Ads

পরিবেশ ভাবনাঃ কলমের চারা কতোটা উপকারী?

মাসুদ আলম

গত প্রায় ১০ বছর ধরে একটি বিষয় লক্ষ্য করছি যে, বাংলাদেশের শহর বন্দর ও গ্রামাঞ্চলের সর্বত্রই মানুষের মাঝে ফলদ ও কাঠ গাছ লাগানোর প্রবনতা বেড়েছে। বিষয়টি খুবই ভালো লাগার মতো। শহরাঞ্চলে ফলের চারা বেশি লাগাতে দেখা যায়। এবং সেই চারা গুলোর প্রায় শতভাগই কলমের চারা (Grafting plant) , যেগুলো লাগানোর বছর থেকেই ফল ধরার জন্য প্রস্তুত থাকে। শহরাঞ্চলে জায়গার স্বল্পতায় কলম চারা লাগানোটাই বাস্তবতা, কেননা এসব চারার অধিকাংশই লাগানো হয় টবে, ছাদ বাগানে কিংবা খুব স্বল্প পরিসরের খোলা জায়গায়।
কিন্তু গ্রামাঞ্চলে মানুষের মাঝে কলমের ফলদ চারা লাগানোটা আমার মতে দুঃখজনক! এসব কলমের চারা যদিও দ্রুত ফল দেয় তথাপি আমি গ্রামের খোলা উন্মুক্ত জায়গায় কলমের চারা লাগানোর পক্ষপাতি নই! তার কারণ গুলো হল-

১) এসব গাছ বীজ থেকে বেড়ে ওঠা গাছের মতো শক্তিশালী হয়না ফলে ঝড় তুফানে অল্পতেই ভেঙে যায়। প্রায়শই এগুলোকে লাঠিসোঁটা গেঁথে সোজা রাখতে হয়। অর্থাৎ এগুলোর আশ্রয় দেওয়ার (shelter tree) ক্ষমতা হয়না।

২) একটি মাতৃগাছ ফল দিতে দেরি করলেও (মূলতঃ তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হলেই ফল দেয়) যখন ফল দেওয়া শুরু করে তখন ২০-৪০ টা কলম চারার চেয়েও বেশি ফল দেয়।
৩) কলম চারা গুলোতে কখনোই পাখি বাসা তৈরি করতে পারেনা। অর্থাৎ এগুলো nesting tree নয়।

৪) এগুলো ছায়া প্রদানকারী গাছ নয় এবং এগুলো থেকে আসবাবের কাঠ আশা করা যায়না।

৫) কলম চারার অধিকাংশই মাতৃগাছের মতো দীর্ঘজীবি হয়না।
৬) কলম চারার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয় এবং এগুলো থেকে ভালো ফলন পেতে প্রায়ই কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। অথচ মাতৃগাছের পরিচর্যা না করলেও কম-বেশি ফলন পাওয়া যায়।

৭) কলমের চারা গুলোর (আম লিচু পেয়ারা বড়ই ইত্যাদি) বেশির ভাগই বিদেশি জাতের। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, ফল গবেষণা ইন্সটিটিউট কিংবা বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি থেকে যেগুলোর অধিকাংশেরই কোন অনুমোদন নেই। ফলে একসময় এগুলো এদেশের স্থানীয় জাতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড কানাডা যুক্তরাষ্ট্র সহ পৃথিবীর অনেক দেশে অনুমোদন বিহীন কোন জীবন্ত গাছপালা এবং কোন প্রকার বীজ প্রবেশ করতে পারেনা। স্থানীয় প্রজাতির উদ্ভিদের তথা কৃষির জন্য হুমকি হতে পারে বলে তারা এগুলোর প্রবেশ কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

৮) বিদেশি জাতের ফলের চারার প্রতি অতিমাত্রায় আগ্রহের ফলে সুদূর ভবিষ্যতে এদেশে একদিন স্থানীয় অনেক জাতের ফল গাছ হারিয়ে যেতে পারে, যা হবে খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

তাই আমি সবাইকে আহ্বান জানাবো, আমরা যারা এই বর্ষায় গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন ফলমূল ও কাঠ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করছি, আমরা শুধুমাত্র কলমের ফলের চারা ই রোপণ করবোনা, যতো বেশি সম্ভব বীজ থেকে জন্মানো (মাতৃগাছ) গাছ বা চারা লাগাবো।
এতে করে, ফলন বেশি পাবো, ছায়া পাবো, পাখি বাসা বাঁধবে সেই গাছে, সবুজ হবে এই দেশ আর বাঁচবে আমাদের পরিবেশ

লেখকঃ প্রবাসী লেখক

আরও লেখা পড়ুন-অপরাজিতা

আরও পড়ুন