।। সুমাইয়া রাইয়্যান ।।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ ইউনুসের কাছে গতকাল শনিবার ১৫টি মূল বিষয়সহ ৪৩৩টি সুপারিশ করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যরা। সুপারিশগুলোর মধ্যে একটি সুপারিশ হচ্ছে, “শ্রম আইনে গৃহকর্মী ও যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান।” গৃহকর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদা চাওয়াটা যৌক্তিক তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মানুষের বাসায় শ্রম দেয় । কিন্তু একজন যৌনকর্মী কি এমন শ্রম দেন যে তাকে শ্রমিকের স্বীকৃতি দিতে হবে? সে তো অর্থের বিনিময়ে পর পুরুষের সঙ্গে যৌনসঙ্গমে মিলিত হয়ে প্রতিনিয়ত নৈতিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে সমাজ পঁচনের গতিকে তরান্বিত করছে । ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে একজন ব্যভিচারী পুরুষের সাথে স্বেচ্ছায় ব্যভিচারের লিপ্ত হবার অপরাধে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার অপরাধে অভিযুক্ত । অথচ এই অপরাধে অভিযুক্ত আসামীকে শাস্তি না দিয়ে বরং ফুলের মালা দিয়ে তাকে বরণ করে তাকে ও তাকে এ পথে যারা এনেছে তাদেরকে আরও বেশি বেশি এ কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগাতে চাচ্ছি ! আমরা কি মানুষ খুন করা ভাড়াটে একজন গুণ্ডার খুন-খারাবীর কাজটাকে শ্রমিকের মর্যাদার স্বীকৃতি চাইবো? চাইবো না। তাহলে যৌনকর্মীদের যে দেহ ব্যবসার পেশা পুরো সমাজকে ধীরে ধীরে শেষ করে দিচ্ছে, খুব সহজেই যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ঘটাচ্ছে, বাংলাদেশে পারিবারিক অশান্তির একটা বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে , সেই পেশার সম্মানজনক মর্যাদা দাবী করা আত্মহনন ছাড়া আর কি?
ব্লগার আমীর ইশতিয়াক তার একটি আর্টিকেল ” পতিতাবৃত্তিকে রোধ করার জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে ” তে উল্লেখ করেন,
“অনেকে পতিতালয়কে ভাল চোখে দেখেন। তাদের ধারণা পতিতালয় আছে বলেই অনেক যুবক বিভিন্ন অপরাধ থেকে বেঁচে আছে। যেমন ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ তাদের দ্বারা হয় না, যারা নিয়মিত পতিতালয়ে গমন করে।…….পতিতালয়ে গমন করে অনেক নারী-পুরুষ এইডস এর মতো ভয়াবহ মরণব্যাধি ডেকে আনছে। এক শ্রেণীর অর্থ লিপ্সু পুরুষরা নারীদের নিয়ে পতিতালয় তৈরি করে লক্ষ লক্ষ টাকা কামাই করছে। তারা নারীদেরকে এ পথে এনে পরিবার, সংসার থেকে সরিয়ে রাখছে। আমাদের সমাজে দিন দিন পতিতালয়ের সংখ্যা বাড়ছে। অথচ প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব। জনগণ এর বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন করছে না। তাইতো তারা মদদ পেয়ে নারীদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, যুবকদের ধ্বংস করার জন্য এ ব্যবসা করছে।”
আরও পড়ুন-
নারী বিষয়ক সংস্কার প্রস্তাবঃ পতিত স্বৈরাচারী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করছে
গতকাল দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায় যে,
“নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যৌনকর্মীদের আইনগত স্বীকৃতি নেই, তবে যৌন পেশা সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট আইনও নেই। আইন না থাকায় যৌনকর্মীরা পুলিশের হয়রানি ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হন। আর্থিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে তারা আরও ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি না থাকায় তারা আইনি সহায়তা ও নিরাপত্তাও পান না ।এর আগে কমিশনের সদস্যরা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরেন। “
