।। ড. মো. নূরুল আমিন ।।
গত ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ল’ রিসার্স এন্ড লিগ্যাল এইড সেন্টারের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া অডিটরিয়ামে আয়োজিত ‘বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে সংবিধান : গণপ্রত্যাশা’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকে আমন্ত্রিত আলোচক হিসাবে যোগ দেয়ার সুযোগ হয়েছিল। প্রবীণ সাংবাদিক কলামিস্ট ও আমাদের বর্ষীয়ান অগ্রজ জনাব মোবায়েদুর রহমানের সঞ্চালনায় বৈঠকটিতে শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করার কিংবদন্তি প্রবক্তা জনাব মাজদার হোসেন, ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট কলামিস্ট জনাব ইখতেদার আহমদ, ব্যারিস্টার সানি আবদুল হকসহ খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, আইনজীবী এবং ইসলামী চিন্তাবিদ ও রাজনীতিক, সাংবাদিক সমাজসেবী আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। বেশির ভাগ আলোচনাই সংবিধান : নতুন না সংস্কার এবং তার কাঠামো ও জনচাহিদা এই বিষয়ের উপর আবর্তিত হয় এবং সকলেই জ্ঞানগর্ভ অভিমত প্রকাশ করে সংস্কারের পরিবর্তে নতুন সংবিধান তৈরির ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেন। আলোচকদের প্রায় সকলেই মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশের সংবিধানের মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা, ভূগৌলিক জাতীয়তা ও সমাজতন্ত্র অন্তর্ভুক্তিকরণের বিরোধীতা করেন এবং তা প্রত্যাহার করে একটি মুসলিম দেশের উপযোগী গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও সর্বস্তরের শিক্ষাসূচিতে কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলনের উপর জোর দেন। কেউ কেউ যারা বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করেছেন তাদের অধিকার ও যোগ্যতার ব্যাপারেও প্রশ্ন তোলেন এবং উল্লেখ করেন যে, ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যেসব প্রতিনিধি এমএনএ ও এমপিএ নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া কর্তৃক প্রদত্ত একটি আইনী কাঠামো বা Legal Framework Order-এর ভিত্তিতে পাকিস্তান ইসলামিক রিপাবলিকের শাসনতন্ত্র বা সংবিধান রচনা করার জন্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব তাদের দেয়া ছয় দফার ভিত্তিতে একটি সংবিধানের খসড়াও পেশ করেছিলেন যার শিরোনাম ছিল Draft Constitution of Islamic Republic of Pakistan যা ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ দিয়ে শুরু হয়েছিল এবং মূলনীতিতে বলা হয়েছিল এই দেশের সকল আইনের উৎস হবে ইসলাম এবং ইসলামের পরিপন্থী কোনও আইন দেশে প্রণয়ন করা হবে না। ইসলামী শিক্ষা ও বিধানাবলী প্রচার ও প্রসারের জন্য রাষ্ট্র সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ১৩ দিনের মাথায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনীর প্রধানের কাছে পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় এবং প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন ঘটে। তখন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের গুরুত্ব উঠে আসে। এই অবস্থায় নতুন বাংলাদেশ সরকারের সামনে কয়েকটি অপশন দেখা দেয়। এক. নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের পূর্ব প্রণীত সংবিধান নতুন দেশের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে পাকিস্তানের ফেডারেল আকৃতি পরিবর্তন করে বাংলাদেশের ইউনিটারী প্রকৃতির সংবিধানে রূপান্তর করে তা অনুমোদন করা, দ্বিতীয়ত: নতুন সংবিধান তৈরি করার জন্য একটি আইনসভা নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এর মধ্যে প্রথম অপশনটি ছিল সহজ কেননা দেশ স্বাধীন হলেও আমাদের Demographic Structure ও যে নীতির ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত হয়েছিল তার পরিবর্তন ঘটেনি। কাজেই রাষ্ট্রের মূলনীতি ও সংবিধান framework খুব বেশি পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এর