Ads

ইব্রাহিম রাইসির জয় ইরানকে কোন পথে নিবে?

এম আর রাসেল

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ইব্রাহিম রাইসি। আগস্ট মাসে তিনি হাসান রুহানির স্থলাভিষিক্ত হবেন। নতুন নেতার আগমনের মধ্য দিয়ে ইরান আরও বেশি রক্ষণশীল হয়ে উঠতে পারে- এমন মন্তব্য আকাশে বাতাসে শোরগোল তুলছে। ভূ-রাজনীতির অনেক ধারাভাষ্যকার বলছেন, রাইসির বিজয় উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে ইরানের সম্পর্কের উন্নয়নকে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।

উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে দ্রুত অভিনন্দন জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান। ইসরাইল বলছে, ইরানের সবচেয়ে উগ্রপন্থী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন রাইসি। এখনও কোনো মন্তব্য করেনি সৌদি আরব ও বাহরাইন। রাশিয়া, চীন, তুরস্ক সহ অনেক দেশ অভিনন্দন জানিয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক, আলোচিত পরমাণু চুক্তির রফাদফার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অবরোধ প্রত্যাহার, ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে সজীব করা সহ বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে ইরানকে। নতুন প্রেসিডেন্ট কি পারবেন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ইরানকে এগিয়ে নিতে?

আরও পড়ুনঃ ইরান-ইসরাইল সংঘাতঃ মধপ্রাচ্যের প্রধান ইস্যু হবে

ইরানের-মানচিত্র

ইরান বর্তমান সময়ে অন্যতম আলোচিত দেশ। সে কারণে দেশটির ব্যাপারে সবার আগ্রহের পারদ উঁচুতে থাকাটা স্বাভাবিক। মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ এই দেশটি অনেক প্রতিকূলতা এড়িয়ে বিশ্ব রাজনীতির মাঠে অন্যতম খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে। অর্থনীতির মন্দা দশা সত্ত্বেও দেশটির সামরিক উত্থান বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ইরান ইতোমধ্যে নিজের সক্ষমতারও প্রমাণ দিয়েছে। সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেন ইস্যুতে ইরান এখন অন্যতম পক্ষ। রাশিয়া, চীন ও তুরস্কের সাথে দেশটির কৌশলগত সুসম্পর্ক রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ ইরান কতটা শক্তিশালী?

পশ্চিমা বিশ্বকে ইরান সুদৃষ্টিতে দেখে না। বিশেষত, ইরান জুড়ে যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী মনোভাব অনেক বেশি। ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লবের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইরান সম্পর্ক দা-কুমড়ার মতো। রাইসির জয়েও এই সম্পর্কের পারদ উপরে উঠবে না এটা নিশ্চিত। ইরানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খুব বেশি নয়। ইব্রাহিম রাইসি অন্য সব প্রেসিডেন্টের তুলনায় ভিন্ন রূপে হাজির হয়েছেন। এই রূপের ঝলকানি দেখতে হলে জানতে হবে রাইসির পরিচয়।

কে এই রাইসি?

ইব্রাহিম রাইসি একইসাথে ধর্মীয় নেতা, বিচারক ও রাজনীতিবিদ। কর্ম জীবনের দীর্ঘ সময় জুড়ে তিনি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি দেশটির প্রধান বিচারপতি।

মাশহাদ শহরের অবস্থান

রক্ষণশীল শিবিরের প্রভাবশালী নেতা ইব্রাহিম রাইসি ইরানের বিখ্যাত মাশহাদ শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন। শহরটির সাথে শিয়াদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘটনার যোগ আছে। শিয়াদের ৮ম ইমাম আলি আল রেজার কবর এই শহরে। শিয়াদের একমাত্র ইমাম যিনি ইরানে শায়িত আছেন। মাশহাদ নামের পিছনে ইমামের কবরস্থানের একটি ভূমিকা রয়েছে। মাশহাদ অর্থ ‘শহীদদের কবরস্থান’। শিয়া ইতিহাস বলছে ইমাম রেজাকে বিষাপানে হত্যা করা হয়েছে এই শহরে।

