Ads

হাল আমলে মানুষের জীবন ও সামাজিক নিরাপত্তা

হাসান আল ফেরদৌস

রাসূল (সাঃ) এর বিদায় হজ্জের ভাষণের পূর্বে নাযিল হয় ইসলামের পূর্ণাঙ্গতা ঘোষণাকারী আয়াত,

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম। তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত বা অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।” (সূরা আল-মায়িদা: ০৩)

এ ঘোষণার পরে তিনি গোটা উম্মাহর উদ্দেশ্যে তাওহীদ; মানবজাতির ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব; নারীর মর্যাদা এবং সুদসহ সকল ধরণের জুলুমের বিরুদ্ধে আদালতের ইশতেহার ঘোষণা করেন। সেই সাথে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেন, “বিনা অপরাধে মানুষকে হত্যা করো না,” যে কথাটি আজ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যার দ্বারা মূলত তিনি মানুষের সামাজিক, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দিকে ইঙ্গিত করে সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন এবং বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। এ নিরাপত্তা ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

আমরা একটু আকল খাটালেই বুঝতে পারব একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য কয়েকটি বিষয় অত্যাবশ্যকীয়। তা হলো-
• আদালত
• রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নিরাপত্তা
• ন্যায় ভিত্তিক অর্থনীতি
• চিন্তা ও ধর্মের স্বাধীনতা

রাষ্ট্রব্যবস্থায় এসবের উপস্থিতি না থাকলে রাষ্ট্রব্যবস্থা তার কার্যকারিতা হারাবে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে এবং অধিকারবঞ্চিত হওয়ার কারণে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হবে। এ বিষয়সমূহ একটি অন্যটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং রাষ্ট্রের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য এসবের মাঝে সমন্বয় জরুরী। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে একটি শিশুর সাথে এবং বিষয়সমূহকে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে তুলনা দেওয়া যায়। একটি শিশু জন্মের পর থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমান অনুপাতে বেড়ে উঠা প্রয়োজন, তা না হলে আমরা তাকে সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ বলতে পারব না, তার ক্ষেত্রে ‘প্রতিবন্ধী’ পরিভাষা প্রয়োগ করব। শুধু নাক বড় হলো, কিন্তু চোখ, অক্ষিগোলক, চিবুক, মুখমণ্ডল বড় হলো না– এ অবস্থায় ওই শিশুটি যেমন সুস্থ বা স্বাভাবিক নয়, তেমনি কোনো রাষ্ট্রের এ সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বরূপ বিষয়াদি সমানুপাতে বিকশিত না হলে সে রাষ্ট্রও প্রকৃতপক্ষে স্বাভাবিক কোনো রাষ্ট্র নয়। মানব সন্তানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী পরিভাষা ব্যবহার করলেও রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে কী ব্যবহার করা যায়!

ইসলামী সভ্যতার স্বর্ণালী শাসনামলকে পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই, সে সময় এ বিষয়সমূহের প্রতিটিই একে অপরের সাথে সুসমন্বিত অবস্থায় কার্যকরভাবে উপস্থিত ছিল। তখন আদালত, অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে মানুষকে ভাবতে হতো না। খলিফার দ্বারাও যদি কোনো ধরণের অপরাধ সংঘটিত হতো, কাজী তথা বিচারপতি তার ইনসাফ ভিত্তিক বিচার করতেন। এ সভ্যতার রাষ্ট্রব্যবস্থায় সার্বিক সমন্বয়ের চিত্র ছিল বৃত্তাকার, অর্থাৎ শাসকই সব নিয়ন্ত্রণ করত না, শিক্ষাব্যবস্থা, সেনাবাহিনী, বিচার বিভাগ, মন্ত্রিপরিষদ– কেউ কারো উপর একতরফাভাবে কর্তৃত্বশীল ছিল না। প্রতিটি খাত একে অপরের সাথে সমন্বয় সাধন করত। হ্যাঁ, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা যে একদমই ছিল না তা নয়, কিন্তু তার বিস্তৃতি ছিল নিতান্তই নগণ্য। সমন্বয় ও বাস্তবায়নের ফলশ্রুতিতে সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার নজির ছিল ইসলামী সভ্যতা।

এখন যদি সামাজিক নিরাপত্তার প্রেক্ষিতে ৯০% মুসলমানের দেশ আমাদের বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি লক্ষ্য করি, তবে কী দেখতে পাব?

