Ads

যৌনকর্মীদের “শ্রমিক” হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের সুপারিশ কীভাবে করে ?!!

।। নাজমুন নাহার নীলু ।।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ৪৩৩টি সুপারিশ দিয়েছেন। সুপারিশ পড়ে মনে হয়েছে তাদের দীর্ঘদিনের লালিত  স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য প্রস্তুত। শুধু অপেক্ষা। চমকপ্রদ! বিদেশী ভাষার বাংলা অনুবাদ আর‌ও চমক!! এ কমিশন এদেশের ভাষা, জনগণ,কৃষ্টি কালচার, ঐতিহ্যকে মূল্যায়ন করেছেন বলে মনে হয়নি। শুধু একচোখা নীতি অবলম্বন করেছেন। এদেশের নারীদেরকে  মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ভেবেছেন এই তো সুযোগ!বোকার স্বর্গে বাস করছেন। ভাবতেই পারবেন না নারীরা কি করতে পারে? শুধু মুসলিম নারী নয়, হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ সহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী নারী যৌন কাজকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিবেন না।কেননা পৃথিবীর সকল ধর্মে এটি ঘৃনিত ।আর পেশা হিসেবে জঘন্য অপরাধ? তাহলে আপনারা কিভাবে প্রস্তাব দিলেন। ৯০% মুসলিম দেশে অর্ধেক নারী তাদের মতামত নিয়েছিলেন? ধর্ম সবসময় পবিত্র জীবনের দিকে আহ্বান করে।আর আপনাদের দৃষ্টিতে তা পড়ল না ভাবা যায়! সুপারিশে যত অসঙ্গতি !

সবচেয়ে মারাত্মক  অসঙ্গতি হচ্ছে ‘শ্রম আইনে যৌনকর্মীদের স্বীকৃতি প্রদান’ (১২.৩.১.১.জ) । সবাই চিন্তিত এই বিষয়টি নিয়ে। এ কেমন সুপারিশ!!!

সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদ বদল চেয়ে তাদের দাবি, ‘গণিকাবৃত্তির বিষয়টি বাদ দিতে হবে। কারণ জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতার নামে যৌনকর্মীদের পেশাকে নিরোধ করা মানবাধিকার লঙ্ঘন’

তারও আরও দাবী করে,

“যৌন পেশাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করা এবং শ্রম আইনে একে স্বীকৃতি দেওয়া ।”

 

এতো সমাজ ও সভ্যতা ধ্বংসের সুপারিশ ! সংস্কার কমিশনে যারা আছেন তাদের কাছে প্রশ্ন, আপনি কি নিজে কিংবা আপনার পরিবারের কাউকে এটাকে জীবিকার মাধ্যম হিসেবে গ্রহন করবেন? কিংবা মেনে নিবেন? এই কাজ অপরাধ বলে চিহ্নিত কেন করা যাবে না? বাধ্য করে নারীকে  ইচ্ছের বিরুদ্ধে এ কাজে নামিয়ে বলবেন অপরাধ না স্বীকৃতি চাই এ কেমন দাবী? তাহলে সমাজে ব্যভিচার বলে কোন সংজ্ঞা থাকে কি? অন্যায় কাজকে স্বীকৃতি দিলে সমাজে ন্যায় বলে থাকবে কি? একদিন এমন হবে চোর,ডাকাত বলবে আমি বাধ্য হয়ে এ পথ ধরেছি বেঁচে থাকার তাগিদে আমাকেও স্বীকৃতি দিতে হবে। এভাবে পাপী সব পাপের স্বীকৃতি চাইতে থাকবে। পাপকে অবশ্যই ঘৃণা করতে হবে। পাপীকে পাপ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে বৈধ পন্থায়। তা কখন‌ও পাপকে স্বীকৃতি দিয়ে নয়। আমরা চাই যৌনকর্মী এ পথ থেকে মুক্তি পাক সুস্থ স্বাভাবিক জীবন অতিবাহিত করুক।

মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশে জনগনের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টের মূল্য আপনাদের না থাকতে পারে‌ । তবে জনগণের কাছে এর মূল্য আছে? এ নীতি বাদ দিতে হবে।

যৌনকর্মীদের পেশা হিসেবে স্বীকৃতির প্রশ্ন‌ই আসে না। বরং বিভিন্নভাবে পূনর্সবান করে তাদেরকে নানা ধরণের সামাজিক সহায়তার অধীনে এনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, নিরাপত্তা, কাউন্সিলিং ইত্যাদির মাধ্যমে সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা দিয়ে এই পেশা থেকে সরিয়ে আনতে হবে। কোন অবস্থায় তারা যাতে এই অপরাধে জড়িত না হয়ে পড়ে সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে।

আরও পড়ুন-

যৌনকর্মী কি শ্রমিকের মর্যাদা পাওয়ার আদৌ যোগ্য?

যৌন পেশা পারিবারিক নিরাপত্তার জন্য ভয়ংকর এক হুমকি! এ ব্যপারে কখনও ভেবেছেন কি সংস্কার কমিশন? নাকি জেনে বুঝে এ সুপারিশ করেছেন?  গোপনে গোপনে প্রচলিত এই পেশার কারণে ইতোপূর্বে সমাজে ও পরিবারে ভিতরে ভিতরে পচন ধরেছে । সেই পচনকে কি আরও ত্বরান্বিত করতে চান তারা? !  আর কত নারীকে সংসারের মানসিক ট্রমার মধ্যে  দিয়ে যেতে হবে? কিংবা পুরুষকে ভোগ করতে হবে সংসারে মানসিক যন্ত্রণা?  কি  হবে সন্তানদের অবস্থা?