আব্বাসীয় খলিফা মামুন ইমামের কবর ঘিরে দরগা তৈরি করেন। কালক্রমে এই দরগা আজও শিয়াদের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। পাহলভী বংশের প্রতিষ্ঠাতা রেজা শাহের বিরুদ্ধে এই দরগা থেকেই বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছিল বর্তমানেও এই দরগাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান আসতান-ই কুদস-ই রাজাভি। প্রতিষ্ঠানটি ইমাম রেজার দরগা রক্ষণাবেক্ষণ করে।

ইতিহাস ও সংগ্রামের জৌলস ছড়ানো ভূমি মাশহাদের আলো বাতাসে বেড়ে উঠেছেন ইব্রাহিম রাইসি। কুম শহরের শিয়া মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় পাহলভী রাজবংশের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লবের পর আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির কাছ থেকে দীক্ষা নিয়েছেন। রাইসি নিবিড়ভাবে ধর্মীয় জ্ঞান আয়ত্ত করেছেন। তিনি হোজ্জাত- আল- ইসলাম উপাধি ধারণ করেন। এর অর্থ ‘ইসলামের প্রামাণ্য অবয়ব’।

ধর্মীয় পদমর্যাদার স্তরক্রমে তাঁর অবস্থান সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পরেই। শিয়া ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি কালো পাগড়ি পরেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি নিজেকে আয়াতুল্লাহ বলেও পরিচয় দিয়েছেন। এই উপাধি সাধারণত দ্বাদশী শিয়া ইসলামের উচ্চপদস্থ নেতারা ব্যবহার করেন। শিয়া ইসলামের অসংখ্য ভাগের মধ্যে বৃহত্তম হল ইসনা আশারিয়া বা ইমামিয়া। দ্বাদশী শব্দটি দিয়ে ইমামিয়া অনুসারীদের ১২ জন নেতাকে বোঝানো হয়, যারা ঐশ্বরিক ভাবে মনোনীত।

বিপ্লব পরবর্তী বছর ১৯৮০ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে রাইসি কারাজ শহরের প্রসিকিউটর জেনারেল হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮৮ সালে গঠিত বিপ্লবী আদালতের ডেপুটি প্রসিকিউটর, ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত তেহরানে প্রসিকিউটর জেনারেল, ২০০৪ সাল পর্যন্ত জুডিশিয়াল অথরিটির ডেপুটি চিফ ও ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় প্রসিকিউটর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৬ সালে রাইসি ইরানের অন্যতম সম্পদশালী প্রতিষ্ঠান আসতান-ই কুদস-ই রাজাভি দেখাশোনার দায়িত্ব পান। ধর্মীয় কাজের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি বহু দাতব্য কাজও পরিচালনা করে। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে নির্মাণকাজ, বিদ্যুৎ, কৃষি, জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ ও আর্থিক ব্যবস্থাসহ বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিচালনাও সাথেও প্রতিষ্ঠানটির নাম জড়িয়ে আছে।

সবকিছু ছাপিয়ে পশ্চিমাদের কাছে রাইসি মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে পরিচিত। ২০১৯ সালে এই কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন। মানবাধিকরা সংগঠনগুলোর দাবি তিনি ১৯৮৮ সালের বিপ্লবী আদালতের বিচার কার্যে বহুসংখ্যক মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।

রাইসি সঠিক কতজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন তার প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর এক তথ্য মতে, এই সংখ্যা প্রায় ৫০০০। যার বেশিরভাগই ছিলেন মুজাহেদিন-ই খাল্ক (এমইকে) এর সদস্য। ২০১৯ সালে এই দলের প্রতিনিধিরা প্যারিসে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ৮০০ রাজনৈতিক বন্দীর ছবি প্রদর্শন করেন। রাইসির প্রতি অভিযোগের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘সেই সময়ের সর্বোচ্চ নেতার জারি করা ফতোয়া অনুযায়ী এই মৃত্যুদন্ডাদেশ যুক্তিসঙ্গত ছিল।’ অন্যদিকে ২০১৭ সালে ফাঁস হওয়া এক অডিও টেপে সেই সময়ের ডেপুটি সুপ্রিম লিডার আলি মন্তাযেরি মতামত শুনতে পাওয়া যায়। তিনি এই মৃত্যুদণ্ডাদেশকে ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছেন।

২০০৯ সালে সংস্কারপন্থী নেতা ইরানের সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী মীর হোসাইন মুসাভি নেতৃত্বে গ্রিন মুভমেন্ট আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে সংগঠিত এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। পক্ষপাতমূলক এই বিচারের জন্য রাইসিকে অভিযুক্ত করা হয়।