প্যারিস ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব হিউম্যান রাইটস এর তথ্য মতে ২০০৯-২০১৮ সালে গুমের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ৫০৭ জন। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী ২০০৮ সাল থেকে গুমের শিকার হয়েছেন ৬০৪ জন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য মতে এ সময়ে গুম কেন্দ্রিক দায়ের করা অভিযোগের সংখ্যা ১০০০ টি। আইন ও সালিশ কেন্দ্র, লাইফগেট ম্যাগাজিন, বিবিসি এর তথ্যমতে ২০০৯-২০২১ সালের মধ্যে ক্রসফায়ারে মারা গেছেন ২৬৭৬ জন, পুলিশি টর্চারে মারা গেছেন ৩৭৬ জন এবং পুলিশি হেফাজতে মারা গেছেন আরো ৬৯৫ জন। গুম-খুনের শিকার অনেককে খুঁজেও পাওয়া যায়নি, কারো লাশ পাওয়া গেছে, কাওকে বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে, আবার কাওকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। প্রতিদিনই পাওয়া যাচ্ছে অজ্ঞাত লাশ।

এসব তো সংস্থাগুলোর হিসাব, পত্র-পত্রিকা বা সরকারি উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে; কিন্তু সত্যিকার সংখ্যা যে এর চেয়ে অনেক বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

যখন প্রশাসন কোনো নাগরিককে তার স্বার্থে হত্যা করতে চায় বা হত্যা করে, আমাদের দেশের সংবিধান তার বৈধতা দেয়। রাষ্ট্রই যখন এ ধরনের বিচার বহির্ভূত বা অন্যায়ভাবে হত্যায় জড়িত, এর চেয়ে বেশি সামাজিক অনিরাপত্তা আর কী হতে পারে?

প্রশ্ন উঠতে পারে রাষ্ট্র কীভাবে এটি করছে বা কেন করছে? আমাদের পূর্বসূরিদের আমলে, অর্থাৎ ইসলামী সভ্যতার শাসনামলে তো এসব ছিল না! তবে মুসলিম প্রধান দেশ হয়েও কেন আমাদের এ করুণ অবস্থা?

মূলত ৫০ বছর আগে আমরা স্বাধীন হলেও আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামো সামগ্রিকভাবে স্বাধীন নয়, অর্থাৎ আমাদের নয়। এটি হলো ২০০ বছর আগে তৈরি হওয়া ব্রিটিশদের বা ঔপনিবেশিক শাসনামলের রাষ্ট্রীয় কাঠামো। এ ঔপনিবেশিক শাসনামলের রাষ্ট্রীয় কাঠামো রাষ্ট্র বা সামাজিক ভিত্তিক যারা নিয়ন্ত্রণ করবে, তাদেরকেই সন্ত্রাস করার সুযোগ করে দিয়েছে। বৃটিশরা তাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা, শোষণ ও খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে এখানে নিজেদের তৈরি আইন প্রণয়ন করে এবং তার আদলে একটি আদর্শিক ভিত্তিও প্রতিষ্ঠা করে। এটির অন্যতম একটি উদাহরণ হলো তারা জমিদারদের বই উপহার দিত না, বন্দুক উপহার দিত, যেন তারা জনগণকে ভীতির মধ্যে রাখতে পারে। বৃটিশরা শুধু এ রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি ও বাস্তবায়ন করেই ক্ষান্ত হয়নি, পরবর্তীতে তারা এখান থেকে চলে যাওয়ার সময় তাদের অনুগত শাসক শ্রেণি রেখে যায়, যারা বৃটিশ আইনের আদলে রাজনৈতিক ধারা, পার্লামেন্ট পরিচালনার পদ্ধতি, সংস্কৃতি গড়ে নিয়েছিল; বর্তমানে যেটির মধ্য দিয়ে আমরা চলছি। অর্থাৎ পাশ্চাত্যের তৈরি করা সে মূলনীতি এখনও বিদ্যমান, শুধু মডেলের কিছু পরিবর্তন হয়েছে। তখন শোষণ চলত খাজনাসহ নানা নামে, এখন সেটি নতুন মোড়কে পাচার, গুম-খুনসহ নানাবিধ উপায়ে পরিচালিত হচ্ছে।