কোনটিই না করে সত্তর সালের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বাংলাদেশের Constituent Assembly ঘোষণা করে তাদের উপর নতুন সংবিধান তৈরির দায়িত্ব অর্পণ করে একটি বিশাল কমিটি গঠন করে দেন যার প্রধান ছিলেন ড. কামাল হোসেন, তারা একটি খসড়া সংবিধান তৈরি করেন এবং ড. কামাল হোসেন অন্তত: পনের বার এই খসড়া বগলে নিয়ে ইন্দিরা গান্ধীর অনুমোদনের জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন বলে শোনা যায়। তারা ঐ সময়ে ভারতীয় সংবিধানের Preamble থেকে Secularism, Socialism শব্দগুলো আমদানি করেন। বলাবাহুল্য, ভারতীয় সংবিধানের Preamble এ বলা হয়েছে, “We the People of India having Solemnly resolved to constitute India into a sovereign socialist, secular, democratic and to secure all the citizen, justice liberty, equality and fraternity do hereby adonte…..ইত্যাদি ইত্যাদি
এভাবে ভারতীয় ইউনিয়নের সংবিধানের reamble এর কথাগুলোর সাথে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ যুক্ত হয়ে আমাদের সংবিধানের মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং পাকিস্তানের সংবিধান তৈরির জন্য নির্ধারিত প্রতিনিধিরা অবৈধভাবে বাংলাদেশের সংবিধান তৈরি করেন এবং এই সংবিধানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নয় তারা ইসলামকেই নিষিদ্ধের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে দেশের আলেম-ওলামা ও ধর্মভীরু দাড়ি-টুপিধারী ব্যক্তিদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালান। ইচ্ছামতো ও ভারতীয় নির্দেশনায় সংবিধান তৈরি করেও তারা শান্ত হতে পারেননি। একাত্তর সালে দেশবাসীকে অত্যাচারী সেনাবাহিনীর নির্মম সংগীনের মুখে ঠেলে দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়ে ১৬ ডিসেম্বর ও তার পর দেশে ফিরে এসে এককভাবে ক্ষমতায় গিয়ে যে সমস্ত বরেণ্য ব্যক্তি নিরস্ত্র অত্যাচারিত সন্ত্রস্ত দেশবাসীর আশ্রয় হিসেবে কাজ করেছেন তাদের নাগরিকত্ব ও নাগরিক অধিকারও হরণ করে নিয়েছিলেন এবং দেশকে পরিণত করেছিলেন মাওলানা ভাসানীর ভাষায় ‘লুটপাট সমিতিতে’ এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জারের ভাষায় ‘তলাবিহীন ঝুড়িতে’। এর পরিণতিতে বাংলাদেশ এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে। ক্ষিধার তাড়নায় মানুষকে অন্যের বমি খেতে দেখা যায়, দাফনের জন্য মানুষ কাপড় জোগাড় করতে পারেনি। বাসন্তিরা কলা পাতা দিয়ে লজ্জা নিবারণ করতে বাধ্য হয়েছে। এটা হয়েছে আওয়ামী লীগের কথিত জাতির পিতা শেখ মুজিবের আমলে। তার ক্ষমতা নিষ্কণ্টক রাখার জন্য তিনি সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে চারবার সংবিধান সংশোধন করেছিলেন।
আরও পড়ুন-
তার অত্যাচারে মানুষ এতই ক্ষুব্ধ হয়েছিল যে, ১৯৭৫ সালে তার হত্যার পর কোনো মানুষকে ইন্না লিল্লাহ পড়ে আফসোস করতে দেখা যায়নি। দলটি একুশ বছর ক্ষমতায় আর আসতে পারেনি। জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে আবার ক্ষমতায় এসে নতুন ষড়যন্ত্র ও লুটপাটে মেতে উঠে। ভারতীয় সহযোগিতায় ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে গত সাড়ে ষোল বছরে তারা দেশকে নরকে পরিণত করে। শেষ পর্যন্ত ছাত্রজনতার গণবিস্ফোরণের ফলে উদ্ভূত অভ্যুত্থানে প্রাণ ভয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। তার সরকারের আমলে খুন, গুম, দুর্নীতি, অর্থপাচার, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ-ব্যভিচারসহ এমন কোনও অপরাধ নেই যা শাসকগোষ্ঠী করেননি। দেশের সমস্ত সাংবিধানিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে বেআইনী ও আইনগত কর্তৃত্ববিহীন ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার পর্যবেক্ষণে গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন ও বিদ্যমান নির্বাচনী প্রক্রিয়া, সুশাসন, দুর্নীতি এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় সরকারি হস্তক্ষেপসহ রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা করেছেন। তার পর্যবেক্ষণের চুম্বক কথাগুলো হচ্ছে :
