।। ড. মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন ।।
জুম্মার দিন ইসলাম ধর্মে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। আল কোরআন ও হাদিসে জুম্মার দিনের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলতের উপর বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যায়। এই দিনে মুসলিমদের জন্য বিশেষ সালাত (জুম্মার নামাজ) পালন করা বাধ্যতামূলক এবং এ দিনের অন্যান্য আমল ও ইবাদতেরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
আল কোরআনের আলোকে জুম্মার দিনের গুরুত্ব
আল কোরআনে জুম্মার দিনের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে সূরা আল-জুমুআহতে এ দিনের গুরুত্ব ও আদর্শ পালনবিধি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সূরা আল-জুমুআহতে বলা হয়েছে,
“হে ঈমানদারগণ! জুম্মার দিন যখন সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ছুটে যাও এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ কর। এটি তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার।”সূরা আল-জুমুআহ (৬২:৯-১০)
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে জুম্মার নামাজের আহবানকে গুরুত্ব দিতে বলেছেন এবং মুসলমানদেরকে এই দিনে ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করে নামাজে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়েছেন। এটি জুম্মার নামাজের গুরুত্ব ও তার ফজিলত সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে।
আবার সূরা আল-আহজাবে বলা হয়েছে।
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তার প্রশংসা কর।” সূরা আল-আহজাব (৩৩:৪১-৪২)
যদিও এই আয়াত সরাসরি জুম্মার দিনের জন্য নয়, তবে আল্লাহর স্মরণের গুরুত্ব এখানে প্রতিফলিত হয়েছে, যা জুম্মার দিনের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
হাদিসের আলোকে জুম্মার দিনের গুরুত্ব
জুম্মার দিনের গুরুত্ব নিয়ে বহু হাদিস পাওয়া যায় যা এই দিনের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে বিস্তৃত নির্দেশনা প্রদান করে।
আবু হুরাইরাহ (রা) থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন “সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুম্মার দিন। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছিল, এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং এই দিনেই তাকে সেখান থেকে বের করা হয়েছিল। আর এই দিনেই কেয়ামত সংঘটিত হবে।” (সহীহ মুসলিম)
এই হাদিসে জুম্মার দিনের ঐতিহাসিক ও ভবিষ্যত গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে, যা এই দিনের বিশেষ মর্যাদার প্রমাণ দেয়।
সালমান আল-ফারসি (রা) থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:”যে ব্যক্তি জুম্মার দিনে গোসল করে, যথাসম্ভব পবিত্রতা অর্জন করে, নিজের চুলে তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর জুম্মার নামাজে যায়, এবং ইমামের কাছাকাছি বসে চুপ করে ইমামের কথা শোনে, তার এক জুম্মা থেকে আরেক জুম্মার মধ্যবর্তী সময়ের পাপসমূহ ক্ষমা করা হয়।” (সহীহ বুখারী)
এই হাদিসে জুম্মার দিনের ইবাদতের ফজিলত ও তা পালন করার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। জুম্মার দিনের বিশেষ আমল
১. গোসল করা
জুম্মার দিনের অন্যতম সুন্নত আমল হল গোসল করা। এটি শুধুমাত্র শারীরিক পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, বরং আত্মিক পবিত্রতাও বৃদ্ধি করে।
২. সুগন্ধি ব্যবহার করা
জুম্মার দিন সুগন্ধি ব্যবহার করাও একটি সুন্নত। এটি সামাজিক শিষ্টাচার ও পারস্পরিক সম্মানের প্রতীক।
৩. তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া
জুম্মার দিন তাড়াতাড়ি মসজিদে গিয়ে সামনের কাতারে বসার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এর মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য ও সমন্বয় সৃষ্টি হয়।
৪. সূরা কাহাফ পাঠ করা
জুম্মার দিন সূরা কাহাফ পাঠ করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হাদিসে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি জুম্মার দিন সূরা কাহাফ পাঠ করে, তার জন্য নূর সৃষ্টি হয় যা পরবর্তী জুম্মা পর্যন্ত তাকে আলোকিত করে রাখে। (মুসলিম)
৫. দরুদ শরিফ পাঠ করা
জুম্মার দিন রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত আছে, “তোমরা জুম্মার দিনে আমার উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ কর, কেননা তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে যায়।” (আবু দাউদ)
জুম্মার দিনের নামাজের আদব ও শিষ্টাচার
১. খুতবা শোনা
জুম্মার নামাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল খুতবা শোনা। ইমাম খুতবার মাধ্যমে মুসলিমদের নানান ধর্মীয় ও সামাজিক দিক নির্দেশনা প্রদান করেন, যা মুসলিমদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
২. চুপ থাকা
খুতবার সময় চুপ থাকা এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার। হাদিসে বর্ণিত আছে যে, খুতবার সময় কথা বলা নিষেধ এবং এটি জুম্মার নামাজের গুরুত্বকে হ্রাস করে।
৩. ইমামের কাছাকাছি বসা
জুম্মার দিন তাড়াতাড়ি মসজিদে গিয়ে ইমামের কাছাকাছি বসার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এটি খুতবা ভালোভাবে শোনার এবং ইমামের সাথে সংযোগ স্থাপন করার সুযোগ প্রদান করে।
জুম্মার দিন ইসলামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ দিন। আলকোরআন ও হাদিসের আলোকে এই দিনের বিশেষ গুরুত্ব ও পালনবিধি সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায়। মুসলিমদের জন্য এই দিনের ইবাদত ও আমল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
জুম্মার দিনের ইবাদত পালনের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে এবং তাদের পাপসমূহ থেকে মুক্তি পেতে পারে। তাই প্রতিটি মুসলিমের উচিত জুম্মার দিনের ফজিলত ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে সঠিকভাবে এই দিনটি পালন করা। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে জুম্মার দিনের গুরুত্ব বুঝে তা পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন ইয়া রব্বুল আলামীন।
লেখকঃ প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে । আসুন ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।
ফেসবুকে লেখক মোঃ ইয়ামিন হোসেন