Ads

ইহুদী রথচাইল্ড ফ্যামিলি ও তার অজানা তথ্য

মোঃ আহসান হাবিব

পৃথিবীতে সব থেকে ধনী ব্যাক্তি কে? বিল গেটস? ওয়ারেন বাফেট? নাকি ফেইসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ? প্রতিবছর ফোর্বস ম্যাগাজিন এ নিয়ে তালিক প্রকাশ করে। ২০১৮ সালের তালিকায় প্রথম স্থানে আছে Amazon এর সিইও জেফ বেজোস। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১১২ বিলিয়ন ডলার। সেই তালিকায় যথাক্রমে বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেট এরা। কিন্তু একটি নাম নেই সেই তালিকায়। একটি নাম বললে ভুল হবে আসলে। বলতে হবে একটি পরিবারের নাম। পরিবারটির নাম রথচাইল্ড।
বলা হয়ে থাকে, পৃথিবী সমগ্র সম্পদের চার ভাগের তিন ভাগ অংশের মালিকানা নাকি এই পরিবারটির হাতে। বিশ্বের ধনীদের তালিকায় এই পরিবারের কারোর নাম নেই কারণ বাইরের কেউ জানেই না এই পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ কি। একমাত্র পরিবারের লোকেরাই বলতে পারে তারা মোট কতটূকু সম্পদের অধিকারী। রথচাইল্ড পরিবার বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য পরিবার হওয়ার পাশাপাশি সম্ভবত সবচেয়ে রহস্যময় পরিবারও বটে। আঠারো শতকের ষাটের দশকে ব্যাংকিং ব্যবসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আজকের অবস্থানে উঠে আসে এই ইহুদি পরিবার। গত দুই শতকের ও বেশি সময় ধরে এদের নিয়ে প্রচলিত আছে বহু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। কেউ কেউ এসব সত্য বলে মানেন। আবার কেউ শুধুমাত্র ষড়যন্ত্রই মনে করেন।

রথচাইল্ড পরিবারের ইতিহাস
রথচাইল্ড পরিবারের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, এই পরিবারের প্রথম উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি মায়ার আমসেল বাউয়ার। ১৭৪৪ সালে এক জার্মান ইহুদি পরিবারে তার জন্ম হয়। তার বাবার নাম ছিল মোজেস আমসেল বাউয়ার। বাবা পেশায় ছিলেন একজন মহাজনী ব্যবসায়ী ও স্বর্ণালঙ্কার। ছোটবেলা থেকেই ছেলেকে সুদী ব্যবসা শিক্ষা দিতে শুরু করেন তিনি। ছোট বেলা থেকেই তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন মায়ারের ব্যবসার হাতেখড়ি হয় বাবা মোজেসের জার্মানীর ফ্রাংকফুর্টে ইহুদী স্ট্রীটের দোকানে। ১৭৫৫ সালে মারা যান মোজেস। এরপর হ্যানোভারের একটি ব্যাংকে কাজ শুরু করেন মায়ার। অসাধারণ কৌশল আর মেধা কাজে লাগিয়ে অল্প সময়েই হয়ে যান প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র পার্টনার। পরে আবার ফ্রাংকফুর্টে ফিরে বাবার ব্যবসা পূনরায় কিনে নিয়ে নিজের নাম বদলে রাখেন রথচাইল্ড। যা এখন মানুষ রথচাইল্ড ফ্যামিলি নামে চেনে। ব্যস, সেই থেকে শুরু। আর পেছনে ফিরতে হয়নি মায়ার রথচাইল্ডকে।

হ্যানোভারে কাজ করার সময় ইউরোপের প্রায় প্রতিটি রাজপরিবারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। ওপেনহাইমারে কাজ করার সময় মায়ার রথচাইল্ডের ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে ওঠে জেনারেল ভন এস্টর্ফের সাথে। জেনারেল ভন ছিলে জার্মানীর প্রিন্স উইলিয়ামের ঘনিষ্টজন। উইলিয়ামের বিরল মেডেল ও কয়েন সংগ্রহের বাতিক আছে জেনে মায়ার বেশ কিছু বিরল মেডেল ও কয়েন দিয়ে উইলিয়ামের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। এভাবেই মায়ার কিছু দিনের মধ্যেই ইউরোপের প্রায় প্রতিটি প্রাসাদ ও রাজকীয় পরিবারের সাথে ব্যবসা শুরু করে। তবে তার সবথেকে ঘনিষ্ঠ প্রশয়দাতা ছিলেন উইলিয়াম।
উইলিয়াম এর কারবার ছিল ইউরোপের বিভিন্ন রাজকীয় পরিবারকে যুদ্ধে সৈন্য সরবারহ করা। উইলিয়াম ছিল বিশাল ধনসম্পদের মালিক। সেই আড়াইশ বছরে আগে তার সম্পদ ছিল প্রায় ২০ কোটি। হঠাৎ কোন এক কারণে উইলিয়ামকে ডেনমার্ক পালিয়ে যেতে হয়। তখন তিনি রথচাইল্ডকে দিয়ে যান ৬০ হাজার পাউন্ড, যার তৎকালীন মূল্যমান প্রায় ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। বুদ্ধিমান মায়ার রথচাইল্ড ওই ৬০ হাজার পাউন্ড দিয়ে তার চার ছেলেকে ইউরোপের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ শহরে পাঠিয়ে দেয় মার্চেন্ট ব্যাংক খুলতে। এভাবে শুরু হয় রথচাইল্ড পরিবারের সমগ্র ইউরোপকে ব্যাংকের মাধ্যমে কিনে রাখা। ১৭৬০ সালে সারা বিশ্বে প্রথম আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রবর্তন করে এই মায়ের রথচাইল্ড ও তার ৫ ছেলে। আর এখানে সার্থকতা পায় ‘রথ চাইল্ড ফ্যামিলি’।

ইউরোপের সর্বত্র ব্যাংকিং বা সোজা ভাষায় ঋণ ব্যবসায় একচ্ছত্র আধিপত্য আনে রথ চাইল্ডের চার ছেলে। ইউরোপের ঐ সময়কার সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহর গুলো ছিল নেপলস (ইটালি), প্যারিস (ফ্রান্স), ভিয়েনা (অস্ট্রিয়া) ও লন্ডন (ইংল্যান্ড)। আর মায়ার রথচাইল্ড তার এক ছেলেকে রেখে দেয় ফ্রাঙকফুর্টে তার অন্যান্য ব্যবসা দেখভালের জন্যে। এই ৫টি শহর থেকে ইউরোপের সমস্ত রাজকীয় পরিবারের সাথে রথচাইল্ডরা ব্যবসা গড়ে তোলে। রথচাইল্ডরা বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাদেরকে উচ্চ সুদে ঋণ, বন্ড ইত্যাদি দিত।

রথচাইল্ড পরিবারের ব্যবসায়ীক সফলতা
ইউরোপের পাঁচটি শহরের রাজপরিবারের সাথে রথচাইল্ড পরিবার ব্যবসা শুরু করে। উপায়টি খুব সোজা। রাজায় রাজায় যুদ্ধ হবে। রথচাইল্ড পরিবার দুই পক্ষের রাজাকেই চড়া সুদে ঋণ, বন্ড ইত্যাদি দিবে। এবং যেই পক্ষই হারুক বা জিতুক সেই ঋণ শোধ করতে হবে। শোধ করতে না পারলে জমি জমা, ধন সম্পদ বন্ধক রেখে আরো উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হবে। কি অভিনব ব্যবসা! এখানেই তারিফ করতে হয় রথচাইল্ড ফ্যামিলির। যুদ্ধে যেই রাজাই জিতুক না কেন, তা নিয়ে রথচাইল্ডের মাথা ব্যাথা নেই। কারণ টাকাতো তাদের পরিবারের হাতেই আসবে।

উইলিয়ামের দিয়ে যাওয়া ওই তিন মিলিয়ন ডলারের ব্যাপারটাও মজার। বৃটিশ সাম্রাজের জেনারেল হেস, উইলিয়ামকে ওই টাকা দেন তার সৈন্যদের বেতন হিসাবে। যেটা প্রিন্স উইলিয়াম মেরে দেয় এবং পরে উইলিয়ামের থেকে ওই টাকাটা মেরে দেয় মায়ার রথচাইল্ড। মায়ার ওই টাকার একটা অংশ দিয়ে তার বড় ছেলে নাথান রথচাইল্ডকে লন্ডনে পাঠায় ব্যবসা করতে।

