।। ড. মো. নূরুল আমিন ।।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল গগণদীপ বকশী (G. D Bakshi) সম্প্রতি একটি হুঙ্কার দিয়েছেন। সেই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রদত্ত একটি সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন যে, বাংলাদেশ পাকিস্তানেরই পরিবর্তিত নাম। আসলে দুইটাই পাকিস্তান, ভারতের শত্রু। এদের টিকে থাকার অধিকার নেই। একাত্তরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ঐ সময়ে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে এবং এক কোটি মহিলাকে ধর্ষণ করেছে এবং এক কোটি লোককে ভারতে শরণার্থী হতে বাধ্য করেছে। তার মতে, ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রাণ দিয়ে তাদের রক্ষা করেছে এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়েছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, এখন একাত্তরের রাজাকারদের হাতে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে। রাজাকারের নাতিপুতিরা এখন পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে চাচ্ছে। তারা পাকিস্তান সফরের ভিসা নীতি শিথিল করেছে এবং এমনকি পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্য সম্পর্কও পুনঃস্থাপন করেছে। এটা মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর ত্যাগের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। তিনি বাংলাদেশ সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, আমরা যেমন দেশ গঠন করতে পারি তেমনি দেশ ধ্বংসও করতে পারি। বাংলাদেশ আমরাই সৃষ্টি করেছিলাম। এখন তাকে ধ্বংস করা আমাদেরই দায়িত্ব। এই জন্য তিনি একটি আশু যুদ্ধও কামনা করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকসহ সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী সকল নাগরিক তার সাথে একমত বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে শেখ হাসিনার পতনের পর ভারতীয় মুসলমানদের উপর উগ্র হিন্দুদের অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দেশ বিদেশের পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে। হিন্দুরা মুসলমানদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করছে। মসজিদ ভেঙ্গে তার জায়গায় মন্দির নির্মাণ করছে। নামাযের সময় মসজিদের সামনে গিয়ে ঢাকঢোল পিটাচ্ছে ও কীর্তন গাইছে। তাদের পক্ষ থেকে আবার বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
ঢালিউড তারকা ও জনপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী সেই দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর উপস্থিতিতে একটি সমাবেশে ঘোষণা করেছেন যে, মুসলমানদের তারা মেরে টুকরো করে তাদের দেহাবশেষ নদীতে নয় বাংলাদেশের মাটিতেই নিক্ষেপ করবে। বলাবাহুল্য আওয়ামী আমলে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতে এই মিঠুন চক্রবর্তীকে একজন মহামানব (Super man) হিসেবে উপস্থাপন করা হতো। এপার বাংলা ওপার বাংলার সাংস্কৃতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য বলা হতো যে, মিঠুন মূলত বরিশালের বাসিন্দা। বরিশালে তিনি অনেক মসজিদ মাদরাসাকে প্রতিবছর আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন এবং বহু বছর ধরে মসজিদের ইমাম অথবা মাদরাসার একজন শিক্ষককে মিঠুনের নিজ পয়সায় হজ¦ করতে পাঠান। এই গল্প শুনে অবশ্য কাউকে বলতে শোনা যায়নি যে, একজন মুশরিকের পয়সায় মসজিদ-মাদরাসা করা অথবা হজ¦ করা জায়েয কিনা! বিরানব্বই শতাংশ মুসলমানের এই দেশে আমাদের সম্মানিত আলেম-ওলামা ও ইসলামী ব্যক্তিত্বদের চরমভাবে অপমান অপদস্ত করে একদিকে আমাদের শাসক শ্রেণি ও তাদের দোসররা মহানবী (সা.)সহ ইসলামের ইতিহাসের বরেণ্য পন্ডিতদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করেছেন, অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশের আদর্শ ও সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করার জন্য বাংলাদেশের আকাশ বাতাস ও ঘরবাড়ির দরজা-জানালা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। তাদের এই আদর্শ ও সংস্কৃতিতে সাধারণ সনাতন ধর্মী তো আছেই একজন প্রধানমন্ত্রীও নিজের মূত্র নিজে সেবন করেন। হাতের কোশ ভরে গো-মূত্র পান করেন এবং হাতমুখ ধোন ও মাথায় দিয়ে মেজাজ ঠাণ্ডা করেন। গোবরের সাথে গোমূত্র মিশিয়ে তা দিয়ে স্নান করেন। তারা এমন এক সংস্কৃতির লোক যারা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রকাশ্যে উলঙ্গ হয়ে নদীনালা ও রাস্তার ধারে পায়খানা-পেশাব করতে লজ্জাবোধ করেন না। এদের জাতীয় আয়ের দেড় শতাংশেরও বেশি আসে মেয়েদের বেশ্যাবৃত্তির আয় থেকে। এই ঘৃণিত কাজগুলো আমরা উপেক্ষা করতে পারি না।
