Ads

মুসলিম সমাজে মসজিদ, মকতব ও মাদ্রাসা বনাম বিশ্ববিদ্যালয়ঃ আমাদের করনীয়

তাওহিদ নোমান

দেশে ও বিদেশে আমাদের বাংলাদেশীদের ৫ লক্ষের উপর মসজিদ, মুসল্লা ও দাওয়াহ মারকাজ আছে। এগুলোর মক্তবে আরবী ও কোরআন হাফেজ শিক্ষার্থীদের বাইরেও দেশে ও বিদেশে সরকারী ও বেসরকারী আমাদের বাংলাদেশীদের ৫০ হাজার মাদ্রাসা আছে ইসলামী শিক্ষার জন্য মানে আলেম, মুফতি, ফকিহ, মুহাদদিস, মুফাসসির বা ইসলামী স্কলার তৈরির জন্য।

আমাদের বাংলাদেশে ও প্রবাসে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, আলিয়া মাদ্রাসা, কওমী মাদ্রাসার, পাবলিক ও ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসের পাঠ্যপুস্তক বাদ দিলে মাদ্রাসা শিক্ষকদের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের লেখা বিশ্বমানের লেখা বই পাই না। বেশির ভাগ পাঠ্যপুস্তকগুলোর আন্তর্জাতিক মানে দুর্বল।

বিগত ৫০ বছরে দেশে ও বিদেশে ১৭ কোটি বাংলাদেশী মুসলিমদের মধ্য থেকে ক’জন ক’খানা তাফসির বা ইসলামের উপর মৌলিক বই লিখেছেন? দুই একজন বা যারা ইসলামী অনুষদ বা মাদ্রাসা শিক্ষকদের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মধ্যে লিখেছেন আমরা ওনাদের সুন্নি ৪ মাযহার ও লা মাযহাব আহলে হাদিস বিভক্তির কারণে পড়ি না। জনবহুল এ মুসলিম দেশটিতে দ্বীনী মাদ্রাসায় যে তাফসির গ্রন্থগুলো পড়া হয় তার প্রায় অধিকাংশই অন্যান্য ভাষা থেকে অনুদিত।

দর্শন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সমাজ বিজ্ঞান, ইতিহাস বা জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্য শাখাতেই বা ক’জন ক’খানা গ্রন্থ রচনা করেছেন আর বাঙালী মুসলিমের বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যর্থতার বড় দলিল হলো এগুলো।

দেশে ও বিদেশে মুসল্লা, মসজিদ, মারকাজ ও মাদ্রাসা করার আগে

১। আমাদের সৎ, ধর্ম পালনকারী, হক্কানী স্কলার উলেমা, হাফেজ ও দুনিয়ার শিক্ষিত ও অভিজ্ঞ মুসল্লী নিয়ে সংবিধান ও কমিটি করতে হবে।

২। মুসল্লা, মসজিদ, মারকাজ ও মাদ্রাসার জায়গা নিতে হবে মুসলিম বসতি, বাসা বাড়ী, অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা, কারখানার পাশে বা মাঝখানে কিন্তু যদি ভুল করে ওগুলো অমুসলিমদের ও দুনিয়াবীদের মাঝখানে করা হয় তবে অমুসলিমদের দারা বন্ধ হবার আশঙ্কা ১০০%।
আমাদের কমবয়সী উলেমারা কম বেশি বয়স ও অভিজ্ঞতার কারনে ভুল করেন ও মানুষ শয়তানের চক্রান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

দেশে ও বিদেশে সরকারী ও বেসরকারী আজ আমাদের মাল্টিমিলিয়ন বা হাজার হাজার কোটি টাকার সুন্দর দালানের উপর বানানো মসজিদগুলি ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার পর খালি পড়ে থাকে অথচ ছুটির দিন ছাড়া অনেক বাড়তি আমল: ইসলামী স্কুল, কুরআন ও হাদিস শিক্ষা, দাওয়াত এর কাজ, এলাকার নবাগতদের জন্য তথ্য পরামর্শ ও খেদমতের কাজ, ফুড বেন্ক, চাকুরির সংস্থানে রেফারেল, মনিটরিং, দিকনির্দেশনা, পারিবারিক সহিংসতা ও বৈবাহিক পরামর্শ, বাচ্চাদের ইনডোর খেলাধুলা, স্কুল একাডেমিক ও ধর্মীয় বিষয়ে টিউটরিং, বিভিন্ন সমাজ সেবা ও শিক্ষা সেবা ধর্ম প্রচারের কাজগুলো মসজিদে নবুবীর মত হতে পারে।

কাজেই বাংবাংলাদেশীদের দেশের ও প্রবাসের ৫ লক্ষ+ মসজিদ ও মকতব, ৫০ হাজার+ ইসলামী প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার মাদ্রাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সুষ্ঠ পরিচালনায় মুসলিমপ্রধান জাতীয় সরকারী ও বেসরকারী উলেমাদের পরিষদগুলোকে একে অপরের প্রতি ঘৃনা নয় শ্রদ্ধা ও ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব সহকারে কাজ করলে আমরা দেশ ও বিদেশের অসংখ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো: মসজিদ, মারকাজ, মুসল্লা, মাদ্রাসা ও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষের ব্যবহার আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের বংশধরদের প্রকৃত আল্লাহভীরু, পরহেজগার, সৎ চরিত্রের মানুষ ও নামাজী মুসলিম করে নির্ভেজাল দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।
মহান আল্লাহ দয়া করে আমাদের সবাইকে হৃদয় জুড়ে, ক্ষমা করে, দেশ ও বিদেশের মাটিতে উন্নতি দিন আমীন।

লেখকঃ কানাডা প্রবাসী, গবেষক, শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী ও আজীবন দ্বীনের ধর্ম প্রচারকারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন কর্মী ও শিক্ষার্থী (www.iou.edu.gm)

আরও পড়ুন