই আবার সেটার জন্যে মরিয়া?
আমার বা অন্য কারো দোষ ধরে আপনাদের জীবন বদলাবে না। কাজেই যা ইচ্ছা করতে পারেন কিন্তু তাতে লাভ ক্ষতি শুধু আপনাদেরই হবে, বাকিরা শুধু আপনাদের পছন্দমতো কথা বলে নিজেদের স্বার্থে আপনাদের নিয়ে ব্যবসা করবে। কিন্তু সেটা বোঝার শক্তি আপনাদের নাই।”
আরও পড়ুন-

কেউ কেউ তার সূরে সূর মিলালেও অধিকাংশ বিপরীত মত দিয়েছেন । অনেকেই জানিয়েছেন তাকে অনেক পছন্দ করেন । দেশের এই মুহূর্তে তার থেকে এধরনের পোস্ট কেউ আশা করে নাই ।
সুরাইয়া আফরিন নামে একজন মন্তব্যে লিখেছেন, “দেশের বাইরে বসে কি সুন্দর জ্ঞান বিতরণ করছেন। একবার আসুন না এমন পরিস্থিতিতে দেখুন আপনার যুক্তিগুলো কোথায় চলে যায়।”
সাইফুল্লাহ নামের আর একজন বলেছেন, “এতই যদি দেশপ্রেমী হতেন তবে দেশে নাই কেনো?”
আরও পড়ুন-
রোকেয়া বসরি নামে আর একজন লিখেছেন,”কোটা নিয়ে কথা বলার মতো সিচুয়েশনই কেন আসলো ভাইয়া? মুক্তিযোদ্ধারা দেশটা স্বাধীন করেছিল বৈষম্য দূর করতে, যেখানে আমরা বঞ্চিত ছিলাম সেখান থেকে বের করে সবার সমান অধিকারের আশায় (হয়তো)!
১৯০ পেয়েও একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের পছন্দসই সাব্জেক্ট এ পড়ার সুযোগ হারায় সাধারণ ছাত্র যেখানে কোটার জোরে এর থেকে অনেক কম মার্কস এর ব্যবধানে ঐ সাব্জেক্ট এই পড়ার সুযোগ পায় কোটার অংশীরা।
আর অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটায় তো ৩০ বা এর আশেপাশে পেলেই পাশ আবার তারা এতেও ফেল করলে আরো গেরেজ দিয়ে পাশ করাতে বাধ্য হতে হয় শুধুই এই কোটার জোরে।এতো বৈষম্য কেন?
আবেগ ছিল বলেই হয়তো মুক্তিযোদ্ধারা পর্যাপ্ত অস্ত্রের যোগান ছাড়াও সাহস নিয়ে যুদ্ধে নেমেছিলেন।আমরা জানি আমাদের আবেগ নিয়ে মানুষ ব্যবসা করে। তবে, ২০-২৫ বছরের ছাত্রদের বুঝ ব্যবস্থা ৩৫-৪০ বছর বয়সী মানুষের মতো ভাবলে কি চলে বলেন? সাধারণ মানুষের দাবী থাকতেই পারে, সরকার মধ্যস্ততা করবে, যৌক্তিক দাবী মেনে নেয়ার হলে নেবে, সম্ভব না হলে সেটাও বিনয়ের সহিত বলতে পারে বা সেটা নিয়ে কাজ করার সুযোগ /সময় চাইতে পারে।
আর এই যে, যারা ছাত্রদের হয়ে তাদের ভালো মন্দ সরকারকে উপস্থাপন করে তারাই যদি ছাত্রদেরকে সরকারি বাহিনীর মতো করে ঢালাওভাবে নিয়ন্ত্রণ করার পূর্ণ অধিকার ও সুযোগ পেয়ে যায় সেখানেই বা কি বলার আছে।
অবশ্যই আপনি এসব ব্যাপারে অনেক বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তাই, আমার ক্ষুদ্র মতামত শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আমি মনে করি এইসব কিছুর পেছনে কিছু উস্কানিমূলক সাংবাদিকদের ভূমিকাও কম নয়।”
আরও পড়ুন-
সাব্বির হোসেন রাব্বী নামের একজনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মন্তব্য হচ্ছে,