আরও পড়ুন-
শেখ হাসিনার পতনে তারা এখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন বলে মনে হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও এক্ষেত্রে স্বাভাবিক কূটনৈতিক শিষ্টাচার থেকে সরে এসে তথাকথিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অপপ্রচারের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে জাতিসংঘ শান্তিবাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব দিয়েছেন। দু-একটি ছাড়া ভারতীয় প্রচার মাধ্যমগুলো বিশেষ করে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং বিদেশে নিয়োজিত তাদের কূটনৈতিক মিশনসমূহ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে এখন গভীরভাবে নিমগ্ন। আগরতলা ও কোলকাতায় বাংলাদেশ কূটনৈতিক মিশনে তারা হামলা করেছে। বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত থাকার কারণে চরম উগ্রবাদী একজন ইসকন নেতাকে গ্রেফতার করার প্রেক্ষিতে ভারতীয় হিন্দুদের একটি দল সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছে। সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ ও ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করে যুদ্ধের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে বলে মনে হয়।
ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন দেশের মর্যাদা দিয়েছে। এটা তাদের দাবি, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগেরও বিশ্বাস এবং দাবি ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়েছে এবং এই ঋণ শোধ করা এই দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। কাজেই তাদের চাহিদা অনুযায়ী ট্রানজিট করিডোর নদী ও সমুদ্র বন্দর ব্যবহার এবং কয়লা গ্যাস সুবিধা প্রদান করা অত্যাবশ্যক। এই দলটি এই অজুহাতে বাংলাদেশকে ভারতের একটি করদ রাজ্যে পরিণত করেছিল। শেখ হাসিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের বলেছেন যে, ভারতের উন্নয়ন আমাদের উন্নয়ন এবং আমাদের উন্নয়ন ভারতের উন্নয়ন। তিনি দুই দেশের সম্পর্ককে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বলে অভিহিত করেছিলেন। এর অর্থ কী?
প্রশ্ন হচ্ছে ভারতীয় সহায়তা ছাড়া কি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হতে পারতো? যারা ইতিহাস জানেন তারা নিশ্চয়ই বলবেন যে, অবশ্যই পারতো। ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের লাহোর প্রস্তাবে ভারতবর্ষের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো একাধিক মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রস্তাব তৈরি হয়েছিল ১৯৩৩ সালে। চৌধুরী রহমত আলী পাঞ্জাবের চ আফগানিস্তানের A (উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ) কাশ্মীরের K এবং বেলুচিস্তানের stanঅক্ষর ও শব্দাংশ দিয়ে পাকিস্তান (Pakistan) শব্দটি উদ্ভাবন করেন এবং তৎকালীন মুসলিম লীগ ও ভারতীয় মুসলমানরা তাদের দাবিকৃত স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রটির নাম হিসাবে এটি সানন্দে গ্রহণ করেন। এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ উদ্ভাবন ছিল। এর অর্থ ছিল পাক ও পবিত্র ভূমি। পাক শব্দটির অর্থ ফার্সি ও পশতু ভাষায় পবিত্র। স্তান শব্দটিও ফার্সি যার অর্থ ভূখণ্ড বা দেশ। পাকিস্তান প্রস্তাবে তৎকালীন পূর্ব বাংলা ছিল না। ভারতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে মোহন লাল করমচাঁদ গান্ধি, পণ্ডিত জওহর লাল নেহেরু, বল্লভ বাই পাতেল প্রমুখ বাংলা ও পাঞ্জাব বিভাজনের দাবি করেন এবং তৎকালীন বৃটিশ সরকার ১৯৪৬ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। এই