Ads

শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরির উপায় ও কর্মপন্থা

।। ড. মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন ।।

বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরির উপায় ও কর্মপন্থা আলোচনার করার আগে আমরা জাপানের সেক্রেটারির বিষয়ে কিছুটা আলোচনা করতে পারি । জাপানি সেক্রেটারির যে দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালন করেন, তা শুধুমাত্র তাদের পেশাগত দক্ষতা নয়, বরং তাদের দায়িত্ববোধ, সততা এবং কর্মনিষ্ঠার প্রতিফলন। বাংলাদেশেও যদি একই ধরনের দায়িত্ববোধ এবং সততার শিক্ষা দেওয়া হয়, তবে আমাদের কর্মক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। এই লেখায়, আমরা জাপানি সেক্রেটারিদের দায়িত্ববোধের উদাহরণ ব্যবহার করে বাংলাদেশে কিভাবে একই ধরনের দায়িত্ববোধ এবং কর্মনিষ্ঠা সৃষ্টি করা যায় তার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব।

জাপানি সেক্রেটারির দায়িত্ববোধ এবং কর্মনিষ্ঠা

জাপানের কিউসু ইউনিভারসিটির প্রফেসর ড. আশির আহমেদ সেনসেই তার একটি লেখায় উল্লেখ করেন,

“জাপানি সেক্রেটারিরা তাদের কাজের প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান এবং দায়িত্বশীল। তারা শুধুমাত্র অফিসের কাজ নয়, বরং নিজেদের সুস্থতা এবং সততার প্রতিও মনোযোগী। নিচে তিনটি উদাহরণের মাধ্যমে আমরা তাদের কর্মনিষ্ঠার কিছু দিক তুলে ধরছি:

তোহকু বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৪ সাল)

তোহকু বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব সেক্রেটারি ইয়ামাকি সান, যিনি তার অসুস্থ মাকে টেলিফোন বুথ থেকে ফোন করেছিলেন। এই ঘটনা আমাদের শেখায় যে, সেক্রেটারিরা অফিসের সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার না করে নিজের দায়িত্ব পালন করেন। এমনকি নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও তারা অফিসের সুবিধা ব্যবহার করেন না, যা তাদের সততা এবং দায়িত্ববোধের প্রতিফলন।

কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয় (২০১০ সাল)

কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারি যিনি অফিসের কাজের ফাঁকে প্রফেসরের রুম সাজানোর জন্য একটি পরিকল্পনা করেছিলেন। তার প্রস্তাবিত পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রফেসরের কাজের দক্ষতা বেড়ে গিয়েছিল। এটি দেখায় যে, সেক্রেটারিরা শুধুমাত্র নির্ধারিত কাজ নয়, বরং তাদের সহকর্মীদের কাজের সুবিধার্থেও উদ্যোগী হন।

কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৪ সাল)

কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সেক্রেটারি যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসরণ করে উপহার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। তার এই সততা এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা আমাদের শেখায় যে, একটি সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য সততা এবং নিয়ম মেনে চলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন-

জাতি গঠনে শিক্ষকদের মূল্যায়ন যেভাবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ

বাংলাদেশে দায়িত্ববোধ ও সততার শিক্ষা

বাংলাদেশে একই ধরনের দায়িত্ববোধ এবং সততা শিক্ষা দেওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। নিচে কিছু সুপারিশ প্রদান করা হলো,

শিক্ষা ব্যবস্থা

১. নৈতিক শিক্ষা: প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রমে নৈতিক শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সৎ এবং দায়িত্বশীল হওয়ার গুরুত্ব বোঝাতে হবে।

২. অনুশীলনমূলক শিক্ষা: শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন এবং সততার গুরুত্ব বোঝাতে হবে।

পরিবারিক শিক্ষা

১.পরিবারের ভূমিকা: পরিবারের সদস্যদের উচিত শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সৎ এবং দায়িত্বশীল হতে শেখানো। তাদেরকে নিজেদের কাজ সঠিকভাবে করতে উদ্বুদ্ধ করা উচিত।

২. আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা: পরিবারের বড়রা যদি সৎ এবং দায়িত্বশীল হন, তবে শিশুরাও সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হবে।

পেশাগত শিক্ষা

১. প্রশিক্ষণ কর্মসূচি: সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলিতে নৈতিকতা এবং দায়িত্ববোধের উপর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে হবে।

২. উদাহরণ সৃষ্টি: কর্মক্ষেত্রে সৎ এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা এবং তাদের কাজের প্রশংসা করা উচিত।

আরও পড়ুন-

পেশাগত উন্নয়নে সফট স্কিল

পেশাজীবীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ সৃষ্টির উপায়

কর্মস্থলের পরিবেশ

উদাহরণ স্থাপন: উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিজেদের আচরণ এবং কাজের মাধ্যমে উদাহরণ স্থাপন করতে পারেন।

প্রশিক্ষণ: নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং দায়িত্ববোধ তৈরি করা সম্ভব।

উৎসাহ ও পুরস্কার

দায়িত্বপূর্ণ কাজের জন্য পেশাজীবীদের উৎসাহিত করা এবং পুরস্কৃত করা উচিত।

প্রশাসনিক সংস্কৃতি

নিয়ম-নীতি পালন: প্রশাসনিক নিয়ম-নীতি কঠোরভাবে পালন করা উচিত।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: প্রতিটি কাজের জন্য স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন

নিয়মিত মূল্যায়ন: নিয়মিত কর্মক্ষমতা মূল্যায়নের মাধ্যমে পেশাজীবীদের কাজের মান এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায়।

প্রতিক্রিয়া ও প্রতিফলন

কর্মক্ষমতার উপর প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিফলনের মাধ্যমে পেশাজীবীদের উন্নতির জন্য পরামর্শ দেয়া উচিত।

আরও পড়ুন-

ভাল ক্যারিয়ার গঠনে করণীয়

কিভাবে দায়িত্ববোধের উদাহরণ স্থাপন করা যায়

জাপানের অভিজ্ঞতা

জাপানে সেক্রেটারিদের দায়িত্ববোধ এবং নিষ্ঠার উদাহরণ থেকে আমাদের জন্য অনেক কিছু শেখার আছে। নিচে কিছু পদ্ধতি উল্লেখ করা হল যা বাংলাদেশে প্রয়োগ করা যেতে পারে-

প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি

জাপানের সেক্রেটারিরা প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির উপর অনেক গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশেও সেক্রেটারিদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।

কাজের পদ্ধতি ও দক্ষতা

কাজের পদ্ধতি এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং ম্যানুয়েল তৈরি করা যেতে পারে।

নৈতিকতা ও পেশাদারিত্ব

নৈতিকতা এবং পেশাদারিত্বের উপর গুরুত্ব দেয়া উচিত এবং এই বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিপালিত করা উচিত।

পরিশেষে, জাপানি সেক্রেটারির দায়িত্ব এবং কর্মনিষ্ঠা আমাদেরকে শেখায় যে, সততা, দায়িত্ববোধ এবং নিষ্ঠা কিভাবে একটি সফল কর্মজীবনের জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশেও যদি আমরা শিক্ষার্থীদের এই গুণাবলী শেখাতে পারি, তবে আমাদের সমাজ এবং কর্মক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। নৈতিক শিক্ষা, পরিবারিক শিক্ষা এবং পেশাগত শিক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশকে আরও উন্নত করতে পারব।মহান আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করুন। আমিন!

লেখকঃ প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক  মোঃ ইয়ামিন হোসেন 

আরও পড়ুন