।। ড. মো. নূরুল আমিন ।।
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে ক্ষমতায় এসে পতিত স্বৈরাচার ও এই শতাব্দির নিকৃষ্ট ফেরাউন শেখ হাসিনা জাতির পিতার পরিবার সদস্যদের নিরাপত্তা আইন করে গত প্রায় ষোল বছরে তিনি নিজে এবং তার বোন রেহানা ও তাদের সন্তানরা কী কী রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিয়েছেন এবং আর্থিক মূল্য কত? তিনি কি ঐ আইনের বলে এসএসএফ নিরাপত্তা নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন? প্রশ্নটি তুলছি এজন্য যে তার পতন ও পলায়নের প্রায় তিন সপ্তাহ পর সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবীকে ঐ আইনটি বাতিলের জন্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন দায়ের করতে দেখে। পিটিশনে আইনটি বাতিল ও ইতোমধ্যে গৃহীত সুবিধাদিবাবদ ব্যয়িত অর্থ তার বা তাদের কাছ থেকে আদায়ের নির্দেশ প্রদানের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
বলাবাহুল্য এই আইন বলে তিনি ও তার বোন রেহানা যথাক্রমে ২২ একর জমির উপর নির্মিত গণভবন এবং গুলশানের অভিজাত এলাকায় দেড় বিঘা জমির উপর নির্মিত একটি বিলাস বহুল বাড়ি দখলে নিয়েছিলেন। পত্র পত্রিকায় রিপোর্ট অনুযায়ী এই সরকারি বাড়িগুলোর প্রতেক্যটির বিনিময় মূল্য তথা প্রতিকী মূল্য ছিল ১০০১ টাকা। শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার মালিকানাধীন সুধা সদন ছাড়াও পীরগঞ্জে বাড়ি ও অনেক ভূসম্পত্তি রয়েছে। তার পৈত্রিক বাড়ি গোপালগঞ্জে তার পিতা শেখ মুজিবের বাড়ি ও সম্পত্তি ছাড়াও ধানমন্ডি ৩২ নং এর বিশাল বাড়ি ছিল। তার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত এবং একাধিক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। এই মালিকানায় শেখ হাসিনারও অংশীদারিত্ব রয়েছে। আবার শেখ রেহেনার স্বামী তিনি স্বয়ং এবং সন্তানরা সকলেই যুক্তরাজ্যের নাগরিক। ক্রয়সূত্রে বাড়ি গাড়ির মালিক এবং ঐ দেশের রাজনীতিতে সক্রিয়। তাদের কারুরই আবাসন বা SSF (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স ) নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই। হাসিনার মেয়ে পুতুল ও তার স্বামী দেশে বিদেশে অগাধ সম্পত্তির মালিক ছিলেন। কিন্তু তথাপি লোভ তাদের এতই পাগল করে তুলেছিল যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি আইন করে আত্মসাৎ করেছেন। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী তাদের বাড়ি ঘরের দেখা শোনা ও নিরাপত্তার সাথে জড়িত জনবল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ প্রতিমাসে সরকারকে ব্যয় করতে হতো অন্যূন আট কোটি টাকা। তার পতনোত্তর গণভবনকে সারা দুনিয়াবাসী দেখেছে। ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা আইন করে জাতির পিতার পরিবার সদস্যদের নিরাপত্তার নামে একই ধরনের আইন করে নিজে গণভবন ও বোনকে ধানমণ্ডিতে অপর একটি ভবনের মালিক বানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার SSF নিরাপত্তা ছিল, এই আইন করে নিজে ডাবল নিরাপত্তা এবং পুত্র-কন্যা সহ বোন-ভাগনে ভাগনীদের জন্যও এই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলেন।