রাইসি ২০১৭ সালের নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন। ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি হাসান রুহানির নিকট পরাজিত হয়েছিলেন। পরাজয় বরণ করলেও ২০১৯ সালে সুপ্রিম লিডার রাইসিকে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দেন। ২০২১ সালের নির্বাচনে রাইসি ৬১.৯৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনে বিপ্লব পরবর্তী সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে। ভোটের শতকরা পরিমাণ মাত্র ৪২ শতাংশ। বিপ্লব পরবর্তী প্রথম নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পড়েছিল। সর্বশেষ ২০২৭ সালের নির্বাচনে ৭০ শতাংশ মোট পড়েছিল।

আরও পড়ুনঃ চীন-ইরানের চুক্তি কি গোটা গ্লোবাল অর্ডার বদলে দিবে?

নির্বাচনে ইরানিদের আগ্রহ কমছে কেন?

বিশ্লেষকরা আগে থেকেই এবার কম ভোট পড়তে পারে এমন পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। কারণ রাইসির মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পরই বোঝা গিয়েছিল এবার তিনিই জয়ী হবেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১৯৯৭ সাল থেকে রক্ষণশীল ও সংস্কারবাদীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রেও এতদিন এই বিষয়টিকে খেয়াল রাখত গার্ডিয়ান কাউন্সিল। কিন্তু এবার মনোনয়ন প্রাপ্ত বেশিরভাগ ছিলেন রক্ষণ শীল শিবিরের। যে দুজন সংস্কারপন্থীকে বাছাই করা হয়েছে তাদের পরিচিতি অতটা ব্যাপক নয়। মনে করিয়ে দেই, বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি সংস্কারপন্থী হিসেবেই পরিচিত।

এমনকি রক্ষণশীল তকমাধারী সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদও মনোনয়ন পাননি। বিগত নির্বাচনে তাঁকে বাছাই করা হয়নি। তখন সুপ্রিম লিডার বলেছেন, ‘আহমাদিনেজাদ বিভেদ বাডায়।’ এর মধ্য দিয়ে এটা পরিষ্কার সুপ্রিম লিডার চাইছেন না নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সাথে তার মতভেদ বাড়ুক। বলে রাখি, ইরানের রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম লিডারের কাছে তার সকল কাজের রিপোর্ট দেন।

ইব্রাহিম রাইসি ‘এসেম্বলি অব এক্সপার্টের’ সহ-সভাপতি। ৮৮ জন সদস্যের এই ফোরাম গোপন ভোটে সুপ্রিম লিডার নির্বাচন করেন। অনেক বিশ্লেষক পরবর্তী সুপ্রিম লিডার হিসেবে রাইসিকেই এগিয়ে রাখছেন। সুপ্রিম লিডার মনোনীত ৬ জন, পার্লামেন্ট থেকে বাছাইকৃত ৬ জন (এর মধ্যে ৩ জন বাছাই করেন প্রধান বিচারপতি) এই মোট ১২ জন সদস্য নিয়ে গার্ডিয়ান কাউন্সিল গঠিত। স্মরণ করিয়ে দেই ইব্রাহিম রাইসি বর্তমানে প্রধান বিচারপতি।

এই কাউন্সিল যে নিরপেক্ষ আচরণ করবেন না এটাই স্বাভাবিক। সুপ্রিম লিডারের প্রিয়ভাজন, গার্ডিয়ান কাউন্সিল ও এসেম্বলি অব এক্সপার্ট ফোরামে প্রভাবশালী কেউ যখন নির্বাচনে অংশ নেয় তখন বুঝতে বাকি থাকে না আয়োজিত নির্বাচন কেবলই আনুষ্ঠিকতা মাত্র৷ এই আনুষ্ঠানিক আয়োজনে সাধারণ জনগণের আগ্রহ জাগবে না এটাই স্বাভাবিক।

ইরানি বিপ্লবের সফল বাস্তবায়ন কতদূর?

