Ads

বই না কেনা বইমেলার গল্প

।। জি.মোস্তফা ।।

 

বিনে ঝামেলায় বিনে টিকেটে বইমেলায় প্রবেশ করলাম।কাঁটাবনে কাজ থাকায় মেলায় বেশিক্ষণ থাকার অবকাশ নেই। তাই তাড়াহুড়ো করে অমরাবতীতে নতুন বইয়ের সুঘ্রাণ নিয়ে দিব্যপ্রকাশের স্টলে পৌঁছলাম। দিব্য প্রকাশের প্রত্যেকটা বই একেবারে মৌলিক অসাধারণ সৃজনশীল আর মননশীল। সরদার আব্দুর রহমানের লেখা বইগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলাম। সাথে আবু সাঈদের বইটা নেড়েচেড়ে দেখলাম। সাধ আছে সাধ্য নেই। এতো এতো বই সব কিনতে ইচ্ছে করছে কিন্তু রিক্তহস্তে বিচরণকারী আমি। প্রচ্ছদ বিন্দু মিরর পাথফাইন্ডার, বাংলা একাডেমি প্রভৃতির বইগুলোতে একটা নজর তাকিয়ে দেখার ইচ্ছে রইলেও ঘড়ির কাটার নিষেধাজ্ঞার জন্য সম্ভব হলো না। ছুটে চললাম মেরিট ফেয়ারের দিকে। স্টল নাম্বার দেখতে দেখতে চলতে চলতে পেয়ে গেলাম মেরিট ফেয়ার। শুধু ইউরেকা ইউরেকা বলে চিৎকার করাটা বাকি রইলো।

 

স্টলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। বইয়ে স্পর্শ করার সাহস পাচ্ছিলাম না। মনে মনে ভয় হচ্ছিলো যে, অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে গেলে পাছে গেঁয়ো বলে তিরস্কার করে কিনা! যাই হোক অপরের দেখাদেখি হাত দেবার সাহস করলাম। নৈঃশব্দে হাত দিলাম আব্দুল হাই শিকদারের লেখা “সোনারগাঁও অন্তরে ভেতরে রূপকথা” নামক গ্রন্থের গাঁয়ে। গ্রন্থটি তৎক্ষণাৎ আমাকে বললো, “আমার দেহ স্পর্শ করা সহজ, কিন্তু আমার হৃদয় স্পর্শ করা কঠিন। হৃদয় স্পর্শ করতে হলে তোমাকে আবু তাওয়ামার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে কিছুকাল অধ্যয়ন করতে হবে।” বইয়ের কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি।
সহসাই আমার শরীর মন শিহরিত হয়ে উঠলো।সে বইটা তাকে সাজিয়ে রেখে ফাহমিদ উর রহমানের “বঙ্গ বাঙ্গালা বাঙ্গালী” গ্রন্থে স্পর্শ করলাম। এ বইটিও কথা বলে উঠলো, “খবরদার! আমার শরীরে হাত দেবেন না, আমার শরীরে সে-ই কেবল স্পর্শ করতে পারে যে যুবক ইখতিয়ার উদ্দিনের রুহানিয়াত সিনায় ধারণ করতে পেরেছে।” এ কথা শুনে আমি তো আরো স্তম্ভিত হয়ে গেলাম! আমার ভেতরে তো সে রুহানিয়াত নেই। কাজেই বইটি যথাস্থানে রেখে অন্য একটি বইয়ে হাত দিলাম। এ বইটি পূর্বের বই দুটির চেয়ে আরো আক্রমণাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করলো। সুলতান মেহমেদ ফাতিহর মতো দরাজ কণ্ঠে বলে উঠলো, “ভীরু, কায়র, বস্তুবাদী, পাশ্চাত্য সভ্যতার দাসানুদাস এ গ্রন্থে হাত দিতে পারবে না।” আমি বললাম, আমি তো পাশ্চাত্য সভ্যতার দাস নই। সে বইটি আমাকে বললো, “চুপ্ কর্, একটা রা-ও উচ্চারণ করবি নে।” আমি বললাম, “আচ্ছা কথা বলবো না, কিন্তু একটা প্রশ্ন ছিলো।” -“কী প্রশ্ন?” আমি বললাম,”তবে কীরূপে এই বইটি পাঠ করা সম্ভব?” সে বললো, “এ বইটি যদি পাঠ করতে চাস্ তবে তবে তোকে মাওলানা জালালুদ্দিন রুমীর আধ্যাত্মিকতা ও তাসাউফ কবুল করতে হবে।” আহা! এ মহান চিজ তো আমার কলবে নেই! দশটা ভেবে তারপর এ বইটিও রেখে দিলাম। এ বইটির নাম “ছিলো মওলানা রূমীর দেশে”। এটার লেখকও ফাহমিদ উর রহমান।
তারপর নিজের দুর্বলতা স্বীকার করে ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায়

 

ইউসুফ আল কারযাভীর লেখা “মুসলিম যুবকদের করণীয়” গ্রন্থটির দিকে নজর দিলাম। বইটি বললো, “এ যে আমার দিকে তাকাবেন না। আপনি আমার যোগ্য কিনা জানি না। সুতরাং না তাকানোই ভালো ।” আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কেনো তাকালে কী এমন হবে?”সে বললো, আমার দিকে নজর দিতে চাইলে প্রথমেই”ইউসুফ আল-কারযাভী কে?” এটা জানতে হবে।

 

আমি মৃদু স্বরে বললাম হায়হায় আমি তো এটাও জানি না। তারপর একে একে” দাওয়াম”, “উসূলের ধারা”, “সীরাতে নোমান” প্রভৃতি গ্রন্থের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বিদ্যুতের শক্ খেয়ে লজ্জিত হয়ে মেরিট ফেয়ার থেকে সড়ে এসে দাঁড়ালাম। এসব নানাবিধ কঠিন শর্ত থাকায় একটিও গ্রন্থ কেনা হলো না। আমতা আমতা করে জীবনের নামতা বলতে বলতে কাঁটাবনে গিয়ে পৌঁছলাম।
১৮ ই ফেব্রুয়ারি ২০২২

 

লেখকঃ কলাম লেখক 

 

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ, পরিবার ও নিজেকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য নানা ধরণের

আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিন  এবং

আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।

 

বই না কেনা বইমেলার গল্প – বই না কেনা বইমেলার গল্প -বই না কেনা বইমেলার গল্প
আরও পড়ুন