২০০১ সালে নির্বাচনের ৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর তারা এই আইনটি বাতিল করে তার প্রাপ্ত সকল সুবিধা বন্ধ করে দেন। অনেকের ধারণা এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২০০৯ তিনি পুনরায় ক্ষমতায় এসে বেগম জিয়াকে অত্যন্ত অপমানকরভাবে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছিলেন। আমার যদ্দুর মনে পড়ে ২০০১ সালে জোট সরকার তথাকথিত জাতির পিতার পরিবার সদস্যদের নিরাপত্তা আইনটি নির্বাহী আদেশে বাতিল করেছিলেন। এবার এখনো বাতিল হয়নি এবং আইনটিকে বেআইনী ঘোষণার জন্য রীট দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি এখন আদালতের এখতিয়ারাধীন; সরকার এখানে বিবাদী, সরকারের এটর্নি জেনারেল ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আদালতে জবাব দিবেন। মহামান্য আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।
এখন জাতির পিতার প্রশ্নে আসি শেখ মুজিবের দুটি উপাধি, একটি বঙ্গবন্ধু আরেকটি জাতির পিতা, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে বঙ্গবন্ধু খেতাবটিকে তারা আরো সম্প্রসারিত করে একটি বিদেশী প্রচার মাধ্যমের কিছু সাংবাদিককে পয়সা কড়ি দিয়ে জন জরিপের অভিনয় করিয়ে তাকে সর্বকালের সবশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী খেতাবে ভূষিত করেন। তখন পশ্চিম বাংলা আসাম উড়িশ্যা ও বিহারের বাঙ্গালীরা প্রশ্ন করেছিলেন তা হলে আমরা বাঙ্গালীরা কোথায়? বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ আমাদের বরেণ্য কবি সাহিত্যিক রাজনীতিবিদ দেশ বন্ধু চিত্তরঞ্জন, স্বাধীনতা সংগ্রামী আজাদ ফৌজ নেতা সুভাস বসু এরা কোথায়? শেখ হতে পারেন খণ্ডিত বাংলার, অখন্ড বাংলার নয়। আসলে খণ্ডিত বাংলায় কি শেখ মুজিব অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা হিসাবে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?
আরও পড়ুন-
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পেছনে বিশেষ করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে তার অধিকার আদায়ে সংগঠিত করার ব্যাপারে তার একটি অনন্য ভূমিকা ছিল। আল্লাহ তাকে একটি দরাজ কণ্ঠ দিয়েছিলেন। তিনি জ্বালাময়ী বকতৃতা দিতে পারতেন। তার সম্পর্কে সমসাময়িক অন্যান্য রাজনীতিক ও বিশ্লেষকদের মূল্যায়ন হচ্ছে তিনি বক্তা ছিলেন ঠিকই, তবে Orator নয় Agitator। একটা দল বা গ্রুপকে আরেকটা দল বা গ্রুপের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে তিনি অত্যন্ত পারঙ্গম ছিলেন। তার মধ্যে Emotion বা আবেগ ছিল বেশি, Intellect বা বুদ্ধিমত্তা ছিল কম, একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য যা খুবই প্রয়োজন। তবে একজন রাজনৈতিক নেতার বৈশিষ্ট্যটি ঠিক উল্টো, বুদ্ধিমত্তা বেশিও আগে, emotion কমও পরে। তার লেখাপড়া ও পাাণ্ডিত্যের মাত্রাও সীমিত ছিল যার জন্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আগে সংগঠক হিসেবে তার যত সাফল্য ছিল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর শাসক হিসেবে তার ব্যর্থতা ছিল অনেক বেশি। ফলে তার নীতি আদর্শ ভারতপ্রীতি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়সমূহের ব্যাপারে গৃহীত সিদ্ধান্তাবলী জনমানসকে হতাশ করে। দল ও সরকারকে তিনি এক করে ফেলেন। দলীয় নেতাদের চুরি-চামারি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানুষের দুর্ভোগ তার জনপ্রিয়তাকে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসে। পতন ঠেকানোর জন্য তিনি নিকৃষ্ট স্বৈরশাসকে পরিণত হন। এককালের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রবক্তা বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নেতানেত্রীদের দমন করার জন্য রক্ষীবাহিনী গঠন করে তাদের দিয়ে হাজার হাজার বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হত্যা করান, দেশের সমস্ত দলকে নিষিদ্ধ করে একটি মাত্র দল বাকশাল কায়েম করেন এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বাকশালে যোগদান বাধ্যতামূলক করে দেন। দেশে ভিন্নমতাবলম্বীদের অস্তিত্বকে তিনি অস্বীকার করেন, দুটি দলীয় মালিকানায় ও দুটি সরকারি মালিকানায় রেখে বাকি দৈনিক পত্রিকাগুলো বন্ধ করে দেন।