নির্বাচনে মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত আসনের ৯০ শতাংশ সীটে মুসলিম লীগ প্রার্থী বিজয়ী হন। পূর্ব বাংলা ও আসামে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। গণভোটে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে বিজয়ী হয়। বলাবাহুল্য, ঐ সময় পূর্ব বাংলার জনসংখ্যা ছিল ৩৯ মিলিয়ন; এর মধ্যে ১১ মিলিয়ন ছিল হিন্দু। সিলেট জেলা আসামের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গণভোটে প্রাপ্ত রায়ের ভিত্তিতে পূর্ব বাংলা ও আসামের সিলেট জেলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। আবার এক্ষেত্রে আরেকটি উপাদানও কাজ করেছে। সেটি হচ্ছে ভারতীয় কংগ্রেসের চাপ। তারা অখণ্ড ভারতে বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু যখন জিন্নাহর নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগের অনড় দাবি মেনে নিতে বাধ্য হলো তখন তারা বললেন, এ ক্ষেত্রে বাংলা ও পাঞ্জাবকেও ভাগ করতে হবে। তাদের বিশ্বাস ছিল বাংলা ও পাঞ্জাবের বিভক্তি হবে ক্ষণস্থায়ী। মুসলিম অধ্যুষিত হলেও তাদের ধারণা অনুযায়ী পূর্ব বাংলার অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা নেই। কাজেই তারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য আবার ভারতবর্ষে ফিরে যাবে। বলাবাহুল্য, ভারতীয় হিন্দুরা ১৯০৫ সালে পূর্ব বাংলা ও আসাম নিয়ে বৃটিশ সরকার সৃষ্ট স্বতন্ত্র প্রদেশ মেনে নেয়নি। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন করে ১৯১১ সালে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে সরকারকে বাধ্য করেছেন। এরাই আবার সাতচল্লিশে এসে বাংলা ভাগে সম্মত হবার এটাই ছিল প্রধান কারণ। একাত্তর সালে এগার দিনের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবার পর ভারতীয় বাহিনী এই দেশে অবস্থান নেয়। তারা হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্রশস্ত্র, শিল্পপণ্য, পাট, বস্ত্র ও চিনিকলের মেশিনপত্র ভারতে নিয়ে যায়। ভারতীয় সেনাবাহিনী এ অঞ্চলটি দখলে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। বিপত্তি দেখা দেয় তখন, যখন নবগঠিত বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য পদের জন্য আবেদন করে। নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম সদস্য চীন এতে আপত্তি করে। দেশটি পরিষ্কার জানিয়ে দেয় যে, বাংলাদেশে যেহেতু ভারতীয় সেনাবাহিনী এখনো অবস্থান করছে এবং দেশটি এখনো দখলমুখ নয় সেহেতু তাকে জাতিসংঘের সদস্য করা যায় না। চীনের এই আপত্তির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে সৈন্য প্রত্যাহারের অনুরোধ করে পত্র দেন এবং ভাতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীকালে ভারতের একজন জেনারেল এ জন্য আক্ষেপও করেছেন এবং বলেছেন যে, বাংলাদেশ থেকে তাদের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা সঠিক হয়নি। আমার এত কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, পাঠকদের এই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়া যে, সাম্প্রদায়িক ভারতের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে তার করদ রাজ্য হিসেবে ব্যবহার করা এবং তার আধিপত্য বজায় রাখা। তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য চল্লিশের ও পঞ্চাশের দশক এমনকি একাত্তরেও তারা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পকে ব্যবহার করেছে, নিজের দোষ অন্যের কাঁধে চাপিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে।
আরও পড়ুন-
একাত্তরের মার্চ পূর্ববর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সৃষ্ট অরাজকতা, অবাঙ্গালী নিধন, সম্পত্তি দখল ও লুটপাটের প্রেক্ষাপটে পঁচিশে মার্চের আগে পরে ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত ভারতে পাড়ি দেয়া শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ৮২,৮১,২২০ জন। এর মধ্যে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, পশ্চিম বাংলার নদীয়া, ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কুচবিহার এবং মালদহে খোলা শরণার্থী ক্যাম্পসমূহে ছিল ৫৭,৩৭,২৬৪ জন। বাকী ২৫,৪৩,৯৫৬ জন ছিল তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের নেতা থাকতেন কোলকাতার বিভিন্ন হোটেলে।