সে সময় শোষণের বিরোধীতাকারীদের একভাবে নির্যাতন, হত্যা করা হতো। কালের বিবর্তনে বর্তমানেও শোষণের বিরোধিতাকারীদের নতুন পদ্ধতিতে হত্যা-নির্যাতনের সম্মুখীন করা হচ্ছে। বর্তমানে মানুষকে ভয় দেখিয়ে শাসন করার নীতি, অর্থাৎ পুলিশি রাষ্ট্র কায়েম হয়েছে, যা আমাদের সভ্যতায় ছিল না। এখন এমন এক অবস্থা যে, ইসলামী সভ্যতার সেই রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা আজ কেউ কল্পনাও করতে পারছে না। ঔপনবেশিক পন্থায় ভয় দেখিয়ে আইন মানানোর নিয়ম ও ক্রমাগত জুলুমের মাধ্যমে একটি ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে শোষণকে অব্যাহত রাখা হচ্ছে, যার কারণে প্রতিবাদ করার সাহসও কেউ পাচ্ছে না। ফলশ্রুতিতে আদালত ও ইহসানের পরিবর্তে ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে। (আদালত ও ইহসান পরস্পর সম্পৃক্ত। পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রগুলোর আদালত ও সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা আমাদের তুলনায় কিছুটা ভালো, বলা যায় মন্দের ভালো। মন্দের ভালো বলার কারণ ইসলামী সভ্যতার সামনে এগুলো কিছুই নয়। এ রাষ্ট্রসমূহ আমাদের দেশের নাগরিকদেরও নিরাপত্তা দেয় চিন্তা ও মেধার বিকাশ ঘটানোর জন্য। কারণ যেখানে নিরাপত্তা নেই, সেখানে চিন্তা ও মেধার বিকাশ হয় না। তাই তারা নিরাপদ রাষ্ট্র কাঠামো অব্যাহত রাখতে চায়। আবার তাদের আইনের শাসন কিছুটা বলবৎ থাকলেও ইহসান অনুপস্থিত, ফলে তাদের সমাজ কাটখোট্টা জাতীয় এক যান্ত্রিক সমাজে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে আমরা আদালত ও ইহসান দু’টোই চাই এবং আমাদের সভ্যতায় সেটি ছিল।)
আর এ ভীতির বিপরীতে কার্যকরী কোনো প্রতিবাদ বা আলাপ তো নেই-ই, উল্টো তিনটি শ্রেণি তৈরি হয়েছে।

• একটি শ্রেণি সব বুঝে-শুনেও নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে, অর্থাৎ একটি স্বার্থপর, পরিবারের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকা যুব শ্রেণি তৈরি হচ্ছে।

• আরেকটি শ্রেণি আকস্মিক সমাধান খুঁজছে, যারা মূলত সংস্কৃতি, সাহিত্য, মিডিয়ার মাধ্যমে বৃটিশদের তৈরি করা সুপার হিরোর পদ্ধতিতে কাল্পনিক সমাধান খোঁজার চিন্তার ধারক-বাহক। আবার ধর্মীয় ভাবাবেগ থেকে চিন্তা করলে এ শ্রেণি আকস্মিক সমাধান খুঁজছে ইমাম মাহদী, মহাপ্রলয়ের মধ্যে।

• অন্যদিকে উগ্রবাদী একটি শ্রেণি সৃষ্টি হচ্ছে, যারা কোনো ধরনের মূলনীতি, মেথডোলজি অনুযায়ী নয়; সমাজ এবং রাষ্ট্রকে বুঝে নয়; বরং ধার করা কট্টরপন্থার মাধ্যমে সমাধান করতে চায়।

এসবের মাধ্যমে কার্যত কোনো সমাধান হয় না, উল্টো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা ক্রমাগত বাড়ছেই।

হেফাজত নেতার মৃত্যু, বাম নেতার মৃত্যু, ঢাবি শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার, শরীয়তপুরে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারে হত্যা, চট্টগ্রামে স্কুল বালককে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তার লাশ উদ্ধার বা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফলে কিছুকাল আগে আওয়ামী লীগ নেতা একরামুলকে হত্যা– প্রত্যেকটি বিষয় সামাজিক নিরাপত্তাকে ভয়াবহভাবে লংঘন করছে; অথচ স্থায়ী কোন আলাপ, প্রতিবাদ বা সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেই!

কিন্তু কেন?

মানুষের জীবন কি এতই সস্তা হয়ে গেলো? হোক না সে অন্য ধর্মের, পথের কিংবা দলের।

আবার শোষণকারীরা আরেকটি কাজ করে, তা হলো সম্মতি জ্ঞাপন করে হত্যা! যেমন-

ইসলামপন্থীরা মারা গেলে শাহবাগীরা উল্লাস করে, আবার বামপন্থীরা মারা গেলে ভিন্নপন্থীরা প্রতিবাদ করে না! অর্থাৎ যখন আমাদের বিপরীত পক্ষের কাউকে হত্যা করা হয়, তখন আমরা উল্লসিত হই। ইসলামপন্থীদের হত্যা করতে শাহবাগ তৈরি করা হয়, আবার শাহবাগীরা খুন হলে আমরা বলি, “নাস্তিক মারা গেছে!” বিপরীত দলীয় কেউ অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে মারা গেলে আমরা তা নিয়ে আলাপ করি না, প্রতিবাদ করি না, বরং উল্লাস করি। কিন্তু দলীয় এমন কোন্দলে মারা যাওয়া শ্রমিক, গরীব ছাত্রনেতারা কি মানুষ নয়? তাদের কি পরিবার নেই? কোন্দলের কারণে মানুষ কেন মরবে?

