Ads

জীবন হোক সুন্দর ব্যবহার প্রস্ফুটিত

রায়হান রাশেদ

‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়’ কথাটা সর্বজন স্বীকৃত। খুব প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ। ব্যবহার মানুষকে অপর মানুষের সঙ্গে জীবন নিয়ে আলোচনা তোলে। মানুষকে মুগ্ধ করে। আকর্ষণ করে। ভালোবাসার মতবিনিময় করে। প্রেমের লেনদেন চলে। সবকিছুর মূলে আচার-ব্যবহার। অজানা-অচেনা, ভিন দেশি একজন মানুষও ভালো ব্যবহারে ঝুঁকে পড়ে অপর ব্যক্তির প্রতি। সে হৃদয় গভীর থেকে স্ফীত স্বরে আওয়াজ করে ‘লোকটি খুব ভালো’।
জগৎ স্বীকৃত শ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মদ (সা.) এর জীবন চরিত্র ছিল মাধুর্যপূর্ণ ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি মানুষের মন জয় করেছেন সুন্দর অমায়িক ব্যবহারে। তাঁর ব্যবহার আচরণে মুগ্ধ হয়ে ইসলামের শীতল শান্তি সুখময় ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে বহু পথ ভোলা মানুষ। আল্লাহ প্রদত্ত ধর্ম ইসলাম মানুষকে উৎসাহিত করেছে ভালো ব্যবহারের প্রতি। সুন্দর আচরণের হুকুম দিয়েছে খোদার শাশ্বত চিরন্তন বাণী আল কোরআন। আল্লাহ বলেন, ‘মোমিনদের প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ করো।’ (সূরা হিজর : ৮৮)।
জীবনকে ধারণ করতে হবে নৈতিকতার ডোরে। নৈতিকতা জীবনে বয়ে আনে সফলতা আর সার্থকতা। নৈতিকতা বিবর্জিত জীবনে অশান্তির দাবানল দাউ দাউ করে জ্বলে। একজন মানুষের নীতিনৈতিকতা ভালো হলে অপর মানুষ তার দ্বারা উপকৃত হবে। তার আচার-ব্যবহারে মুগ্ধ হবে। তার কাছ থেকে ভালো কিছু শিখবে। মানুষের সঙ্গে আচার-ব্যবহার, কথা-বার্তায় হতে হবে বিনয়ী, নম্র এটা মহানবীর শিক্ষা। সহজ-সরল ভাষায় কথা বলা পছন্দনীয় ও মানবপ্রিয়। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি নৈতিক দিক দিয়ে সর্বোত্তম, সেই আমার নিকটতম হবে। আর তোমাদের মধ্যে যেসব লোক বাচাল, দুর্বোধ্য ভাষায় এবং অহংকারের সঙ্গে কথা বলে, তারা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত এবং কেয়ামতের দিন আমার কাছ থেকে অনেক দূরে থাকবে।’ (তিরমিজি সূত্রে রিয়াজুস সালেহিন : ১৭৩৮)।
মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা ভালো কাজ। পুণ্যের কাজ। ক্ষুদ্র এ হাসির কাজটি আল্লাহ পছন্দ করেন। হাসি-খুশি কথা বললে মানুষেও ভালোবাসে। আবু জর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ভালো কাজের ক্ষুদ্রাংশকেও অবজ্ঞা করো না, যদিও তা তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ।’ (রিয়াজুস সালেহিন : ৬৯৪)।
ইসলাম বরাবর মানুষকে উৎসাহিত করেছে মানব কল্যাণে নিবেদিত হতে। মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করতে। সুন্দর ভালো কথা বলতে। সুন্দর কথার আড়ালে খেলা করে সফলতা-ভালোবাসা। সুন্দর কথা মানুষের মনকে নাড়া দেয়। ভালো হওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। সুন্দর কথাই গোনাহ মাফ হয়। সওয়াব হয়। সদকা হয়। একজন গরিব মানুষ যে আল্লাহর রাস্তায় অক্ষমতার কারণে দান-সদকা করতে পারে না, সে যেন মানুষের সঙ্গে ভালো কথা বলে। সুন্দর মনোহর আলাপ করে। ভালো কথাও সদকা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আমাকে বলেছেন, ‘সুন্দর কথাও একটি সদকা।’ (বোখারি)।
আল্লাহপাক মানব কল্যাণ ও মানব সফলতার প্রতিটি বিষয় স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। সুন্দর পরিশীলিত জীবন গড়ার মাইলফলক স্থাপন করেছেন সূর্যের মতো আলোকময় করে কোরআনুল কারিম ও সুন্নতে রাসুলকে। মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেয়ার লক্ষ্যে উৎসাহিত করেছেন বিভিন্ন আমলের দিকে। আল্লাহ দয়ার ভা-ার খুলে দিয়ে বান্দার শুভকামনায় ঘোষণা করেছেন সুন্দর ব্যবহারে জান্নাতে প্রবেশের। সুন্দর ব্যবহার জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ। ইসলাম মহান উদারতার পরিচয় পদে পদে দিয়ে মানব মুক্তির পথ দেখিয়েছে দিবালোকের মতো। আদি ইবনে হাতিম বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জাহান্নামের আগুন থেকে আত্মরক্ষা করো। যদিও তা খ-িত খেজুরের বিনিময়েও হয়। সে যদি তাও করতে সক্ষম না হয়, সে যেন                অন্তত ভালো ও সুন্দর ব্যবহার দ্বারা হলেও নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচায়।’ (বোখারি : ৬৫৪০)।
আমাদের জীবনের সব অপরাধ কসুর পঙ্কিলতা-আবিলতা ভুলে জীবনকে সাজাতে হবে সুন্দর ব্যবহারে। আলোকময় করতে হবে আসন্ন ভবিষ্যৎকে। তা হতে হবে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে। সবশেষে বলতে চাই, আমাদের জীবন হোক সুন্দর ব্যবহারে প্রস্ফুটিত ও আলোকিত।

আরও পড়ুন