ভারতের সাথে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের উপর কুঠারাঘাত করেন। তিনি নিজেকে আজীবন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন এবং নির্বাচন স্থগিত করে মেয়াদোত্তীর্ণ সংসদের মেয়াদ দু’বছর বাড়িয়ে দেন। এর আগে তিনি ভারতীয় নির্দেশনায় ভারতীয় সংবিধানের মূলনীতি ও মৌল কাঠামোর আদলে বাংলাদেশের সংবিধান তৈরি করেন। পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান প্রদত্ত Legal framework-এর ভিত্তিতে ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তানের জন্য সংবিধান তৈরির ম্যান্ডেট নিয়ে ১৯৭০ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশের আইন পরিষদের সদস্যে রূপান্তর করেন। তারা এই পরিষদ এমনকি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সংবিধান অনুমোদন করেন। এই সংবিধানে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর দ্বীন হিসেবে ইসলাম তার মর্যাদাচ্যুত হয়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ইসলামী জীবনব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে নির্বাসিত হয়। সরকারি অনুষ্ঠানসমূহে প্রথমে কুরআন তিলাওয়াত নিষিদ্ধ হয়, পরে সীমিত পরিসরে চালু হলেও হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধদের ধর্মগ্রন্থ পাঠের পাশাপাশি কুরআন তিলাওয়াতের কিছুটা রসম চালু করা হয়। এটা আল্লাহর নাজিল করা কিতাবের প্রকাশ্য অবমাননা। আলেম-ওলামা টুপি-দাড়িধারী নামাযী ব্যক্তি মাত্রই রাজাকার ও দেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হন। যুদ্ধ করেছে দেশের মানুষ, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাতে নিগৃহীত ও নিহত হয়েছে সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা, শেখ মুজিবের দল আওয়ামী লীগের কোনো নেতা মুক্তিযুুদ্ধ করেছেন এমন নজির নেই। ১২ জন সেক্টর কমান্ডারের মধ্যে এই দলের কোনো নেতা নেই। এই দলটির এমএনএ, এমপিএ এবং উচ্চ ও মধ্যম শ্রেণির দলীয় ও ছাত্রনেতারা পাকিস্তান আর্মির ভয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়ে অধিকাংশই কোলকাতা ও অন্যান্য শহরের বিলাসবহুল হোটেলে মদ ও নারী নিয়ে মত্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের এই অপকর্মকে হাইলাইট করে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র শিল্পী জহির রায়হান একটি প্রামান্য চিত্র তৈরি করে তাকে সূর্যের আলো দেখাতে পারেননি। তাকে শেখ মুজিব সরকার গুম করে দেন, তার লাশও পাওয়া যায়নি।
ভারত ফেরত মুষ্টিমেয় আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশ ভূখন্ডে থাকা কোটি কোটি নিগৃহীত মানুষকে মুহূর্তে রাজাকার বানিয়ে দেন। লক্ষাধিক লোককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করেন। বরেণ্য রাজনৈতিক নেতা ও শেখ মুজিবের প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তিদের জন্মগত নাগরিকত্ব কেড়ে নেন। বংশ পরম্পরায় এই দেশের বাসিন্দা বহু রাজনৈতিক নেতা এবং ব্যবসায়ী ও অবাঙালির সম্পত্তি বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীরা দখল করে নেন। স্বাধীনতার অব্যাবহিত পর সারা দুনিয়া থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার ত্রাণসামগ্রীর লুটপাট তো ছিলই। তার জুলুম-নির্যাতন, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুঃশাসনের মাত্রা ও ক্ষমতালিপ্সা এতই বেড়ে গিয়েছিল যে, দেশের মানুষ তার অপসারণের জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছিল। রাষ্ট্রীয় উৎসাহে ব্যবসায়ীদের মুনাফাখোরী মওজুতদারি, কালোবাজারি, ধান-চালসহ খাদ্যসামগ্রী, ওষুধপত্র এমনকি সীসার তৈরি দুই-চার ও দশ পয়সার মুদ্রা এবং তামার তৈরি পাঁচ পয়সার মুদ্রাও ভারতে পাচার হয়ে যেতো। ফলে ১৯৭৪ সালে দেশ স্মরণাতীতকালের বৃহত্তম দুর্ভিক্ষে নিপতিত হয়। মানুষকে ক্ষুধার তাড়নায় কাক কুকুরের ন্যায় ডাস্টবিনের আবর্জনা থেকে খাবার কুড়াতে এবং অন্যের বমি খেয়ে ক্ষুধা নিবৃত্তির চেষ্টা করতে দেখা গেছে। অনেকে লাশ দাফন করার জন্য কাফনের কাপড়ও কিনতে পারেনি, আবার বাসন্তিদের মত মেয়েদের কলা পাতা দিয়ে লজ্জা নিবারণ করতে দেখা গেছে। এই এক ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী ও আওয়ামী লীগ কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া ‘জাতির পিতার’ শাসনকালের ইতিহাস।
আরও পড়ুন-
এই ইতিহাস চর্চা নিষিদ্ধ ছিল, এই প্রজন্মকে এটা জানতে দেয়া হয়নি। আসলে শুধু এই ইতিহাস নয়, এই ভূখন্ডের মানুষের ইতিহাস ঐতিহ্য, সংস্কৃতি বিশ্বাস এবং ঈমান আকিদাকেও তারা আমাদের অন্তর থেকে মুছে দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। একদিকে মানুষ অন্ন বস্ত্র শিক্ষা চিকিৎসার ন্যায় মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমসিম খাচ্ছে অন্যদিকে আওয়ামী সরকার তাদের পিতার জন্মশত বার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ পালনের পিছনে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ অপচয় করেছে। কিছু বশংবদ লেখক সাংবাদিককে দিয়ে পিতা কন্যার নামে অসংখ্য বই পুস্তক রচনা করিয়ে সরকারি অর্থের অপচয় করিয়েছে।
বলতে ভুলে গেছি যে, স্বয়ং শেখ মুজিব এবং তার কন্যা শেখ হাসিনা উভয়কেই ভারত প্রেম ও ভারত নির্ভরতা এতই অন্ধ করেছিল যে, তারা শুধু বাংলাদেশের সংবিধান ভারতের নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করেনি, আমাদের জাতীয় সংগীতও একটি ভারতীয় সঙ্গীত, ভারতের একজন কবি যিনি ভারতের জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেছেন তারই রচিত। আমাদের জাতীয় আদর্শের দৃষ্টিকোণ থেকে শিরকময় একটি সঙ্গীত। আধিপত্যবাদের এই প্রতীকগুলো অবিলম্বে পরিবর্তন করা বাঞ্ছনীয়। আমি আমার মূল আলোচনা থেকে কিছুটা বিচ্যুত হয়ে পড়েছি বলে মনে হয়। আমি যা বলতে চাচ্ছি সেটা হচ্ছে শেখ মুজিবের শাসনকাল আর তার কন্যা শেখ হাসিনার শাসনকালের মধ্যে তফাৎ খুব কম। উভয়ের রক্ত এক, তাদের শাসন শোষণ নির্যাতন, গুম, খুন ও স্বৈরতান্ত্রিক শক্তি প্রয়োগের ধরন প্রকৃতিও প্রায় এক। তবে যুগের পরিবর্তন অথবা ভারতের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা বা অন্য যে কোন কারণেই হোক পিতার থেকে মেয়ের রেকর্ড অনেক বেশি খারাপ ও ধ্বংসাত্মক এবং নিষ্ঠুর। ফলে শেখ মুজিবের পতনে সারাদেশ উল্লসিত হয়েছে, আল্লাহর উপর আস্থা হারা অনেক মানুষ আল্লাহর উপর পুনরায় আস্থা এনেছে। কেউ ইন্নালিল্লাহ পড়েনি। শেখ হাসিনার পতনও মানুষকে ঈদের আনন্দ দিয়েছে। কেউ আফসোস করেনি, বরং কোটি কোটি লোক অভিশাপ দিয়েছে।
এ যেন Patriot কবিতার নায়ক, আগমনকালে ফুল ফুল আর ফুল দিয়ে বরণ (It was roses and roses all the way) প্রস্থানকালে জুতার বৃষ্টি!