নাথান লন্ডনে গিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কাছ থেকে সোনা কিনে এবং নাথান লর্ড ওয়েলিংটনের সাথে ব্যবসায় চার ধাপে বিপুল লাভ করে। আর এদিকে নেপোলিয়নের ফ্রেঞ্চ সাম্রাজ্য ও বৃটিশ সাম্রাজ্যের লড়াই তখন তুঙ্গে। নেপোলিয়ন হুমকি দিচ্ছে বৃটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তি ভেঙে দিবে। যেই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে ছিল রথচাইল্ড ফ্যামিলির ব্যাংকিং ব্যবসা। কিন্তু এ নিয়ে রথচাইল্ডদের কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। কিছুদিন পরে দেখা গেল বৃটিশ ও ফ্রেঞ্চ জাহাজগুলো পরস্পরের নৌ ও অন্যান্য ব্যবসার পথ আটকে রেখেছে। তখন কেবল একটা কোম্পানী যাতায়াত করছে। তাহল রথচাইল্ড ফ্যামিলির। হ্যা ঠিকই ভাবছে দুইপক্ষেরই অর্থের যোগানদাতা রথচাইল্ড পরিবার। লন্ডনে নাথান রথচাইল্ড ও প্যারিসে জেকব রথচাইল্ড।

ইউরোপের অর্থনীতি ও রথচাইল্ড পরিবার
বৃটিশ ও ফ্রেঞ্চ সাম্রাজ্য তখন মুখোমুখি। ওয়াটার লুতে দুই পক্ষ সমগ্র শক্তি নিয়োগ করে যুদ্ধ করছে। যুদ্ধের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে কে নিয়ন্ত্রন করবে পৃথিবী জুড়ে (ভারতের খনিজ, কাপড়, মসলা ; বার্মার রুবি; আফ্রিকার সোনা ও ডায়মন্ড; তেল, তুলা, দাস ব্যবসা ইত্যাদি) অর্থনীতি। রথচাইল্ড যুদ্ধের দুইপক্ষেরই অর্থ যোগান দিচ্ছে, নানা রকম খবর সংগ্রহ করছে, যুদ্ধের প্রতিদিনের ফল লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের বন্ড এর দাম ওঠা নামা করাচ্ছে। যুদ্ধও একটা ব্যবসা যেটা আমরা অনেকেই বুঝি না। এখন থেকে না, বহু আগে থেকেই যুদ্ধ এক ধরণের ব্যবসা।

জুন ১৫, ১৮১৫ – রথচাইল্ডের স্পাই কিছু গুরুত্বপূর্ণ খবর নিয়ে এলো নাথানের কাছে, খবরে চোখ বুলিয়ে নাথান দ্রুত ফিরে গেলেন লন্ডনে। পরদিন সকালে নির্বিকারভাবে বিক্রি করতে শুরু করলেন বৃটিশ বন্ড। স্টক এক্সচেঞ্জে মহামারী লেগে গেলো। অনেকে মনে করল রথচাইল্ড নিশ্চয় কিছু একটা জানে, বৃটিশরা হেরে গেছে।
অল্প সময়ের ভিতরে পানির দামে সব বিক্রি হয়ে গেলো। এইবার, এক্সচেঞ্জ বন্ধ হবার একটু আগে রথচাইল্ডের নির্দেশে তার সমস্ত লোক চুপ চাপ পানির চেয়েও কম দামে সমস্ত কন্সাল কিনে নিলো। নাথানের লন্ডন ফেরার ২০ ঘন্টা পরে জানা গেলো বৃটিশদের জয়ের কথা। একদিনেই নাথানের সম্পদের পরিমান বেড়ে গেলো ২০ গুণ। নাথান রথচাইল্ডের হাত দিয়ে প্রথমে বৃটিশ অর্থনীতি ও পরে সমগ্র ইউরোপের অর্থনীতি চলে এলো একটি মাত্র পরিবারের হাতে।
বৃটিশদের হাতে ভালো রকম মার খাওয়ার পরে ফ্রেঞ্চ অর্থনীতি নড়বড়ে হয়ে পড়ে। ফ্রেঞ্চ সরকার ধার করতে শুরু করে ব্যাংকের কাছ থেকে। সরকারী বন্ড বিক্রি ও টাকা সংগ্রহের কাজে রথচাইল্ডের প্যারিস ব্রাঞ্চকে ইচ্ছে করেই বাইরে রাখে তারা। আভিজাত্যের অহমিকায় অভ্যস্ত ফ্রেঞ্চ এরিস্ট্রোকেটরা রাস্তার ক্ষ্যাত রথাচাইল্ডদের পাত্তা দিতে চায়নি । হয়ত শত্রুপক্ষের অর্থ যোগানের ইস্যুটাও ছিলো।