* সমাজে এখন ভালো মানুষের স্থান নেই। আমরা এমন এক পঙ্গু সমাজে বসবাস করছি যেখানে ভালো মানুষ আর ভালো স্বপ্ন দেখেন না।
* দেশে ব্যক্তিতন্ত্র ও আমিত্বের চাষ হচ্ছে। দুনিয়াতে কোনো একজন ব্যক্তি দ্বারা কোনো দেশ বা জাতি তৈরি হয়নি। আমাদের দেশে তা করতে গিয়ে দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করা হচ্ছে।
* স্বপ্নের সোনার বাংলা চাইলে আমিত্বের আসক্তি এবং আত্মঘাতী উচ্চাভিলাষ থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
* ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও দাম্ভিকতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সুশাসন অভিধানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। রাষ্ট্র ও সমাজকে রক্ষা করা এবং অপকর্মে বাধা দেয়ার মতো কোনো নজরদারি প্রতিষ্ঠান বা ওয়াচডগ নেই।
* মেধা নয়, পেশিশক্তি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমেই এখন সরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
* রাজনীতি এখন মুক্ত নয়। এটি এখন বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। এই বাণিজ্যে মূলধন ও কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন নেই।
* গণতন্ত্র আমাদের কাছে এখন স্লোগান। আমাদের পূর্ব পুরুষরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চেয়েছিলেন। আমরা তা করতে পারিনি; তার পরিবর্তে ক্ষমতাধর দৈত্যের জন্ম দিচ্ছি। চাঁদাবাজ, মাস্তান, ডাকাত, ব্যভিচারী দুর্বৃত্তরা এখন সমাজপতি, সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
* সামরিক শাসকরা ক্ষমতার দখলদার, তারা দেশের মঙ্গল করতে পারেননি। দেশকে দু’বার তারা ব্যানানা রিপাবলিকে পরিণত করেছিল।
* স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়নি। ফলে কমিশন খেলার পুতুলে পরিণত হয়েছে। সংসদ অকার্যকর হয়ে পড়ছে। ভোটারবিহীন নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে যারা সংসদে যাচ্ছেন তারা জনগণকে সত্যিকার অর্থে প্রতিনিধিত্ব করতে পারছেন না।
* উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিলে তা হবে আত্মঘাতী।
আরও পড়ুন-
প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণে জাতির বিবেক ফুটে উঠেছে বলে আমার ধারণা। এতে আমাদের ধ্বংসপ্রায় জাতির জীবনের যে দিকগুলো তুলে আনা হয়েছে সেগুলো পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব আমাদেরই। হতাশাগ্রস্ত জাতিকে উজ্জীবিত করার জন্য এটি একটি সাহসী ও শক্তিশালী রায়। এই রায়ের পর্যবেক্ষণ অভূতপূর্ব। ইতিহাসে রায়টি স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে। রায়ের কোথাও ক্ষমতাসীন সরকারের ব্যর্থতার কথা নেই। তবে তারা যে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও শিষ্টাচার, রাজনীতি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং নৈতিকতা প্রভৃতি ধ্বংসের অনুঘটক হিসেবে কাজ করছেন রায়টি ও তার পর্যবেক্ষণের প্রতিটি বাক্যে তার প্রতিফলন ঘটেছে। বিদ্যমান অবস্থায় মানুষ বিক্ষুব্ধ ও হতাশাগ্রস্ত। তারা চারদিকে অন্ধকার দেখছেন। এই অবস্থায় বিপ্লবোত্তর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে ৬টি কমিশন গঠন করেছেন। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশনও একটি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সংস্কার নয়, নতুন সংবিধানই তৈরি করা অপরিহার্য। এজন্য সরকার বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি খসড়া সংবিধান তৈরি করে সকল রাজনৈতিক দলের অভিমতের ভিত্তিতে তা অনুমোদনের জন্য গণভোট অথবা গণপরিষদ নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে পারেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনেকেই দেখা যায় ক্ষমতায় যাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছেন, আমি মনে করি সংস্কার ও সংবিধান প্রণয়নের কাজ ঝুলন্ত রেখে বিপ্লবের চেতনা ও জনমানুষের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব হবে না। Haste is Waste অপেক্ষা করুন, সবুর করুন, সবুরে মেওয়া ফলে। নতুবা শেখ নামের দস্যু খুনী ও ফেরাউন নমরূপদরা বার বার ফিরে আসবে।