“… ভাই আপনার থেকে এরকম একটা মুহূর্তে এইরকম পোষ্ট আশা করি নাই। প্রথমত আপনি দেশের জনগনের সংখ্যা দেখতে হবে। চাইলেও এত শিক্ষার্থী বিদেশ যাওয়া অসম্ভব, এই দেশে থাকতেই হবে। সরকারি চাকরিতে বেতন বেশিও আছে, চাকরি শেষ হলে যে টাকা পাবে নিজের অনাগত ভবিষ্যতের জন্য রেখে যেতে পারবে এটা যে কারোরই সপ্ন। এখন আপনি বলতাছেন মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা দিবো না একেবারে। কেউ বলে নাই তাদের সুবিধা দিবে না এতদিন সমস্যা ছিলো? কিন্তু সংখ্যায় যারা কম তারা এতগুলো কোটা কেন পাবে? আর কোটা পাবে ঠিক আছে, নাতি নাতনিরা কোটা পাওয়ার অধিকার কেমনে রাখে? এইটা বুঝায় দিবেন আমাদের কে? প্লিজ আপনি যেহেতু এটাকে সমর্থন করতাছেন আপনার কাছে অবশ্যই এর উত্তর থাকার কথা। সন্তান পর্যন্ত ঠিক আছে বাট নাতি নাতনিরা কোন যুক্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পাওয়ার অধিকার রাখে? আর আন্দোলন এর কারণ ও আছে, বাংলাদেশে বর্তমানে রেজিস্ট্রারকৃত মুক্তিযোদ্ধার অর্ধেকের বেশি ফেইক, ২০-৩০% আছে যাদের বয়সও স্বাধীনতার বয়সের চেয়ে কম। তাহলে পুরো একটা জাতি একদম স্রেফ চুপ থেকে এটা মেনে নিবে? আপনারা বিদেশ যেতে পারছেন আর আপনাদের কাছে শুধু মনে হচ্ছে কেন দরকার এইসব আন্দোলন। কিন্তু আপনাদের এত বুদ্ধিমান মাথায় এটা ঢুকে না দেশের এত বড় জনসংখ্যার মধ্যে এত মানুষ কখনোই বিদেশ যেতে পারবে না, দেশের চাকরি ক্ষেত্রই একাংশের বড় আশার জায়গা। দেশের বাহিরে যেতে পারলে এমন অনেক পোষ্ট দেওয়া যায়, দেশে থাকতেন তাহলে কথার সুর অন্য রকম হতো। সবশেষে আপনাদের মত বুদ্ধিজীবীদের জন্য লজ্জা ছাড়া আর কিছুই দেওয়ার বাকী নেই। এই লেখা লেখার আগে নিজ দেশের জনগণ, পরিস্থিতি সব সম্পর্কে ভাবা উচিত ছিলো।”
পরিশেষে বলা যায় জাহেদ সবুর হচ্ছেন উচ্চ বিত্ত পরিবারের সন্তান যে চাইলেই বিদেশে গিয়ে তার পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে নিতে পারবেন । উনি কি করে বুঝবেন খেঁটে খাওয়া সাধারণ মানুষের পালস, তাদের প্রয়োজন? যিনি ইংরেজি মেডিয়ামে পড়াশুনা করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাজুয়েশন করে বিদেশে পড়তে যায় এমএস করার জন্য তিনি কি বুঝবেন সরকারী চাকুরীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটার জন্য নির্ধারিত থাকলে বাকি ৪৪ শতাংশে চাকুরী পাওয়া দুর্নীতির এই বাজারে কতটা দুষ্কর বিষয়!
জাহিদ সবুরের ব্যাপারে আরও জানতে পড়ুন-Our Zahid Google’s manager
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে । আসুন ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।