Ads

ভূমি দখলের প্রতিযোগিতা চলতেই থাকবে

এম আর রাসেল

‘ পাইলট ফিস বেহেভিয়ার ‘ পররাষ্ট্রনীতির অতি পরিচিত একটি তত্ত্ব। এর মূল কথা হল ‘Keeping close to the shark to avoid being eaten.’ অর্থাৎ হাঙ্গরের পাশাপাশি থাকো, যাতে হাঙ্গর তোমাকে খেয়ে ফেলতে না পারে।

স্ক্যান্ডেভিয়ান স্কলার Erling Bjol এর এই তত্ত্বের মধ্যে যা ফুটে উঠেছে তা হচ্ছে – পাইলট ফিস এক প্রকার সামুদ্রিক মাছ, যা হাঙ্গরের আশেপাশে থেকেও টিকে থাকার লড়াই করে এবং হাঙ্গরের শরীরের ময়লা ভক্ষণ করে। কখনই তার খাদ্যে পরিণত হয় না বা হতে চায় না।

অনুরূপভাবে বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো নানা উপায়ে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোকে খাদ্য হিসেবে পেতে চায়। শক্তিশালী কৌশল অবলম্বন না করলে এক সময় ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যায়। ফ্রেডরিক রেজেলের তত্ত্ব অনুযায়ী “রাষ্ট্র হল Living Organism যাকে অবশ্যই বৃদ্ধি পেতে হবে, না হয় তার ধ্বংস হবে”। তাঁর মতে “রাষ্ট্রসমুহের মধ্যে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য দ্বন্দ্ধের আর্ট হচ্ছে ভূমি দখলের প্রতিযোগিতা”।

এই ভূমি দখলের প্রতিযোগিতা অতীতেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। দখল প্রক্রিয়ায় নিত্য নতুন কৌশল যোগ হবে এই যা, এর শেষ নেই। বহুকাল আগে থেকেই শক্তিশালী রাজ্যগুলো দুর্বল রাজ্যগুলো দখল করে নিত অথবা আশ্রিত রাজ্যে পরিণত করতো। সেই প্রক্রিয়া এখনও বহাল আছে সৃজনশীল অবয়বে।

ভূমি দখলদারিতে এখন পর্যন্ত বিশ্বে অনন্য নজির স্থাপন করেছে ইসরাইল। পুরো ভূমি দখল করে নতুন এক দেশই বানিয়ে ফেলেছে। অন্য দেশগুলো তাদের সীমানার সাথে লাগোয়া ভূমি দখল করেছে। আর এই ইসরাইল রাষ্ট্র পুরোটাই অন্যের ভূমি দখল করে তৈরি হয়েছে। বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা ইহুদিরা এখানে একত্র হয়ে গায়ের জোরে, অর্থের শক্তিতে ভূমি দখল করেছে৷

এক সময়ের স্বাধীন রাজ্য সিকিম ১৯৭৫ সালে ভারতের খাদ্যে পরিণত হয়েছে। হায়দাবাদও স্বাধীন একটি অঞ্চল ছিল। সেই অঞ্চলও এখন ভারতের পেটে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। ১৯৪৮ সালে পরিচালিত ‘অপারেশন পোলো’ এর মাধ্যমে ভারত হায়দ্রাবাদ নিজের করে নেয়। আবার ১৯৬১ সালে পরচালিত ‘অপারেশন বিজয়’ এর বিজয় এর মাধ্যমে পতুর্গীজ শাসিত অঞ্চল গোয়া দখল করে নেয়।

কাশ্মীর এখনও ভারত-পাকিস্তানের টানাটানিতে মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। দুই দেশই কাশ্মীরকে পেতে চায়, কিন্তু কাশ্মীরি জনগণ কি চায় তা কেউ শুনতে চায় না?

রাশিয়া ক্রিমিয়া দখলে নিয়েছে, চীন জিনজিয়াং, লাদাখ দখলে নিয়েছে, অরুণাচলকেও নিজের করে পেতে চায়। এমন ভূমি দখলের উদাহরণ খুঁজতে গেলে অনেক পাওয়া যাবে।

ভূ-রাজনীতির ‘Living Organism’ তত্ত্বকে মাথায় রেখে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোর ‘ পাইলট ফিস বেহেভিয়ার ‘ তত্ত্ব স্মরণে রাখতে হবে। হাঙ্গররূপী বড় দেশগুলোর খাদ্যে পরিণত হওয়া ঠেকাতে সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় একদিন নিজস্বতা হারিয়ে পরাধীন হয়ে যেতে হবে।

লেখকঃ কলাম লেখক ও কৃষিবিদ

আরও পড়ুন-

পুরানো পথেই হাঁটবে ইসরাইলের নতুন সরকার

আরও পড়ুন