।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক, মহীয়সী ।।
রাজ্য ভাগের ষড়যন্ত্র ফের নতুন করে চাগাড় দিয়ে তোলার চেষ্টা শুরু হয়ে গেছে নিখুঁত পরিকল্পনা করে। ঝাড়খণ্ড থেকে নির্বাচিত বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে সংসদে দাঁড়িয়ে দাবি করেছেন বিহারের তিনটি জেলা কাটিহার, আরারিয়া ও কিষানগঞ্জ এবং পশ্চিমবঙ্গের দু’টি মুসলিম জেলা মুর্শিদাবাদ ও মালদহকে নিয়ে একটি পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল গঠন করে সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে আনার। আর রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ আপাদমস্তক বিচ্ছিন্নতাবাদী অনন্ত মহারাজ দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন করে গ্রেটার কোচবিহার পৃথক রাজ্য গঠনের। তার আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজ্যের বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলে এসেছেন উত্তরবঙ্গের আটটি জেলাকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বের করে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য। অনন্ত মহারাজ আবার এটাও বলেছেন যে গ্রেটার কোচবিহার রাজ্য গঠনে কেন্দ্রীয় সরকার নাকি তাঁকে মৌখিক আশ্বাস দিয়েছে।

ভোটে যেসব এলাকায় বিজেপি বিশেষ সুবিধা করতে পারছে না বেছে বেছে সেইসব জায়য়াগুলিতে সাম্প্রদায়িক উসকানি, ধর্মীয় জিগির তুলে মেরুকরণের মাধ্যমে ভোটে জেতা ও ক্ষমতা দখলের জাল বিছানোর চেষ্টা করছে। রাজ্যভাগ করার কথা বলে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে কাজ হাসিল করতে চাইছে। বিহারের তিনটি ও পশ্চিমবঙ্গের যে দু’টি নিয়ে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (রাজ্য নয়) গঠনের কথা হচ্ছে সেগুলি প্রধানত মুসলিম অধ্যুষিত। এখানে বিজেপি জেতে না। তাই কেন্দ্রীয় স্বৈরাচারী শাসনের অধীনে এনে এখানকার মানুষকে বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করতে চাইছে।
আরও পড়ুন-
তাছাড়া আরএসএস-বিজেপি ভাষাভিত্তিক রাজ্যের এবং বড় রাজ্যের বিরোধী। তারা চায় ধর্মীয় ভারসাম্যের পুনর্বিন্যাস করে এমনভাবে নতুন রাজ্য গঠন করা যেখানে সর্বাধিক রাজনৈতিক সুবিধা মিলবে। এই কায়দাতেই তারা লোকসভা ও বিধানসভা কেন্দ্রের পুনর্বিন্যাস করে ধর্মীয় মেরুকরণের সুবিধা ভোটে জেতার রাস্তা প্রশস্ত করে। জম্মু-কাশ্মীর এবং আসামে এমনটাই করা হয়েছে। আবার বড় রাজ্য তারা চায় না। বড় রাজ্যের ক্ষমতা ও প্রভাব বেশি। বিরোধীদের শাসনে থাকলে তাদের কবজা করা কঠিন। তাই রাজ্য যত ছোট হয় তত তারা দুর্বল ও প্রভাব প্রতিপত্তিহীন হয়ে পড়ে। তখন কেন্দ্রীয় শাসনে অধীনে তাদের কাঠের পুতুল বানিয়ে ফেলা যায়। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে দুর্বল করে কেন্দ্রীভূত স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করা যায়। এটাই আরএসএস’র লক্ষ্য। তাই রাজ্যগুলিকে ভাগ করার জন্য মানুষকে নানা পরিচিতি সত্তায় চিহ্নিত করে বিচ্ছিন্নতাবাদী মানসিকতা ছড়ানোর চেষ্টা করে।
ঝাড়খণ্ডে এখন আরএসএস-বিজেপি ঝাঁপিয়ে পড়েছে আদিবাসীদের সঙ্গে মুসলিমদের সংঘাত বাধাতে। আদিবাসীদের উসকানি দিচ্ছে মুসলিম হুহু করে বেড়ে রাজ্য দখল করবে বলে। বঙ্গ-বিহারের পাঁচ রাজ্যে বলছে অনুপ্রবেশকারীরা এসে হিন্দুদের অত্যাচার করছে।
উত্তরবঙ্গে বলছে বাংলার সঙ্গে থাকায় উন্নয়ন হচ্ছে না। এইভাবে বাংলাকে একাধিক টুকরো করে অস্তিত্ব লোপাটের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মালদহ ও মুর্শিদাবাদ যুক্ত হবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে, কোচবিহার হবে আলাদা রাজ্য। উত্তরবঙ্গের বাকি জেলাগুলি উত্তর-পূর্ব ভারতে জোড়ার নামে আলাদা হবে। বাংলা সঙ্কুচিত হবে দক্ষিণবঙ্গে। এরপর বলবে জঙ্গলমহল আলাদা হোক। তারপর বলবে রাঢ়বাংলা আলাদা হোক। সব ছিন্নভিন্ন, টুকরো টুকরো করে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে গোটা দেশকে কেন্দ্রীভূত স্বৈরশাসনে আনার চেষ্টা হবে। হিন্দু রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় নয়, পুরোপুরি এককেন্দ্রিক, স্বৈরশাসন।
আরও পড়ুন-
তবে পশ্চিমবঙ্গের বাংলার বুদ্ধিজীবী ও লেখকরা বিজেবি সরকারের এই দাবী মানতে নারাজ । বিজেপি (ভারতীয় জন্তা পার্টি) নেতাদের বাংলা ভাগের দাবি নিয়ে এবার মুখ খুললেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বাংলাকে ভাগ করা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক চাল বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট বাঙালি সাহিত্যিক। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বললেন, “বাংলা ভাগ হবে না। বাংলা ভাগ হতে গেলে সাংঘাতিক অবস্থা হবে। এই সব প্রস্তাব মাঝে মধ্যে ওঠে।” বঙ্গভঙ্গ নিয়ে আলোচনা নেহাতই হাওয়া বদলের চেষ্টা বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বাংলার দুই মুসলিম অধ্যুষিত জেলাকে ‘কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল’ করতে চেয়ে বির্তক উস্কে দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। সংসদে দাঁড়িয়ে বাংলা ও বিহারের কয়েকটি জেলা নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের দাবি তোলেন নিশিকান্ত। বাংলার মালদহ, মুর্শিদাবাদের সঙ্গে বিহারের কিষাণগঞ্জ, আরারিয়া, কাটিহার নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন-
গত বৃহস্পতিবার লোকসভার জ়িরো আওয়ারে বাংলা ও বিহারের উল্লিখিত জেলাগুলিতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কারণে জনবিন্যাস বদলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার বিজেপি সাংসদ। তাঁর বক্তব্য, এই পাঁচ জেলার জনবিন্যাস পাল্টে গিয়েছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জন্য। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল না করা হলে হিন্দুদের অস্তিত্ব থাকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। নিশিকান্ত দাবি করেন, ‘‘ওই জেলাগুলিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করে এনআরসি কার্যকরের উদ্যোগ নিক কেন্দ্র।’’ উল্লেখ্য, সম্প্রতি বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার দাবি করেন, উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বের অংশ করে দেওয়া হোক।
সুত্রঃ পুবের কলম ও গণশক্তি সারাক্ষণ
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে । আসুন ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।