শেষ করার আগে একটা কথা বলা দরকার। জাতি হিসেবে আমরা মুসলমান। আমাদের সংবিধানের মূলনীতি নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠে। এই প্রশ্নটি আমাদের আলেম-ওলামা ও প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা প্রায় ৭০ বছর আগেই সমাধান করে দিয়েছিলেন। পাঠকদের অনেকে হয়তো জানেন যে, ১৯৪৭ সালে যখন মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র দেশ হিসেবে পাকিস্তানের আবির্ভাব ঘটে তখন এর সংবিধান তৈরি নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেছিলেন যে, পবিত্র কুরআনই হবে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র। কিন্তু বললেই তো হবে না, কুরআন তো আইন গ্রন্থ নয়। কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা কিয়াছ, প্রভৃতি হচ্ছে আইনের উৎস। কাজেই সংবিধানের জন্য আলাদা একটি কেতাব প্রয়োজন। এ প্রেক্ষিতে তৎকালীন পাকিস্তানের উভয় অংশ, এমনকি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান উলামায়ে কেরাম এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন এবং তারা শাসনতন্ত্রের মৌলিক কাঠামোর ব্যাপারে ঐকমত্যে উপনীত হন যা অধিকাংশ ১৯৫৬ সালে গৃহীত পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই শাসনতন্ত্রটিই ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে বাতিল করে দেন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসন প্রত্যাহারের পর যখন নতুন শাসনতন্ত্রের প্রশ্ন উঠে তখন ইত্তেফাক সম্পাদক জনাব তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র পুনর্বহালের পরামর্শ দিয়ে পত্রিকাটিতে একটি সম্পাদকীয় লিখেছিলেন। তার লেখাটি আমি নিজে পড়েছি। এগুলো আমার স্মৃতি, এতে কোনো ভুল থাকলে সম্মানিত পাঠকরা তা শুধরে দিতে পারেন, আলেম-ওলামা ও বিশেষজ্ঞদের ঐ সুপারিশ Objective Resolution নামে পরিচিত ছিল। ৮ দফা এই প্রস্তাবটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করতে পারে। আমরা যখন সাফ কবলা করি তখন বায়া দলিলের প্রশ্ন আসে। আমার এই কথাগুলোকে বায়া দলিল বলে মনে করা যেতে পারে।
আজকে সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আমাদের বর্তমান সংবিধানে সার্বভৌমত্ব জনগণের। নাস্তিক ছাড়া সকল মুসলমান, হিন্দু খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈনরা আল্লাহ বা ইশ্বর/ভগবানকে সার্বভৌমত্বের মালিক মনে করেন। এই সার্বভৌমত্বকে ইস্যু করে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করার ঘটনা অনেকেই জানেন, কেননা দলটির গঠনতন্ত্রে সার্বভৌমত্ব তথা সকল ক্ষমতার মালিক ‘মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ’ বলা হয়েছে। আমি যে Objective Resolution এর কথা বলেছি তাতে প্রায় ৭০ বছর আগেই এর সমাধান দেয়া হয়েছে। এর প্রথম প্যারাটাই শুরু হয়েছে এভাবে-
“Whereas Sovereignty Over the entire Universe belongs to Allah Almighty Along and the authority which He has delegated to the state through the People for being exercised within the limits Prescribed by Him is a secret trust, This Constituent Assembly representing the People of the country resolves to frame a Constitution for the Sovereign Independent State of……
(এখানে দেশের নাম হতে পারে) নতুনভাবে প্রণীতব্য সংবিধানে আমরা এই প্যারাটি অন্তর্ভুক্ত করলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে বলে আমি মনে করি। সংস্কারের ব্যাপারে ভবিষ্যতে আরো আলোচনার আশা ব্যক্ত করে আজকে এখানেই শেষ করছি।
লেখকঃ প্রাবন্ধিক , গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব এবং সিনিয়র সহকারী সম্পাদক, দৈনিক সংগ্রাম
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে । আসুন ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।