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশের প্রেক্ষিতে আমরা মুসলিম নারী সমাজ তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি । চলুন জেনে নেয়া যাক ইসলাম এই বিষয়ে কি বলে। ইসলাম কী বলে যৌনপেশা বা পতিতাবৃত্তি (Prostitution) সম্পর্কে ? ইসলামে যৌনপেশা বা দেহব্যবসা স্পষ্টভাবে হারাম (নিষিদ্ধ)।
আল্লাহ বলেন:” আর ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ এবং অত্যন্ত নিকৃষ্ট পথ। ” (সুরা আল-ইসরা, ১৭:৩২)
“ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী; তাদের প্রত্যেককে তোমরা একশ করে বেত্রাঘাত করবে। আল্লাহর বিধান কার্যকরী করণে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবিত করতে না পারে যদি তোমরা আল্লাহ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাকো এবং মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে”। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ২]
তাহলে দেহব্যবসায় নিয়োজিত নারী অথবা পুরুষ কি “শ্রমিক” হিসেবে মর্যাদা পেতে পারে? না, ইসলামের দৃষ্টিতে তারা “শ্রমিক” হিসেবে মর্যাদা পায় না । কারণ শ্রম বা কাজ তখনই মর্যাদাপূর্ণ হবে যখন তা হালাল (বৈধ) হয়। দেহব্যবসা একটি অবৈধ ও অনৈতিক কাজ, তাই এই কাজের মাধ্যমে কেউ শ্রমিকের মর্যাদা পাবে না।
আরও পড়ুন-
কিন্তু যারা নানা কারণে এই পেশায় যেতে বাধ্য হয় তাদের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে? ইসলাম দয়া ও করুণার ধর্ম। যারা সমাজে দারিদ্র্য, নির্যাতন বা অন্য কোনো চাপে পড়ে এই পেশায় জড়িয়ে পড়েছে, সমাজের প্রতি ইসলামের নির্দেশ হচ্ছে তাদেরকে সেই পেশা থেকে বিরত রাখা । তাদের দিকে সহানুভূতি ও সহায়তার হাত বাড়ানো । আমাদের উচিত তাদের দোষারোপ না করে আর্থিক ও মানসিক সাহায্য করে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা । ইসলাম চায় সমাজের প্রতিটা মানুষ সম্মানজনক ও হালাল জীবিকা অর্জন করুক।
ইসলামের ইতিহাসেও এর উদাহরণে রয়েছে । খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে যদি আমরা ফিরে তাকাই ,আমরা দেখতে পাবো খলিফা উমর (রা.)-এর যুগে এবং পরে অনেক নারীকে যারা দেহব্যবসায় জড়িত ছিলেন, তাদের শিক্ষা, কাজ এবং নিরাপদ জীবিকা দিয়ে সমাজে ফিরিয়ে আনা হয়।কতইনা সুন্দর আমাদের ইসলাম ।
তাই এটা স্পষ্ট যে যৌনকর্ম বা Prostitution ইসলাম অনুযায়ী হারাম। তাই এর মাধ্যমে অর্জিত কাজকে শ্রম বা মর্যাদাসম্পন্ন পেশা কখনোই বলা যায় না। তবে ইসলাম মানবিক সহানুভূতির সাথে এই মানুষদের পুনর্বাসন ও হালাল জীবিকার পথে আনার নির্দেশ দেয়।
পরিশেষে বলতে চাই যে যৌনকর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদা দিয়ে তাদেরকে লাঞ্চনা ও বঞ্চনাময় জীবনের দিকে ঠেলে না দিয়ে বরং সামাজিক ও মানবিক দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে যৌনকর্মীদেরকে তাদের পরিবারে ও সমাজে সম্মানজনক পুনর্বাসন ও হালাল জীবিকার পথে নিয়ে আসা জরুরী।
লেখকঃ কলাম লেখক
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-
[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১)
মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে। আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।