Ads

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ডে-কেয়ার সেন্টার থাকা দরকার

শাহ আব্দুল হান্নান

‘ডে-কেয়ার সেন্টার’ হচ্ছে চাকরিজীবী নারীদের শিশুসন্তানদের অফিসে দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা ও অন্যান্য পরিচর্যা। একসময় ছিল যখন মহিলারা প্রধানত ঘরেই থাকতেন। কিছুটা মাঠে কাজ করতেন। মাঠ থেকে ঘরে ফিরে আসতেন। তখন ছোট শিশুদের দুধ খাওয়ানোর সমস্যা হয়নি। তারা ফাঁকে ফাঁকে শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতেন।

কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন প্রায় সব দেশেই মহিলারা বাধ্য হয়ে চাকরি করছেন। কারণ একজনের রোজগারে অনেকসময় সংসার ভালো করে চলে না। স্বামী-স্ত্রী দুইজনের রোজগারে কোনোভাবে সংসার চালানো যায়। তা ছাড়া শিক্ষিত নারীরা তাদের শিক্ষার প্রয়োগ চান এবং সেটি হতে পারে যদি তারা ব্যবসা অথবা চাকরিজীবী হিসেবে কাজ করেন।

এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, ইসলামে নারীদের বাইরে কাজ করার ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি কী? কুরআন কোথাও বলেনি যে, নারীরা বাইরে কাজ করতে পারবে না। সূরা নিসায় আছে- ‘পুরুষের রোজগার পুরুষের। নারীর রোজগার নারীর।’ এখানে নারীদের বাইরে কাজ করার অনুমতি পাওয়া যায়। বাস্তবেও রাসূল সা: এবং সাহাবায়ে কেরামের যুগে নারীরা বাইরে তাদের বাগানে কাজ করতেন এবং অনেকে ব্যবসা করতেন। হজরত উমর রা: একজন মহিলাকে মার্কেট সুপারভাইজার নিয়োগ করেছিলেন।

এখনকার বাস্তব পরিস্থিতি হচ্ছে, এই লাখ লাখ মহিলা বাইরে কাজ করছেন। তারা মাতৃত্বকালীন ছুটি পান তিন মাস বা ছয় মাস। এরপর শিশুদের দেখাশোনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাদেরকে কাজে যোগদান করতে হয়। অনেক কষ্টে তারা কোনো ব্যবস্থা করে নেন। কিন্তু এটা আদর্শ নয়। আদর্শ হচ্ছে- এসব নারীর সন্তানদের দেখভাল করার জন্য অফিসেই ব্যবস্থা করা যাতে মায়েরা কাজের ফাঁকে ফাঁকে শিশুদের দুধ খাওয়াতে পারেন। শিশুদের দুধ পানের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার।

কুরআন মাজিদ শিশুদের দুই বছর মায়ের দুধ খাওয়াতে বলেছে। মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই- এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে। যারা মায়ের দুধ খায় না, তাদের শারীরিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর প্রতিবিধান দরকার এবং তা হতে পারে ডে-কেয়ার সেন্টার প্রত্যেক অফিসে, মানে কর্মস্থলে ডে-কেয়ার সেন্টার বা শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা।

এ ব্যবস্থা হবে এমন যে, অফিসে একটি বা দু’টি রুম এ জন্য বরাদ্দ করতে হবে। সেখানে একজন নার্স রাখতে হবে। মা যখন কাজ করেন তখন শিশুদের দেখভাল করবেন তিনি। মা মাঝে মাঝে এসে দুধ খাইয়ে যাবেন।

এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, এতে নারীদের কারণে অফিস খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটাকে ‘নারীর কারণে’ বলা ঠিক নয়। সন্তান কি শুধু নারীর, নাকি পুরুষেরও? শিশুর শারীরিক ও মানসিক উন্নয়ন গোটা জাতির দরকার। সুতরাং ডে-কেয়ার সেন্টারের খরচ জাতির প্রয়োজনে করতে হবে; কেবল নারীদের জন্য নয়; যদিও এমনিতে মনে হয় এটা নারীদের জন্য খরচ করা হচ্ছে। আমার যতটুকু মনে পড়ে, সরকার নির্দেশ দিয়েছে যে, প্রত্যেক কর্মস্থলে এবং অফিসে ডে-কেয়ার সেন্টার থাকতে হবে। এর কিছুটা বাস্তবায়ন হয়েছে। বেশির ভাগ সরকারি অফিসে ডে-কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এটাকে সর্বপর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এটা অত্যন্ত জরুরি। জাতির দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণের জন্য এটা করতেই হবে।

সরকারকে অনুরোধ করি, যেন তারা এ ব্যাপারে আবার একটি আদেশ জারি করে যাতে প্রত্যেক অফিস ও কর্মস্থল, সেটি সরকারি হোক বা বেসরকারি হোক, যেন ডে-কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা করে। আমি এ ব্যাপারে দেশের চিন্তাশীল লোকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

আরও পড়ুন