Ads

ফার্মার্স ব‍্যাংক থেকে পদ্মা ব‍্যাংকঃ বিপদ তবু কাটছে না

জামান শামস

সংকটে পড়া বেসরকারি খাতের পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) এখনো বড় বিপদে আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের আমানত ফেরত দিতে ২০২৯ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছে। আবার এসব আমানতের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করতেও চাইছে। না হলে সরকারি যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চায় ব্যাংকটি। এই ব্যাংকের ৭১৫ কোটি টাকা মূলধনের জোগান দিয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলো, যা ব্যাংকটির মূলধনের ৬৬ শতাংশ। এ নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক মহাপরিচালক মুস্তফা কে মুজেরি।

ব্যাংক লাইসেন্স নেয় ব্যবসা করার জন্য। এটা সামাজিক সেবার জন্য নয়। ব্যাংকটি ব্যবসা করতে না পারলে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। দুনিয়াজুড়ে এটাই একমাত্র নিয়ম। ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠান হলে সরকার বিশেষ কারণে বাঁচিয়ে রাখতে পারে, যদি ওই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলে সমাজে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তখন সরকার চিন্তা করতে পারে। কিন্তু এটা কখনো ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না। কিন্তু আমরা দেখছি পদ্মা ব্যাংককে এভাবে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলো মূলধন দিয়েছে। এরপরও ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এটাকে এখন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মরতে দেওয়া উচিত।

এই ব্যাংকটি ২০১৩ সালের ৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালে শত শত কোটি টাকা অনিয়ম দেখে ফারমার্স ব্যাংকে পর্যবেক্ষক দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের কারণে ২০১৭ সালে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন খান আলমগীর তার পদ ছাড়তে বাধ্য হন ও ব্যাংকটির এমডি এ কে এম শামীমকে বাংলাদেশ ব্যাংক অপসারণ করে। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সরকারের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটির ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে।

ঋণ কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অনিময়ের কারণে সমালোচিত হওয়ার পর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকটির নাম পরিবর্তনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে জারি করা “‘দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড’ এর নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড নামকরণ’” শীর্ষক এক সার্কুলার অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৯শে জানুয়ারি ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড নামকরণ করা হয়।

দি ডেইলি স্টারের এক রিপোর্ট মতে,এর আগে স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) ২৯ কোটি ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় পদ্মা ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলো বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল (বিসিটিএফ)। গত ২৫ মে এই এফডিআরটির মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। ২০ মে পদ্মা ব্যাংককে পাঠানো এক চিঠিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করা না হলে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়। বিসিটিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন ‘আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’২০১৬ সালে সরকারি সংস্থাটি বিভিন্ন সুদ হারে ৫০৮ কোটি টাকা এফডিআর রেখেছিল। কিন্তু, তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকটি ওই অর্থ ফেরত দিতে পারেনি।

আগেই বলেছি,সংকটে পড়া বেসরকারি খাতের পদ্মা ব্যাংককে ৭১৫ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলো, যা ব্যাংকটির মূলধনের ৬৬ শতাংশ। এরপরও প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকদের জমা টাকা ফেরত দিতে পারছে না ব্যাংকটি। এসব আমানত ফেরত দিতে আগামী ২০২৯ সাল পর্যন্ত সময় চাইছে। আর বেঁচে থাকতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারি ব্যাংকের আমানতের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করতে চাইছে। এটা সম্ভব না হলে সরকারি যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চায় পদ্মা ব্যাংক।

সর্বশেষ বিদেশি বিনিয়োগ আনার ঘোষণা দিয়েছে পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক)। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে ব্যাংকটি। ডেলমর্গান ৭০ কোটি ডলার (৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ ম্যানেজ করেছে। সংবাদে জানা যায়,২ সেপ্টেম্বর পদ্মা ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। অনুষ্ঠানে পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও ডেলমর্গানের চেয়ারম্যান রব ডেলগাডো উপস্থিত ছিলেন। পদ্মা ব্যাংকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরু এবং ডেলমর্গানের পক্ষে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী নিল মরগানবেসার এতে স্বাক্ষর করেন। পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরু বলেন, আগামী ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই এ বিনিয়োগ আসবে। বিনিয়োগের মধ্যে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আসবে মূলধন বিনিয়োগ হিসেবে। আর বাকি টাকা আসবে ঋণ হিসেবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে-ব্যাংকগুলো দুর্বল হবার কারণ সুশাসণের অভাব, ঋণ বিতরনে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঋণের বড় অংশ শ্রেনি বিন্যাসিত হওয়া। এদের তারল্য পরিস্থিতি এতই খারাপ যে, বড় কয়েকজন গ্রাহক আমানতের টাকা ফেরত চাইলে দেওয়ার মতো সক্ষমতা নেই। বড় অংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে এদের। দীর্ঘদিন ধরে মুনাফা করতে পারছে না। আয় থেকে ব্যয় বেশি এবং ব্যবস্থাপনা মান মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। অনেকে মনে করেন, যেসব গ্রাহক খেলাপি হচ্ছে তাদেরকে ঋণমান খারাপ থাকার পরও বিভিন্ন রকম সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। অথচ যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছেন সেসব ভাল গ্রাহকের জন্য কোন ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই। ফলে নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী অনেকের ইচ্ছা করে খেলাপি হতে চাচ্ছেন। ফলে ঋণ আদায় পরিস্থিতি অসন্তোষজনক,কোথাও হতাশাব্যন্জক।

লেখকঃ প্রাবন্ধিক ও সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা

লেখকের আরও লেখা পড়ুন-

নবী পত্নী আয়েশা রাঃ এর উপর মিথ্যা অভিযোগঃ প্রতিক্রিয়া ও সমাধান (প্রথম পর্ব)

 

ফার্মার্স ব‍্যাংক থেকে পদ্মা ব‍্যাংক –  ফার্মার্স ব‍্যাংক থেকে পদ্মা ব‍্যাংক – ফার্মার্স ব‍্যাংক থেকে পদ্মা ব‍্যাংক- ফার্মার্স ব‍্যাংক থেকে পদ্মা ব‍্যাংক- ফার্মার্স ব‍্যাংক থেকে পদ্মা ব‍্যাংক

আরও পড়ুন