Ads

শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড থেকে সিংগারা সমুচার বিক্রেতা

।। শরীফ হোসেন ।।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় বললে ভুল হবে। এর প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত আছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। সেই ইতিহাস কে আমরা যেমন বেমালুম ভুলে গেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও সেটার উপর মাটিচাপা দিয়ে দিয়েছে। ৭১ ইতিহাস যেমন পাঠ্যপুস্তকে পরতে পরতে লেখা রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসও তেমনি লেখা থাকা থাকা দরকার ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হতো প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। তার শিক্ষা, গবেষণা আর মানের কারণেই এটা বলা হত। শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পালন করল কিছু গায়িকাদের গান আর নায়িকাদের কোমর দোলানো নাচ দিয়ে। শতবর্ষে একটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, গবেষণায় যে বিশাল অর্জন করে সেই অর্জনের কোন চিহ্ন নেই। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় একটি আন্তর্জাতিক মানের সেমিনার হয়নি, হয়নি এর কৃতি শিক্ষার্থী আর শিক্ষকদের সম্মানিত করার প্রক্রিয়া। বিশ্বের প্রতিপ্রান্ত হতে বিশ্ববরেণ্য গবেষকদের নিয়ে কোন আয়োজন হয়নি। হবে কি করে বর্তমান ভিসি কে একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে বলেছিল, এখানে ১০ টাকায় এক কাপ চা,একটা সিঙ্গারা এবং এর সমুচা পাওয়া যায় এটাই তো বড় অর্জন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অর্জন জ্ঞান নেই সে বিশ্ববিদ্যালয় কি আশা করে।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি ছিল পি জে হার্টগ। আমরা মুসলিমরা খুব আবেগ নিয়ে বলি ব্রিটিশদের কূটচালে কারণে একজন ইহুদী হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান। প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড শব্দটি এনে দিয়েছিল এই পি জে হার্টগ। তার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড জানেন? তিনি ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির রসায়নের প্রফেসর। ১৭ বছর কাজ করেছেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রেজিস্টার হিসেবে। এই সময় তার নাম ছিল বিশ্বজোড়া। ব্রিটিশ সরকার তার মত একজন যোগ্য লোককে সেই সময় চার হাজার টাকা বেতন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি নিয়োগ করেছিল।

তিনি আমাদের ভিসির মতো দলীয় প্রোগ্রামের চীফ গেস্ট হয়ে যেতেন না, প্রত্যেক ছাত্র পাস করার পর চাকরি পেল কিনা তারও খোঁজ রাখতেন। শিক্ষকদের এসেসমেন্ট করতেন ছাত্রদের কাছ থেকে। তিনি খুঁজে এনেছিলেন স্যার এফ রহমানের মত একজন মুসলিম শিক্ষককেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে। তারা দূরদৃষ্টি কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছিল ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর, কবি জসীমউদ্দীন,কাজী মোতাহার হোসেনে, হুমায়ূন আহমেদের মতো লোক।

আমাদের অর্জন আমরা শত শত হত্যা মামলার আসামি তৈরি করেছি এখানে। পিজে হার্টগ এর মত ইহুদি এখন নাই। আমাদের প্রিয় দ্বীনদার মুসলিম বিশ্বের আদর্শ ভিসিরা দলীয় প্রোগ্রামের চিফ গেস্ট হয়ে যান, কেউবা বিশ্ববিদ্যালয় অর্জন বলতে বোঝায় চা-সিঙ্গারা আর সমুচা খাওয়াকে।

শতবর্ষে এসে যখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা গবেষনা নিয়ে গর্ব করবে সেখানে শতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় দেখাচ্ছে কিছু নারীর কোমর দোলানো নাচ।

শরীফ
৪ ডিসেম্বর ২০২১
পশ্চিম ধানমন্ডি

লেখকঃ কলাম লেখক ও ব্যাংকার 

আরও পড়ুন- স্কুল কি শুধু পুঁথিগত বিদ্যার জন্য ?

আরও পড়ুন