Ads

ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের ভূমিকা!

।। প্রফেসর ড মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন।।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় চলমান ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা বিভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাদের কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ভূমিকা নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

১. বন্যা ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ

দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যার কারণে অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই সময় সরাসরি ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে। তারা স্থানীয় প্রশাসন ও এনজিওদের সঙ্গে সমন্বয় করে বন্যাক্রান্তদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী যেমন খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং পোশাক বিতরণ করতে পারে। শিক্ষকরা এই ত্রাণ কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিতে পারে এবং তহবিল সংগ্রহে সহায়তা করতে পারে।

২. জরুরি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা

বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা শিক্ষকগণের তত্ত্বাবধানে বন্যাক্রান্ত এলাকায় অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে জরুরি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে পারে। বন্যার ফলে দেখা দেওয়া পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি, সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা স্থানীয় জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে শিক্ষিত করতে পারে।

৩. মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা

বন্যা পরবর্তী সময়ে মানসিক আঘাত ও চাপ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞরা যেমন শিক্ষকরা মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা প্রদান করতে পারে। ছাত্ররা প্রশিক্ষণ নিয়ে বন্যাদুর্গতদের মানসিক চাপ কমাতে কাউন্সেলিং সেশন পরিচালনা করতে পারে, যা বিশেষত শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

৪. পুনর্বাসন কার্যক্রম

বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুনর্বাসন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে। তারা বাড়ি নির্মাণ, স্কুল পুনরুদ্ধার, এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত সহায়তা দিতে পারে। এছাড়া, পুনর্বাসিত মানুষদের পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় তারা সহায়তা করতে পারে।

৫. শিক্ষামূলক কার্যক্রম

বন্যার কারণে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে পারে এবং বন্যাক্রান্ত শিশুদের জন্য অস্থায়ী শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করতে পারে। এতে বন্যাদুর্গত শিশুদের শিক্ষায় ক্ষতি কিছুটা হলেও পূরণ হবে।

৬. তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণা

বন্যা মোকাবিলার জন্য সঠিক তথ্যের প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা শিক্ষকদে সহায়তায় বন্যা পরবর্তী তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণায় অংশগ্রহণ করতে পারে। তারা বন্যার কারণ, প্রভাব, এবং পুনর্বাসনের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে গবেষণা করতে পারে। এই গবেষণার ফলাফল সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার কাছে পৌঁছে দিয়ে তারা ভবিষ্যতে বন্যা মোকাবিলার জন্য কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করতে পারে।

আরও পড়ুন-

বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানে নিতে ভিসির পরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত?

৭. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরা বন্যা মোকাবিলায় সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে। তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টার ব্যবহার করে বন্যার পূর্বাভাস, সতর্কতা, এবং বন্যার সময় ও পরবর্তী করণীয় বিষয় নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে পারে।

৮. দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন পরিকল্পনা

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা বন্যার প্রভাব বিশ্লেষণ করে দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন পরিকল্পনা প্রণয়নে কাজ করতে পারে। তারা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাবনা দিতে পারে, যা ভবিষ্যতে এমন দুর্যোগের ক্ষতি কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে।

এইভাবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা একত্রে কাজ করে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলায় এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের জনগণকে সহায়তা করতে পারবে। মহান আল্লাহ দয়া আমাদেরকে ভয়াবহ বন্যা থেকে রক্ষা করুন। আমিন!

লেখকঃ প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপকফিশারীজ বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি  । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন