রুদ্র ফারাবীঃ
ঐতিহাসিক নানকার দিবস আজ ১৮ আগস্ট। সিলেট অঞ্চলে জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে গৌরবময় কৃষক আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন। প্রতিবছর দিবসটি পালন করা হয় অধিকার আদায়ের চেতনাদীপ্ত প্রতীক হিসেবে। জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ধারাবাহিকতায় ১৯৪৯ সালের এই দিনে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার শানেশ্বর গ্রামে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন পাঁচ কৃষক। এরও আগে এই আন্দোলনে প্রাণ হারান আরেকজন কৃষক। নানকার বিদ্রোহের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত শানেশ্বর গ্রামের সুনাই নদী তীরবর্তী নানকার স্মৃতিসৌধে রয়েছে।
‘নান’ শব্দের অর্থ ‘রুটি’। রুটি দিয়ে অর্থাৎ খাবার দেওয়ার বিনিময়ে কেনা গোলাম। এরাই নানকার। সামন্তবাদী এই ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল সিলেট অঞ্চলে। নানকার প্রজারা জমিদারের দেওয়া বাড়ি ও সামান্য কৃষিজমি ভোগ করত। কিন্তু ওই জমি ও বাড়ির ওপর তাদের কোনো মালিকানা ছিল না। এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বাঁধলে আন্দোলন সংগঠিত করে কমিউনিস্ট পার্টির পৃষ্ঠপোষকতায় কৃষক সমিতি। প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা কমরেড অজয় ভট্টাচার্য।
আন্দোলন দমনের চেষ্টার এক পর্যায়ে ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট সরকারের পুলিশ, ইপিআর ও জমিদারদের পেটোয়া বাহিনী শানেশ্বর ও উলুউরি গ্রামের মধ্যবর্তী সুনাই নদীর তীরে কৃষকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সূচনা ঘটে এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের। সরকারি বাহিনীর গুলিবর্ষণে নিহত হন উলুউরি গ্রামের ব্রজনাথ দাস চটই, দুই ভাই প্রসন্ন কুমার দাস ও পবিত্র কুমার দাস এবং মিয়ারী গ্রামের কটুমণি দাস। রামধন দাসের তরুণ পুত্র অমূল্য কুমার দাস সেদিন ঊরুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে পুলিশের হাতে বন্দি হয়েছিলেন। তাঁকে জেলে পুরে রাখা হয়। দুদিন পর সিলেট জেলে বন্দি অবস্থায়ই তাঁর মৃত্যু হয়। জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে এরও আগে শানেশ্বর বাজারে পুলিশ ও জমিদার বাহিনীর হাতে প্রাণ হারান রজনী দাস। ১৮ আগস্টের ওই ঘটনায় আটক করে বিচারের মুখোমুখি করা হয় ৪৯ জন কৃষক ও আন্দোলনকারীকে।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫০ সালে সরকার জমিদারি প্রথা বাতিল করলে রদ হয় নানকার প্রথা আর কৃষকরা জমির মালিকানার স্বীকৃতি পায়।
রুদ্র ফারাবী কবি ও সাহিত্যিক।