ধর্মীয় বিভাজন অনুযায়ী মোট শরণার্থীর মধ্যে ৬৯,৭১০০০ ছিল হিন্দু, ৫,৪১০০০ ছিল মুসলমান এবং বাকী ৪৪,০০০ ছিল অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। এ তথ্য আমার নিজের নয় ভারত সরকারের। সেই দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত Bangladesh Documents, Volum-1 থেকে নেয়া (পৃষ্ঠা ৪৪৬-৪৫০)। এদের সবাই নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করে। শরণার্থী হিসেবে ভারতে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সংখ্যায় বেশি হওয়ায় হিন্দুরা দাবি করে যে তারাই প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। বাংলাদেশ থেকে যেসব বুদ্ধিজীবী, প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ভারতে গিয়েছেন তাদেরকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে মাসিক বেতন দিতেন। স্কুল শিক্ষকরা পেতেন মাসিক ২৫ ডলার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৪০ ডলার করে। এই শরণার্থী প্রবাহকে পুঁজি করে তারা সারা দুনিয়ায় পাকিস্তান বিরোধী প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি অর্থও সংগ্রহ করেছে। তাদের এখানে দু’টি উদ্দেশ্য ছিল। এক, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান ভাঙ্গা ও তাকে দুর্বল করে উপমহাদেশে একক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়া। দুই, বাংলাদেশের এই অঞ্চলটিকে নিজের কব্জায় রাখা। বলাবাহুল্য ঐ সময়ে শুধু পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে ভারত তার প্রতিরক্ষা বাবত বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতো। এই অঞ্চলটি তার কব্জায় আসলে এই টাকা তাদের সাশ্রয় হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার যে অভিযোগ তুলছে তাও সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ১৯৪৬ সাল থেকেই ভারতীয় হিন্দুরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলে নিজেরাই দাঙ্গা বাধিয়ে মুসলমানদের হত্যা, তাদের জানমাল ও ইজ্জত ধ্বংসে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তৎকালীন পূর্ববঙ্গের জমিদারদের শতকরা ৯৫ ভাগই ছিল হিন্দু। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫০ সালে তৎকালীন সরকার East Pakistan Estate Acquisition and Tenacy Act, 1950 জারির মাধ্যমে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ করেন। জমিদাররা এজন্য ক্ষতিপূরণও পেয়েছে। এই আইন জারির পর বাংলাদেশের হিন্দু জমিদাররা পাইকারী হারে পশ্চিম বাংলায় হিজরত করেন। তারা এই বিষয়টিকে তাদের মর্যাদার পরিপন্থী হিসেবে গণ্য করেন এবং তাদের প্রজাদের সাথে সাধারণ মানুষ হিসেবে সমাজে উঠা-বসাকে অপমানকর বলে মনে করেন। এ বিষয়টিকেও তারা সাম্প্রদায়িকতা বলে চিহ্নিত করেছিল।
ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ। মুসলিম জাতি হিসেবে প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে আমরা অবহিত আছি। তাদের সাথে আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই, আধিপত্যের নয়। এই বন্ধুত্ব দুই দেশের মানুষের সাথে হওয়া বাঞ্ছনীয়। কোনও ব্যক্তি, পরিবার বা দলবিশেষের সাথে নয়। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চাই। এর অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষ, ছাত্র-জনতা তো বটেই আলেম-উলেমারাও এই দেশে হিন্দুদের পূজামন্ডপ পাহারা দেয়ার নজির স্থাপন করেছেন। পারস্পরিক সমমর্যাদা ও সার্বভৌমত্ব হোক আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি। এটাই আমরা কামনা করি।
লেখকঃ প্রাবন্ধিক , গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দৈনিক সংগ্রাম
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-
[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১) ।
মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে। আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।