ইরানের নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে আগেও প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। এরপরও মন্দের ভালো হিসেবে ইরানে তবুও নিয়মিত নির্বাচন হয়। শক্তিশালী একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিতরে পারস্পারিক পরামর্শের ভিত্তিতে দেশটি পরিচালিত হয়। বিশেষজ্ঞ পরিষদ বা এসেম্বলি অব এক্সপার্ট, সুপ্রিম লিডার, এক্সপেডেন্সি কাউন্সিল, গার্ডিয়ান কাউন্সিল, প্রেসিডেন্ট, পার্লামেন্ট, মন্ত্রিসভা –প্রভৃতি বিভিন্ন শাখা উপশাখা তৈরি তারই প্রমাণ বহন করে।

ইরানের রাজনৈতিক কাঠামো

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেখানে রাজতন্ত্রের জয়জয়কার, সেখানে ইরান ব্যতিক্রম। ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে   ১৯৭৯ সালের বিপ্লব হয়েছিল। বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানের বর্তমান রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে উঠেছে সত্য, কিন্তু মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়নি। আলি খামেনি মনে করেন সফল বিপ্লবের ৫ টি পর্যায় রয়েছে। এক. বিপ্লব ঘটানো, দুই. ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা, তিন. ইসলামী সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, চার. ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা, পাঁচ. ইসলামী সভ্যতা প্রতিষ্ঠা। খামেনির মতে, ইরান এই পর্যায়ের দুইটি ধাপ পার হলেও ৩য় পর্যায় সম্পন্ন করতে পারেনি।

বুঝতে পারা যায়, খামেনির স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথকে সুগম করতেই ইব্রাহিম রাইসির মতো ধর্মীয় নেতাকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। এখন প্রশ্ন হল, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকদের জন্য সমতা নিশ্চিত না করে কি বিপ্লবের সফলতা সম্ভব?

ইরানের সংবিধানের ১১৫ নং ধারা অনুযায়ী কোনো সুন্নি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারেন না। সুন্নিদের মন্ত্রী হওয়ার কথাও শোনা যায় না, রাষ্ট্রদূত পদেও সুন্নিরা বিরল। আজারি, কুর্দি, বেলুচ সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীরাও অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত। দুর্নীতিতেও ইরানের অবস্থা বেশ নাজুক। নতুন করে সংস্কারপন্থী ও রক্ষণশীল দুই শিবিরের দূরত্বও বাড়বে এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

আবার সংস্কারপন্থী, শাসক গোষ্ঠীর সমালোচকদের কঠোরভাবে দমনের ফল কখনই শুভ হয় না। এতে রাষ্ট্রের প্রতি অসন্তুষ্ট নাগরিকের সংখ্যা বাড়ে। শত্রু রাষ্ট্র এই অসন্তুষ্ট নাগরিকদের হাত করতে মুখিয়ে থাকে। তারাই এক সময় মোসাদের এজেন্ট হয় যায়। ইরানিদের মধ্য থেকেই মোসাদের এজেন্ট চিহ্নিত হওয়ার ঘটনাও বিরল নয়।

পরমাণু বিজ্ঞানী ফাখরিজাহেদ, কাসেম সুলাইমানি হত্যাতেও ইরানি নাগরিক চর হিসেবে কাজ করেছে। কাসেম সুলাইমানি হত্যায় এমন ৪৮ জনকে শনাক্ত করেছিল ইরান। ২০১৮ সালে পরমাণু সক্ষমতার ৫০০০ পৃষ্ঠার বিস্তারিত দলিল চুরি করেছিল মোসাদ। এই কাজে নিশ্চয় অসন্তুষ্ট নাগরিকরাই সাহায্য করেছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ইরান অসম্ভব মেধাবী এক জাতি। শেখ সাদী, ফেরদৌসি, ইবনে সিনা, ওমর খৈয়াম, গাজ্জালী, রুমি, রিরুনি, জামি, নিজামির মত অসংখ্য গোলাপ এই দেশের মাটিতেই জন্মেছিল। সেই গোলাপের জন্ম এখনও বন্ধ হয়নি। গোলাপের সুবাস চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে চাইলে সাম্য ও ন্যায়ের তরীতে সওয়ারী হওয়াতেই রয়েছে সমাধান। আলি খোমেনির কল্পিত ইসলামী সভ্যতা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন তখনই বাস্তবায়ন হবে, যখন বিপ্লবের সুর জনতার সম্মিলিত গান হয়ে বাজবে।

আরও পড়ুনঃ উপসাগরীয় রাজনীতিতে ইরান ফ্যাক্টর ও হরমুজ প্রণালী

আরও পড়ুন