রাষ্ট্রের আইন, প্রশাসন থাকতে মানুষ মারার সংস্কৃতি কেন তৈরি হবে? যে আজ কোন্দল করে নিজ দলের লোক মারতে পারে, সে দেশের বাকি সকলকেই মারতে পারে! এমন ঘৃণিত হত্যার সিলসিলার ব্যাপারে আমরা যথাযথ উদ্যোগ নিই না, এসব নিয়ে যৌক্তিক আলাপ হয় না, সামাজিক বিবেক কথা বলে না!

সামগ্রিকভাবে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব এবং কথিত বিরোধী শক্তির মানুষদের হত্যা ও ক্ষয়ক্ষতিতে আত্মিক প্রশান্তি লালন করার মানসিকতার ফলস্বরূপ সামাজিক নিরাপত্তার মৌলিক মূলনীতি যে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের সকলের জন্য প্রয়োজন– এ বিষয়টিকে আমরা দূরে ছুঁড়ে দিচ্ছি। আমাদের উদ্বেগ, ভীতি, হতাশা আজ আত্মবিশ্বাসহীনতার জন্ম দিচ্ছে। দেশকে নিয়ে সৃষ্ট হতাশার কারণে দেশে না থেকে অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণের মানসিকতা সৃষ্টি হচ্ছে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের অবশ্যই রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিটি বিষয় তথা আদালত, ন্যায় ভিত্তিক অর্থনীতি, মত ও ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সামাজিক নিরাপত্তার সমন্বিত সংস্কার করতে হবে। সকল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি এসবকে কেন্দ্র করেই হওয়া উচিৎ।

আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণে উক্ত কথাটি বলে আমাদের শুধুমাত্র আহ্বান-ই করেননি, এটি ইসলামের একটি মূলনীতিও। যেমন- আল-ফারাবিও বলতেন, “যেখানে নিরাপত্তা আছে, সেখানে গিয়ে জ্ঞানচর্চা করো।” কারণ জ্ঞানীরা তৈরি না হলে সমাজ পরিবর্তন হবে না। কিন্তু সমাজের যে অবস্থা, যেখানে নিরাপত্তাই নেই, সেখানে কীভাবে জ্ঞানী বা মেধাবী শ্রেণি তৈরি হবে? এজন্যই ইব্রাহিম (আঃ) বার বার ‘বালাদিল আমিন’ এর জন্য দোয়া করেছেন।

সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের সভ্যতা মানুষ কেন্দ্রিক, ইসলাম সবার আগে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেছে। অথচ আমাদের বেহাল সড়কব্যবস্থা, বীজ ও খাদ্যনীতি, চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ নানা কারণে মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। সামাজিক অনিরাপত্তা, রাজনৈতিক অস্থিরতায়ও লাশ হচ্ছে কত প্রাণ!

একটি রাষ্ট্র পারে সুন্দর একটি বসুন্ধরা উপহার দিতে, কিন্তু রাষ্ট্রই যদি অনিরাপত্তার বার্তা বহন করে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গোটা মানবসভ্যতা।

মানবতার মুক্তির দূত রাসূল (সাঃ) তাঁর সাহাবীদের এমন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখাতেন, যেখানে সানা থেকে হাদরামাউত পর্যন্ত একজন নারী একাকী হেঁটে যেতে পারবে, হিংস্র পশু ছাড়া অন্য কোনো কিছুর ভয় সে পাবে না।এভাবেই তিনি সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের অঙ্গীকার দিতেন।

তাই আজ ধর্ম, দল, পন্থাসহ সকল কিছুর উর্ধ্বে উঠে মানুষ হিসেবে মানুষের নিরাপত্তার দাবি হোক জনগণের মুক্তির দাবি। অন্যথায় আজ হোক বা কাল, আমরা সকলেই এ ফাঁদে নিক্ষিপ্ত হব।

লেখকঃ কলাম লেখক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক,ইসলামী চিন্তা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট

লেখকের পূর্বে প্রকাশিত লেখা-

ইসলামী সভ্যতায় শিক্ষাপদ্ধতি ও পাশ্চাত্যের অক্সফোর্ড ধারা

 

আরও পড়ুন