এরিস্ট্রোকেটদের মন যোগাতে রথচাইল্ডরা অভিজাত পার্টি, উপহার, শিল্পকলার কেনা কাটা ইত্যাদি করেও যখন পাত্তা পাচ্ছিলো না তখন একটা খেলা খেললো। ১৮১৮ সালের অক্টোবরে তারা দ্রুত কিনে নিতে শুরু করলো ওউভ্রার্ড আর বেয়ারিং ব্রাদার্সের সরকারী বন্ড। ফলে বন্ডের দাম বেড়ে গেলো বহুগুণে। এরপর হঠাৎ করেই ৫ই নভেম্বর ১৮১৮ তে তারা একসাথে সব বন্ড বাজারে ডাম্প করাতে ফ্রেঞ্চ অর্থনীতির বারোটা বেজে গেলো। এইবার ফ্রেঞ্চ রাজা বাধ্য হলেন রথচাইল্ডদের কাছে মাথানত করতে। পৃথিবীর দুটো প্রধান অর্থনীতি, বৃটিশ ও ফ্রেঞ্চ, চলে গেলো হাউস অফ রথচাইল্ডের হাতের মুঠোয়।
ইউরোপের তথাকথিত মোনার্কি বা রাজপরিবার গুলো কেবল নামেই স্বাধীন রইলো। অর্থনৈতিক সমস্ত নিয়ন্ত্রণ মোটামুটি নিয়ে নিলো রথচাইল্ড ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলো। এরাই ঠিক করে দিতে লাগলো কে ক্ষমতায় থাকবে আর কে ক্ষমতায় থাকবে না। পলিটিক্স, যুদ্ধ, শান্তি, রাজতন্ত্র, কমিউনিজম সবই আসলে নিয়ন্ত্রিত হতে শুরু করলো যার হাতে টাকা অর্থাৎ রথচাইল্ড ও তাদের এলাইদের হাতে।

ষড়যন্ত্র ও রথচাইল্ড পরিবার
প্রায় ২০০ বছর ধরে এই রথচাইল্ডকে নিয়ে আছে অনেক রহস্য। কারো কাছে এসব স্রেফ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, আবার কারো কাছে বাস্তবতা। বিশেষজ্ঞরা বলেন- ফরাসি বিপ্লব, ওয়াটারলুর যুদ্ধ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, রুশ বিপ্লব, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, এমনকি হিটলারের হলোকাস্ট- এর সব কিছুর পেছনেই ভূমিকা আছে রথচাইল্ড পরিবারের। নিজেদের ব্যবসার স্বার্থেই এসব করেছে তারা। সঙ্গে কাজ করেছে ধর্মীয় অনুভূতিও।

১৯১৯ সালের ২৯ মার্চ বলশেভিক বিপ্লব বিষয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম টাইমস অব লন্ডন এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বলশেভিক বিপ্লবের ব্যাপারে সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপারটি হচ্ছে- এর নেতাদের একটি বিরাট অংশই রুশ নয়। বিপ্লবের মূলে ভূমিকা রাখা ২০ থেকে ৩০ নেতার মধ্যে ইহুদির হার ৭৫ ভাগের কম হবে না। ভ্লাদিমির লেনিন নিজেও ইহুদি।’তবে পরে নাকি রুশদের সঙ্গে আর মিলে থাকা সম্ভব হয়নি রথচাইল্ডের। কারণ বিপ্লবের সময় কথা ছিল, কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না সরকার। পরে সে কথা রাখেনি বলশেভিক সরকার।

ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে রথচাইল্ডের ভূমিকার কথাও বলে থাকেন অনেকে। ইসরায়েলকে যাতে স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয় সেজন্য ৩৩তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হেনরি এস ট্রুম্যানকে ২০ লাখ ডলার দিয়েছিল তারা। নির্বাচনী প্রচারণা তহবিলের নামে দেয়া হয়েছিল ওই অর্থ। পরে যুক্তরাষ্ট্রই ইসরায়েলকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়। চীনের মাও সে তুংয়ের বিপ্লবেও নাকি অর্থ দিয়েছিল রথচাইল্ড!
এ সব তত্ত্বের কোনটা সঠিক, আর কোনটা ভুল- তা যাচাই করা কঠিন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বিশ্বের ধনাঢ্য পরিবারের তালিকায় শীর্ষেই থাকছে রথচাইল্ড। আর সেই সঙ্গে হয়ে আছে রহস্যময়।

রথচাইল্ড পরিবার ও বিশ্ব
পৃথিবীর একমাত্র ট্রিলিয়নিয়ার ফ্যামিলি এই রথচাইল্ড ফ্যামিলি। বিশ্বের ক্ষমতাবান এই পরিবারের সদস্যদের সম্মানার্থে ১৫৩টি পতঙ্গ, ৫৮টি পাখি, ১৮টি স্তন্যপায়ী, ১৫টি উদ্ভিদ ও ২টি সরীসৃপের বৈজ্ঞানিক নামকরণ করা হয়েছে বলে বলা হয়। যেমনঃ প্রজাপতির বৈজ্ঞানিক নাম Ornithoptera Rothschildi। ইসরাইলের বিভিন্ন রাস্তাঘাটের নাম এই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের নামে রাখা।

এমনকি বলা হয় এন্টারটিকা মহাদেশে রথচাইল্ড আইল্যান্ড বলে একটা দ্বীপ ও আছে। বুঝাই যাচ্ছে ২০০ বছর ধরে পুজিবাদী পৃথিবীতে সব থেকে ক্ষমতাধর এই পরিবারটি। কিন্তু আমরা অনেকেই তাদের চিনি না। তার কারণ হল তারা এতটা বিত্তবান পরিবার হয়েও পর্দার অন্তরালে থেকে করে গেছে অনেক ষড়যন্ত্র। এমনি এই প্রভাবশালী পরিবারের নিয়মকানুন খুব কড়াকড়ি। বাইরের পৃথিবীর কেউ জানে না তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ কত।

সেই ১৭৬০ থেকে এই পরিবারটি কঠোর গোপনীয়তা ও নিয়মকানুনের কারণে আজও টিকে আছে প্রভাবের সাথে। প্রতিষ্ঠাতা মায়র রথচাইল্ড মারা যাওয়ার আগে উইলে স্পষ্ট উল্ল্যেখ করে গেছেন যে, তাদের ব্যবসা কোনোভাবেই পরিবারের বাইরে যাবে না ও পরিবারের বড় ছেলেই হবে ব্যবসার প্রধান। এমনকি বংশের বিশুদ্ধতা রক্ষা করতে তাদের পরিবারের কোন সদস্যের বিয়ে পরিবারের বাইরে দেয় না বলে শোনা যায়। বর্তমানে পরিবারটি ঠিক কি পরিমাণ সম্পদের মালিক তা কেউ জানে না। আর পরিবারের সদস্যদের নামে সরাসরি ব্যবসার পরিমাণ কম। তারা বিভিন্ন কোম্পানীর নামে সারা বিশ্বে ব্যবসা করে যাচ্ছে।

ব্যাংকিং ব্যবসা, তেলে ব্যবসা, টুরিস্ট বিজনেস সহ আরো অনেক ব্যবসার মালিক তারা। বলা হয় অনেক রাষ্ট্রীর ব্যাংক ও তাদের কাছে জিম্মি। তাদের পরিবারের ক্ষমতা এতটাই যে, বলা হয় কখনো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধলে এই পরিবারের ইন্ধনে বাধবে। এবং এর থেকে ফায়দা লুটবে রথচাইল্ড পরিবার।
এইসব কিছুর কতটা সত্য কথা মিথ্যা কেউ সঠিক তা বলতে পারবে না। কারো কারো মতে পুরোটাই সত্য , কারো মতে আংশিক আবার কেউ কেউ এটা বিশ্বাস ই করতে চায় না। কিন্তু এতটুকু বলা যায় এই পরিবারটি আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের মত নয়।

সুত্রঃ উইকিপিডিয়া, বিবিসি, ইনভেস্টোপিডিয়া,ডেইলি বাংলাদেশ

লেখকঃ কলামিস্ট ও শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

আরও পড়ুন