যৌন পেশাকে একতা সম্মানজনক পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে  সমাজে কি ভারসাম্য থাকবে? কার স্বার্থে এ সুপারিশ? নাকি যৌনতার সাথে জড়িত বিশাল অবৈধ বানিজ্যকে বৈধ করতে এ দাবি? যৌনপেশাকে স্বীকৃতি দিলে যৌন স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে পড়ে যাবে আপনারা কি সেই পরিসংখ্যান করেছেন?

মেয়েরা যেন প্রতারণার শিকার বা পাচার হয়ে এই পেশায় আসতে না পারে সে বিষয়ে যাতে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায় সেই ব্যাপারে সুপারিশ ও কার্যকরী নির্দেশনা দেওয়া যেত । কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছেন আপনারা ? নারীবাদ কি আপনাদের এতটাই অন্ধ বানিয়ে দিয়েছে যে মুসলিম অধ্যুষিত এ দেশে পুরুষের কথা না হয় বাদই দিলাম, অশিকাংশ নারীদের চাওয়া ও মতামতকে এ কমিশন মূল্যায়ন করে নাই। এ দেশের অধিকাংশ মা বোনদের মতামত বাদ দিয়ে  যৌন কর্মকে স্বাভাবিক কর্ম হিসেবে স্বীকৃতি চাচ্ছেন যা কখনো হবে না। এ ধরনের কাজ সকল ধর্মে যেমন নিষিদ্ধ, ইসলাম ধর্মে তেমনি শুধু নিষিদ্ধ নয় বরং জঘন্য অপরাধ;কবীরা গুনাহ। আর তার স্বীকৃতির জন্য বলছেন যা কুরআন সুন্নাহর সাথে সংঘর্ষিক।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَحِدٍ مِنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَ وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ

অর্থ: “ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষ তাদের প্রত্যেককে একশ’ বেত্রাঘাত করো। আল্লাহর ধর্মে তাদের প্রতি কোনো ধরনের দয়া যেন তোমাদেরকে নিরুৎসাহিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখো। আর তাদের শাস্তির সময় মু’মিনদের একটি দল যেন উপস্থিত থাকে।” (সূরা আন-নূর, আয়াত: ২)

 فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ

অর্থ: “আর যারা এ ছাড়া অন্য কিছু কামনা করে, তারা সীমালঙ্ঘনকারী।” সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত: ৭)

وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا

অর্থ: “আর ব্যভিচারের নিকটেও যেয়ো না। নিশ্চয় তা এক অশ্লীল কাজ এবং খুবই নিকৃষ্ট পথ।” (সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩২)

আমাদের প্রিয় হাবীব ও আল্লাহর রাসুল সাঃ বলেছেন,

قوله عليه السلام: خُذُوا عني، خُذُوا عني قَدْ جَعَلَ اللهُ لَهُنَّ سَبِيلًا، الثيب بالنيب: الجلد مائة، والرَّجْمُ، وَالْبِكْرُ بِالْبِكْرِ الجَلْدُ مِائَةٌ، وَنَفْيُ سَنَةٍ

অর্থ: “তোমরা আমার কাছ থেকে জেনে নাও, তোমরা আমার কাছ থেকে জেনে নাও! আল্লাহ তাদের (ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীদের) জন্য একটি পথ নির্ধারণ করেছেন: বিবাহিত নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে একশ’ বেত্রাঘাত এবং পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড (রজম)। আর অবিবাহিত নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছর দেশ থেকে নির্বাসন।” (মুসলিম: ১৬৯০, আহমাদ: ২২৭০৩, ইবনে মাজাহ: ৪৪৪৩)

সুস্পষ্টভাবে ইসলাম গণিকাবৃত্তি বা দেহব্যবসা বা যৌন পেশাকে হারাম (নিষিদ্ধ) ঘোষণা করেছে। সেখানে এ কাজে নিয়োজিত নারী কিংবা পুরুষ কিভাবে ‘শ্রমিক’ হিসেবে মর্যাদা পাবে?

শ্রম বা কাজ মর্যাদাপূর্ণ হয় তখন, যখন তা হালাল বা বৈধ হয়।

আরও পড়ুন-

যৌনকর্মীদের সংশোধনে সমাজ ও রাষ্ট্র যেমন পদক্ষেপ নিতে পারে

নারী সংস্কার কমিশন ভাবছে এ সুযোগকে কাজে লাগাতে! কিন্তু এ দেশের জনগণ বিশেষ করে নারী সমাজ চোখে ঠুলি পরে নেই। তারা কোন অবস্থাতেই মেনে নেবে না জঘন্য সুপারিশ । কমিশন বলছে ধর্ম নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই ঐচ্ছিক!তাদের আগ্রহ না থাকতে পারে কিন্তু ধর্ম প্রাণ জাতিকে উপেক্ষা করে অন্যের এজেন্ন্ডা বাস্তবায়ন করতে দেবে না এদেশের জনগণ।

পরিশেষে আমাদের দাবী হচ্ছে যৌনকর্মীদেরকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি নয় বরং তাদেরকে এ পাপ থেকে ফিরিয়ে  আর্থিকভাবে পূনরাসন,সুর়ক্ষা, স্বাস্থ্য, মানসিক সুস্থতা এবং ভবিষ্যতে এ কাজে যাতে ফিরে যেতে না পারে সেই নিশ্চয়তা থাকতে হবে। জোর করে যারা এ কাজে নারীকে বাধ্য করছে ,তাদেরকে কঠোর আইনের আওতায় আনতে হবে।

লেখকঃ লেখক ও কলামিস্ট

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-

[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১) ।

মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে।  আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।

আরও পড়ুন