বঙ্গবন্ধু ও ‘জাতির পিতা’ নিয়ে কথা বলছিলাম। শেখ মুজিবের ডাক নাম ছিল খোকা। এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাকে বঙ্গবন্ধু খেতাব দেননি। একইভাবে তাকে ‘বাঙ্গালী জাতির পিতাও’ বানানো হয়নি। এই অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের সময় ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ডাকসু ও ছাত্রলীগ নেতা তাকে বঙ্গবন্ধু খেতাব দিয়েছিলেন। এর কয়েক বছর পর ১৯৭১ সালের তেসরা মার্চ আ স ম আবদুর রব পল্টন ময়দানে তাকে জাতির পিতা উপাধিতে ভূষিত করেন। এটা বাঙ্গালী জাতি বা বাংলাদেশী জাতির ঐক্যবদ্ধ কোনও সিদ্ধান্ত ছিল না। তথাপি তিনি তাকে প্রদত্ত এই সম্মানের মর্যাদা রক্ষা করতে পারেননি, সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে তিনি নিষ্ঠুর জালেম ও স্বৈরশাসকে পরিণত হয়েছিলেন যার জন্য তার মৃত্যুকে জাতি ফেরআউনের পতন হিসেবে দেখেছে এবং এর ফলে সারাদেশে স্বস্তি নেমে এসেছিল। তার কন্যা কর্তৃক তাকে পুনর্বাসনের সকল প্রচেষ্টাকেও মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তিনি পদত্যাগ করে তার তীর্থভূমি ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। উভয়ের পতন ও পলায়নের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের একটি গণভোটের রায়ের ন্যায় অভিব্যক্তি দেখতে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ এখন ২০২৪ সালে এসে তাদের রাহুমুক্ত হয়ে সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই অর্জনকে সংহত করার ব্যাপারে ২৫ আগস্ট রাতে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত তার ভাষণে যে রোড ম্যাপ, সংস্কার ও জাতির করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তাতে আমরা আমাদের অন্তরের প্রতিধ্বনী দেখতে পাই। দেশকে জঞ্জালমুক্ত করতে হলে সর্বপ্রথম দেশকে শেখ পরিবারমুক্ত করতে হবে। এই পরিবারটি আধিপত্যবাদীদের বাহন হয়ে বার বার এই দেশের মানুষকে যেমন তাদের সামগ্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে তেমনি সম্পদ লুটের সাথেও জড়িত রয়েছে। তারা আমাদের ঐতিহ্য শিক্ষা সংস্কৃতি মূল্যবোধ ও নৈতিক চরিত্র ধ্বংস করে সমাজে ব্যভিচারসহ অনৈতিক কাজেও উৎসাহ দিয়ে মূল্যবোধ ধ্বংসের জন্য দায়ী। এ প্রেক্ষিতে সারাদেশে শেখ পরিবারের নামে প্রতিষ্ঠিত সকল প্রতিষ্ঠান, সকল মূর্তিসহ ৩২ নম্বরের বাড়িটিও নিশ্চিহ্ন করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করে একটি তলা যাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ ও বাকী তলাসমূহে এপার্টমেন্ট তৈরি করে শহীদ পরিবারগুলোকে বরাদ্দ করা দরকার বলে আমি মনে করি। এটা করা না হলে ভারতীয় সহায়তায় বার বার তারা ফিরে আসবে কখনো বন্যার হুমকি নিয়ে, কখনো আনসার বিদ্রোহের চ্যালেঞ্জ আবার কখনো পার্বত্য চট্টগ্রামে খৃস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার হুমকি নিয়ে। সরকারকে এ ব্যাপারে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। জাতীয় জীবনের প্রতিটি রন্ধ্রে তারা লুকিয়ে আছে এদের বিষ দাঁত না ভাঙলে বিপ্লব সফল হবে না।
লেখকঃ প্রাবন্ধিক , গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব এবং সিনিয়র সহকারী সম্পাদক, দৈনিক সংগ্রাম
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে । আসুন ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।