Ads

আল্ট্রা মডার্নিজম এক ধরনের সামাজিক সমস্যা

।। হোসনে আরা মেঘনা ।।

” Ultra Modernism culture is a kind of social problem. ”  সামাজিক বিজ্ঞানের মতে — আমরা যা করি তাই আমাদের সংস্কৃতি। সংস্কৃতিই মানুষের জীবন প্রণালী নির্ধারণ করে থাকে।সমাজবদ্ধ মানুষের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, পোশাক-পরিচ্ছেদ, খাদ্যাভ্যাস, জ্ঞানের ভিত্তি ও বিকাশ, সামাজিক মূল্যবোধ, রীতি-নীতি, আচার-ব্যবহার, ধর্মীয় বিশ্বাস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রাজনৈতিক আচরণ — এ সবই একটি দেশ, জাতি বা সমাজের সংস্কৃতিকে প্রকাশ করে।

আর এই সকল সংস্কৃতির সীমাতিক্রান্ত অবস্থাই হলো আল্ট্রা-কালচার বা আল্ট্রা মডার্নিজম। ইংরেজীতে একটি প্রবচন আছে —- Excess of anything is very bad. আল্ট্রা-কালচার ঠিক তেমনটি। এমন সংস্কৃতি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নানা রকম সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে।

সমাজবিজ্ঞানী রবার্ট এল বার্কারের মতে ——— “সামাজিক সমস্যা সমাজের এমন একটি অবস্থা যা মানুষদেরকে সামাজিক মূল্যবোধ ও প্রথার পরিপন্থী কাজের দিকে ধাবিত করে এবং আবেগীয় ও অর্থনৈতিক দূর্দশা সৃষ্টি করে”।

বর্তমান বিশ্বে নারীদের স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারীতা এমন একটি আল্ট্রা-কালচার যা সামাজিক মূল্যবোধ ও ইসলাম ধর্মের পরিপন্থী। ইসলাম এবং রাষ্ট্র নারীদের স্বাধীনতা দিয়েছে মানে এইটা নয় যে তারা স্বল্পবসনে উগ্র সাজ-সজ্জায় রাস্তায় বা কোনো সেমিনারে অংশগ্রহণ করবে, পুরুষদের আকৃষ্ট করবে এবং বিভিন্নভাবে সামাজিক অসঙ্গতি ও বিশৃঙ্খলা ঘটিয়ে নানারকম সমস্যা তৈরী করবে। এহেন সীমাতিক্রান্ত অপসংস্কৃতি সমাজে কখনই কাম্য নয়।

 

‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ নামে একটি দিবস আছে। সেই দিনটি উদযাপন করতে গিয়ে সমাজে ছেলেমেয়েদের মধ্যে যে সকল বেহায়াপনা পরিলক্ষিত হয় তা সমাজের জন্য মারাত্মক হুমকী, বিশাল সামাজিক সমস্যা। বিভিন্ন সাধারণ এবং বড় বড় ব্যক্তিত্বের জন্মদিন এবং মৃত্যুদিন পালন করতে গিয়ে নিজস্ব বাড়ি, সরকারী, বেসরকারী এবং স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে কিছু অতিরঞ্জিত কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে হয় যা অন্য ধর্মের জন্য সঠিক মনে হলেও ইসলাম ধর্মের পরিপন্থী। এর ফলে ব্যক্তি দল এবং সমাজকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কিছু সীমাতিক্রান্ত প্রথার মুখোমুখি হতে হয়।

আরও পড়ুন –  চড়ুই পাখির স্বজনপ্রীতি

হুজুগে বাঙালী একজনের কোনো অসঙ্গতিপূর্ণ কালচার দেখে সেটাকেই অত্যাধুনিক মনে করে এবং সেদিকেই ধাবিত হয়।ফুটবল প্লেয়ার রোনালদোর মাথা ন্যাড়া। এইটা দেখে কতজনে মাথা ন্যাড়া করেছিল তার ইয়ত্তা নেই।নেইমারের হেয়ারকাট ডিজাইন ছিল অদ্ভুত প্রকৃতির। কিছু কিছু ছেলেদের নিকট সেটাই মডার্ন হেয়ারস্টাইল। এর নাম নেইমার হেয়ারকাট ডিজাইন।

