।। আশরাফ আল দীন ।।
এই বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালে ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে উদযাপন করা উচিত নয়। এর দুটি প্রধান কারণ আছে, আমি নীচে ব্যাখ্যা করছি।
প্রথমতঃ দেশব্যাপী গণবিপ্লব এবং স্বৈরাচারী শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করার অব্যবহিত পরে, যখন দেশটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং অনিশ্চিত কঠিন সময় পার করছে তখন কোন “প্রশ্নবোধক উদযাপন” হতে পারে না। আমি কেন ‘প্রশ্নবোধক উদযাপন’ বলছি তা পরে ব্যাখ্যা করছি।
এক মাসেরও কম সময়ে এক হাজারের বেশী বেসামরিক ছাত্র-জনতাকে হত্যা এবং হাজার হাজার মানুষকে আহত/ পঙ্গু করার দায়ে অভিযুক্ত অবৈধ প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সরকারকে সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলায় ফেলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান ৫ই আগস্ট ২০২৪ তারিখে। তারপর ব্যাপক বিশৃঙ্খল অবস্থা! রাস্তায় পুলিশ নেই, থানা বন্ধ, ট্রেন চলাচল করছে না, কার্যত সরকার কাজ করছে না এবং বিপ্লবের পরের অত্যন্ত তরল অবস্থা বিরাজমান। এসময় সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে এবং সরকারের স্থিতিশীলতার জন্য অপেক্ষা করতে হবে, সর্বত্র মুটামুটি স্বাভাবিকতা ফিরে আসা পর্যন্ত। তাই অন্তত এ বছর কোনোভাবেই ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উদযাপনের প্রশ্নই ওঠে না।
অধিকন্তু, একটি পতিত স্বৈরাচারী শাসনের অনুসারীরা, যারা দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে দেশ লুণ্ঠনের অভিযোগে অভিযুক্ত এবং আজকের দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী, তাদের কোন অধিকার নেই শোক দিবস পালনের আবদার করার। যারা খুনী ও লুটেরা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে আগে তাদের বিচার হতে হবে। তারপর বিবেচিত হতে পারে তাদের পছন্দের একটি দিন উদযাপনের বিষয়। খুনীর প্রাথমিক অধিকার হলো সুবিচারের মাধ্যমে শাস্তি প্রাপ্ত হওয়া, তারপর অন্য নাগরিক অধিকারের প্রসঙ্গ।
আরও পড়ুন-
সত্য কখনও কখনও কল্পনার চেয়েও ভয়ঙ্কর এবং আকর্ষণীয় ।। আশরাফ আল দীন
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও অবৈধ প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে অরাজকতা সৃষ্টিকারী ও খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে এবং আওয়ামী লীগ দেশে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী একটি সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত ও অভিযুক্ত। তাদের রাজনৈতিক আচরণের উপর নির্ভর করে পরবর্তী বছরগুলিতে দলীয়ভাবে ১৫ই আগস্ট উদযাপনের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। কারণ, এই দিবসটিকে জাতীয়ভাবে পালন করাটা হবে তৎকালীন গণমানুষের আবেগ-অনুভুতির অবমূল্যায়ন ও তাদের রাজনৈতিক চেতনার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা। কারণ, ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ তারিখে তৎকালীন বাংলাদেশের মানুষ একজন কঠোর একনায়কের স্বৈরাচার থেকে মূক্তি লাভ করে আনন্দিত হয়েছিল এবং মুজিবের জানাজায় যোগ দেয়ার জন্য লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি!
দ্বিতীয় বিষয় হলোঃ ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উদযাপন সম্পূর্ণ প্রশ্নবিদ্ধ একট্ বিষয়। কারণ, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে তার পুরো পরিবারসহ হত্যা করা হলে এদেশের এক শতাংশ মানুষও দুঃখ প্রকাশ করেনি বা শোক প্রকাশ করেনি। যদিও ঘটনাটি ছিল খুবই দুঃখজনক। তৎকালীন দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এটি ঘটেছে। প্রকৃতপক্ষে, এককালের জন-নন্দিত শেখ মুজিব শাসক হিসেবে ভীষণভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং দূর্নীতি ও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। যে কারণে দেশে ১৯৭৪ সালে দূর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং লক্ষ লক্ষ বনিআদম অনাহারে মৃত্যু বরণ করে। তিনি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন এবং দেশ শাসনের হাতিয়ার হিসেবে নিপীড়নকে বেছে নেওয়াসহ নানা কারণে জনগণের প্রচন্ড ঘৃণা অর্জন করেছিলেন। এভাবে তিনি নিকৃষ্ট ধরনের একনায়কে পরিণত হন এবং ১৫ই আগস্ট জনগণের ক্ষোভের ফল ভোগ করেন।
পরবর্তীতে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে পিতার মৃত্যুকে মহিমান্বিত করার লক্ষ্যে ১৫ আগস্টকে ‘জাতীয় শোক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। এবং প্রচুর সরকারী অর্থ ব্যয়ে সমগ্র দেশজুড়ে শেখ মুজিবের অসংখ্য মূর্তি, ম্যুরাল ও মুজিব কর্ণার গড়ে তোলেন। কিন্তু বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এই বাড়াবাড়ি ও অপচয় কখনোই পছন্দ করেনি। এটা ছিল একজন ব্যক্তির (আজকের ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা) এবং তার দলের কয়েকজন অনুসারীর ইচ্ছা মাত্র।সেজন্য আমরা এটাকে প্রশ্নবোধক উদযাপনের দিন হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি।
আরও পড়ুন-
তাই এই দিনটি পালনের কোনো মানে হয় না কারণ এদেশের বৃহত্তর জনগণ তৎকালে এবং আজও শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুকে স্মরণ করে কোনো শোক পালন করা উচিত বলে মনে করে না।
পরিশেষে বলা যায়, এটা সুবিদিত যে কোন বিপ্লবের পরই প্রতিবিপ্লব ঘটার আশংকা করা হয়। সেজন্য বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী সরকারের অনুগতদের এবং ঘাপটি মেরে থাকা বর্ণচোরা লোকদের আগ্রহে ১৫ আগস্ট উদযাপনের আড়ালে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর কোন প্রকার সুযোগ করে দেওয়া উচিত নয়। এই বার্তাটি ব্যাপকভাবে প্রচার করা উচিত এবং যে কোন লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে দেশের আইনের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
যাই হোক, আমরা জনগণের মূল্যবান বিপ্লবকে ব্যর্থ করে আবার আমাদের স্বাধীনতা হারানোর ঝুঁকি নিতে পারি না।
লেখকঃ কবি, কলাম লেখক এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তা
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে । আসুন ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।