Ads

শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেরণাময় বাণী

।। সাবিকুন্নাহার মু্ন্নী ।।

ঐতিহাসিক মে দিবস ২০২৫ । মহান মে দিবসের এবছরের প্রতিপাদ্য হলো-

“শ্রমিক মালিক এক হয়ে

গড়বো এ দেশ নূতন করে।”

১ মে, এ দিনটি মাঠে ঘাটে কলকারখানায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে রক্ত ঝরা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টির একটি দিন।রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার ও দাবী আদায়ের এক প্রেরণাময় দিন। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম ও ঘর্মাক্ত পথ বেয়ে আজো তারা তাদের ন্যায্য অধিকার,ন্যায্য মজুরী ও পাওনা থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছে।

পনেরশত বছর আগেই মানবতার মহান বন্ধু, দুঃখী ও মেহনতি মানুষের প্রিয় অভিভাবক রাসূল সাঃ ঘোষণা করেছিলেন-

“তোমরা দাস-দাসীর প্রতি সতর্ক থেকো, তোমরা যা খাও তাই তাদের খেতে দিও, তোমারা যা পর তাই তাদের পরতে দিও।”

“শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও । ”

“ন্যায়-নীতিবান শ্রমিকের পরিশ্রমকে নবীজি (সা.) জিহাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। একদিন এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। সাহাবায়ে কেরাম লোকটির দেহের শক্তি-সামর্থ্য এবং সাহসিকতা দেখে বললেন,

“ইয়া রসুলুল্লাহ, এই লোকটি যদি আমাদের সঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে আল্লাহর রাস্তায় কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত; তাহলে আমাদের অনেক কল্যাণ হতো।

রসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে বললেন,“এই লোকটি যদি তার ছোট ছোট সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার উদ্দেশে উপার্জনের চেষ্টায় ঘর থেকে বের হয়ে থাকে, তাহলে তোমরা শুনে রাখো; লোকটি অবশ্যই আল্লাহর রাস্তায় তথা জিহাদের ময়দানেই আছে।

নবীজি আবার বললেন, ‘এই লোকটি যদি তার পিতা-মাতার খেদমতের উদ্দেশে উপার্জনের চেষ্টায় ঘর থেকে বের হয়ে থাকে, তাহলে সে অবশ্যই আল্লাহর রাস্তায় তথা জিহাদের ময়দানেই আছে।’

তৃতীয়বার রাসুল (সা.) বললেন, ‘এই লোকটি যদি স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে ঘর থেকে বের হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই সে আল্লাহর রাস্তায় তথা জিহাদের ময়দানেই আছে’ (সহিহুত তারগিব : ১৬৯২)।

এমন অনেক কালজয়ী হাদীস রেখে গেছেন শ্রমিকের অধিকার,মর্যাদা ও তাদের প্রতি ইনসাফপূর্ণ আচরণ প্রতিষ্ঠার মূল সূত্র রুপে।

আরও পড়ুন-

নারী বিষয়ক সংস্কার প্রস্তাবঃ পতিত স্বৈরাচারী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করছে

ঐতিহাসিক মে দিবসে শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার স্বীকৃতির ক্ষেত্রে এর চেয়ে শক্তিশালী ও প্রেরণাময় বাণী আর হতে পারে না।

শ্রমিক সমাজের প্রতি আহবান থাকবে-

শ্রমিক নিয়োগ, মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্ক, সর্বনিম্ন মজুরীর হার নির্ধারণ, মজুরী পরিশোধ, কার্যকালে দুর্ঘটনাজনিত কারণে শ্রমিকের জখমের জন্যে ক্ষতিপূরণ, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, শিল্প বিরোধ উত্থাপন ও নিষ্পত্তি, শ্রমিকের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, কল্যাণ ও চাকুরীর অবস্থা ও পরিবেশ এবং শিক্ষাধীনতা ইত্যাদি শ্রম আইনগুলোর ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা রাখবো,নিজেদের অধিকার আদায়ে নিজেরা সোচ্চার থাকবো।

বিলস (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ ) এর হিসেব মতে জুলাই বিপ্লবে প্রাণ দিয়েছেন ১১৪ জন শ্রমিক, আহত হয়েছেন ২৯ জন।বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে অধিকার বঞ্চিত ও মর্যাদাহীন শ্রমিক সমাজের জন্য এমন মানবিক সমাজ কামনা করছি, যেখানে প্রতিটি শ্রমিকের জীবন মান উন্নত করার পাশাপাশি তাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মৌলিক মানবিক প্রয়োজন পূরণের নিশ্চতয়তা প্রদান করবে। আমরা আশা করবো,শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো যাচাই বাছাই করে দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। এখন সময় শুধু প্রয়োগের, বাস্তবায়নের।

শ্রমজীবী মানুষের প্রতি আর কোন বৈষম্য নয় । আগামীর বাংলাদেশে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ একটি শ্রমিক বান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক -এ প্রত্যাশা করছি।

লেখকঃ  কলাম লেখকঅ্যাডভোকেট  এবং নির্বাহী পরিচালকমানবাধিকার ও আইনী সুরক্ষা কেন্দ্র (মাসুক)

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-

[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১)

মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে।  আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।

আরও পড়ুন