Ads

থমকে যাওয়া দিন

সেলিম আহমেদঃ

আশা নিরাশার ভাবনার দোলাচালে রাত পেরিয়ে দিন ; আবার  দিন পেরিয়ে রাত কিভাবে যে সময় অতিক্রম করছি তার কোন হিসাব নেই । যতই দিন যাচ্ছে ততই আতংকিত হচ্ছি।

এখন মোবাইলের  স্ক্রিনে চোখ রাখলেই লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন  এই শব্দগুলোই নজরে পড়ে। অন্য কোন বিষয়ের উপর  প্রায়োরিটি নেই।
সারা বিশ্বের মানুষ আজ  সকল জাগতিক ব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে মহামারী  করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এর প্রতিকার এবং প্রতিশোধক নিয়েই ব্যস্ত। জানিনা,কখন সে সুখবর আসবে!!

প্রতিদিন  মৃত্যুর সংখ্যা পড়ে শিউরে উঠি।
চারিদিকে যেন লাশের মিছিল এর ছবি , আর বিভিন্ন স্থান থেকে শোকার্ত মানুষের কান্নাজড়িত ভিডিও বার্তাগুলি কানে বাজে।
মনের ভেতর ক্রমশই শংকা ঘনীভূত হচ্ছে অজানা আশংকায় ৷ জানিনা পৃথিবীর এ মানবজাতির ভবিষ্যৎ কোনদিকে এগুচ্ছে।
প্রবাসে থাকায় পরিবারের  সদস্যদের জন্য সব সময় উৎকন্ঠায় থাকতে হয় যদি ও এরা আশ্বস্ত করে আমরা ভালো তোমাদেরকে নিয়ে আমাদের সকল ভাবনা।  ভিডিও কল ওয়াটস্যাপে যোগাযোগ হয় নিয়মিত। দেশের এবং সারা বিশ্বের সংবাদের জন্য সর্বক্ষণ  টিভি, অনলাইন পত্রিকায়  চোখ রাখছি।

দুই দিন আগে  সংবাদে  দেখলাম যুক্তরাজ্যের  প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে ইন্টেন্সিভ কেয়ারে নেওয়া হয়েছে। এর আগে আক্রান্তের সংবাদ জেনেছিলাম অস্ট্রেলিয়ার গৃহমন্ত্রী,  জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল,  স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী, কানাডার প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী এবং বিশ্বের সবচেয়ে
সুরক্ষিত ইসরায়েলের  প্রধানমন্ত্রী নেতা নেয়াহু ও ঠেকাতে পারেনি এ মরণঘাতী ভাইরাসকে।
হয়তো সৃষ্টিকর্তা মানুষকে  বুঝবার সুযোগ করে দিয়েছেন। । তুমি যতই শক্তিশালী হও না কেন এখানে সবাই শুন্য।

আরব আমিরাতে  আজ পর্যন্ত দুই হাজারের অধিক আক্রান্ত ।  আমাদের সারজায় চলছে সান্ধ্যকালীন কার্ফু সন্ধ্যা ৮ থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত।
জানিনা, কখন পুরোদমে লকডাউন করে।
আলহামদুলিল্লাহ, এখনো সুস্থ আছি তবে সবার মতো মৃত্যুভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে সারাক্ষণ।একটু দূর্বল লাগলে আৎকে উঠি আবার কেউ পাশ দিয়ে কাশি দিলে ও থমকে দাঁড়িয়ে যায়। মনে হয় এই বুঝি করোনা ভাইরাস এসে গেল।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক প্রবাসী আমার এক বন্ধু  জানাচ্ছিল বাঙালীদের ফিউনারেল কমিটিতে থাকার কারণে সবকিছু তার তদারকি করতে হয়। এখন এমন অবস্থা হয়েছে  মোবাইল বেজে উঠলেই বুক ধড়ফড় করে উঠে যেন এইবুঝি কারো মৃত্যু সংবাদ এলো।

অনেকদিন মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া হয়না। আমার স্টুডিও আর ফ্ল্যাটের মাঝপথেই মসজিদ হওয়াতে আসা যাওয়ার পথেই নামাজ আদায় করা হয়। এখন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্তে  আজান হয় কিন্তু মসজিদের দুয়ার বন্ধ। আজানে মুয়াজ্জিন বলে
“আসসালাতু ফি বুয়ুতিকুম “অর্থাৎ বাড়িতে নামাজ পডুন।
আল্লাহতায়ালার কাছে  কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি  যেন আমাদেরকে  ক্ষমা করে আবার সারা মানবজাতিকে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেন।
অপেক্ষায় আছি কখন মুয়াজ্জিন বলবে….
নামাজের জন্য এসো।

লেখকঃ প্রবাসী বাংলাদেশী।

আরও পড়ুন