আশির দশকে চলচিত্রগুলোতে দেখা যেতো ছেলেদের প্যান্টের মুহুরী ইয়া বড় ফাঁপালো। বাতাসে জাতীয় পতাকার মত দোল খায়। কোমরের বেল্টের বক্সলেট ইয়া বড়।মেয়েদের ব্লাউজের পেছনের গলা পুরাই ফাঁকা, গলার পট্টি অনেক নীচে কোমর পর্যন্ত প্রায়। এইটা দেখে অধিকাংশেরা আকৃষ্ট হয় এবং এমন পোশাক তৈরী করে নেয়। পুরো সমাজে এইটা ব্যাধির মত ছড়িয়ে পড়ে।

এক সময় দেখা যায় মেয়েরা পেটিকোটের নীচের অংশ হতে সাত/আট ইঞ্চি উপরে শাড়ি পরে, পেটিকোট বের করে রাখে। যারা পায়জামা পরে তারা ঝুল খাটো করে, পায়ের টাখনু হতে অনেক উপরে।

আরও পড়ুন-থার্ড জেন্ডার কেন অসামাজিক?

“রহিম রুপবান” সিনেমা দেখে কোম্পানিগুলো রুপবান চুড়ি, রুপবান ফিতা, রুপবান আলতা -সাবান-স্নো-পাউডার এমন কি দইওয়ালা ফেরী করে দই বেচতে বেরিয়ে হাঁক মারতো —–
“দই নেবে গো দই, রুপবান দই,
স্বাদে গন্ধে গুণে মানে এর জুড়ি পাবে কই ?
চট-জলদি কিনে নাও রুপবান দই।”
“বেদের মেয়ে জোসনা” সিনেমার প্রভাবেও ঠিক এমনটিই ঘটেছিল।

 

জি বাংলা, স্টার জলসায় নাটক দেখে “পাখি” জামা কিনে না দিয়ে কেউ বিষ খেয়েছে, কেউ আবার স্বামী তালাক করেছে।

নব্বইয়ের দশকে মেয়েদের কামিজের ঝুল হঠাৎ করে ছোট হয়ে গেলো।ছেলেদের জিন্সের বিভিন্ন যায়গায় কাপড় নেই, দেখতে মনে হয় ছিঁড়ে গেছে। দর্জি একজনের জামা বানাতে পকেট লাগাতে ভুলে গেছে। স্টাইল মনে করে আর সবাই নিজেদের শার্টের বুকপকেট ছিঁড়ে তুলে ফেলে দিয়েছে। —– এইগুলো সুস্থ কোনো কালচার হতে পারে না।

আরও পড়ুন-মর্নিং গ্লোরির সকাল দেখা

বর্তমানে মেয়েদের বোরখা এবং হিজাবের স্টাইল দেখলে অবাক হতে হয় বৈকি। পর্দা করার জন্য নয়, যেন স্টাইল করার জন্য। এমন বোরখা আর হিজাবে ছেলেরা মনে হয় বেশিই আকৃষ্ট হয়। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের যুগে কিছু মানুষ অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে। মানুষকে ঠকানো, চিটিং করা, ধাপ্পাবাজি, অন্যের বউ নিয়ে ভেগে যাওয়া — ইত্যাদি করে নৈতিক চেতনার অবক্ষয় ঘটাতে ব্যস্ত। যেখানে অনেক ভাল কাজ করা যায় ; তা না করে প্রযুক্তির অপব্যবহার করছে যা কোনো দেশ বা জাতির জন্য কাম্য নয়।

 

প্রতিটা দেশ ও জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সামাজিক আচার অনুষ্ঠান ও দৈনন্দিন পথ চলার সাথে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি থাকবে। সংস্কৃতি সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে বদলাতে থাকবে নিত্যদিন। কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন অপসংস্কৃতি হয়ে না যায়, এর মধ্যে অশ্লীলতা প্রবেশ করে সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি না করে, এই সংস্কৃতি কখনই যেন আল্ট্রা-কালচার হয়ে না যায়।

 

লেখকঃ কবি, সাহিত্যিক ও শিক্ষক 

ফেসবুকে লেখকের প্রোফাইলের লিংক – MH Meghna

আল্ট্রা মডার্নিজম এক ধরনের সামাজিক সমস্যা- আল্ট্রা মডার্নিজম এক ধরনের সামাজিক সমস্যা – আল্ট্রা মডার্নিজম এক ধরনের সামাজিক সমস্যা 

আরও পড়ুন