Ads

কোথায় আমার পূর্ণতা?

নাসিমা খান

অনাবরত একই শব্দ চয়ন, একই পথে যাতায়াত,পা ফেটে রক্ত ঝরছে,তববু চলছি, চলছি বন্ধুর পথে। হৃদয় উপুড়  হয়ে পড়ছে, পড়ছে যেখানে সেখানে ,উঠছি, আবার দৌঁড়াচ্ছি ।কিসের জন্য দৌঁড়াচ্ছি ? কেন দৌঁড়াচ্ছি ? সুখের জন্য তো ? ওটা পেলেই পূর্ণতা আসবে, আমার আর কোন চাহিদা থাকবে না ।ইংরেজীতে একটা প্রবাদ আছে-কাক বিদেশ ভ্রমন করে এলেও কালোই থাকে । অর্থনিতিবীদ এল রবিনসও বলেছেন একই কথা, চাহিদার সীমা নেই।

কিন্তু আমার তো সীমা ছিল ! আমার বলার, আমার চাওয়ার একটা সীমা তো আমিই রচনা করতে পারতাম । করিনি, কিছু পাইনি বলে ছুটেছি অন্ধের মত, যার তার পিছে, ভালোবাসার জন্য, নাকি ভালো লাগার জন্য ? জানবার প্রয়োজন ও বোধ করিনি ।

প্রচন্ড শীতের মাঝে বড় রাস্তার উপর বসে থাকতাম তাকে দেখবার জন্য । শুধু এক পলক দেখবার জন্য,খোলা মাঠের হুহু করে ছুটে আসা বাতাস, হিমেল অনুভূতি  কোন কিছুই সেদিন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি । প্রচন্ড রোদের ভিতর ছাতা ছাড়াই দুপুর রোদে হেঁটে  যেতাম মাইলের পর মাইল,অপেক্ষা করতাম খোলা মাঠে । ভাবতাম তাকে ছাড়া বাঁচবো না । তাকে ছাড়া কলিজা ফেঁটে গলা দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসবে , কিন্তু সেও একদিন হারিয়ে গেল, কিছুই হলো না, লোকের সামনে চিৎকার করে কাঁদতেও পারলাম না, মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বললাম -ভালোই হলো । ওই বয়সেই শরৎচন্দ্রকে বেশ ভালোভাবেই আঁকড়ে ধরেছিলাম, শরৎদার মত বললাম -দেখিলাম বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, ইহা দুরেও ঠেলিয়া দেয়, ছোট খাটো প্রেমের সাধ্যও ছিলো না আমাকে কল্যানের জন্য, মঙ্গলের জন্য এক পাও সরাইতে পারিতো ।

তখনও ভিতরে ভিতরে পূর্ণতার  তৃষ্ণা  মেটেনি, তখন অন্য ধরনের তৃষ্ণা আমার ভিতর খেলা করছে । না পাওয়ার যন্ত্রনাকে তখন একধরনের প্রতিযোগিতার পাল্লায় মাপা শুরু করেছি , আমাকে অনেক  বড় হতে হবে । এতবড়, যেন আকাশের চাঁদ ছুঁতে পারি । হায়রে হতভাগা তৃষ্ণা !! মেটে না, মেটে না স্বাধ । আকাশের চাঁদতো অনেক দুরে, কে তাকে ছুঁতে পারে ? আমি তো আর নীল আর্মষ্ট্রং,মাইকেল কলিন্স, এডউইন অলড্রিন না । কিংবা রাশিয়ার সুনিতা উইলিয়ামসও নই ।যে চাঁদ ছুঁয়ে দেখবার দু:সাহস দেখাবো কেঁবলই গুমরে মরি, না পাওয়ার হাহাকার  কঙ্কালের ভেতরের কাঠামোটাকে পুড়িয়ে একেবার খাঁক করে দেয় । তারপরও অসম্পূর্ণতাকে পূর্ণতার মায়া জালে বাঁধবার ইচ্ছা আমাকে মরিয়া করে তোলে ।

অসম্পূর্ণ স্বপ্নকে বুকে করে চলি অন্তহীন পথে । সে পথ ভেঙে দেয় আমার আশার  বালুচর, বড় হবার আশাকে তখন অন্য পথে  ধাবিত করি । লেখা পড়াকে নয়, ভালোবাসাকে পুজিঁ করে বড় হবো ?তা আবার কি করে হবে ? বুঝে উঠতে পারি না, আমি তো আর  মাদার তেরেসা কিংবা অড্রেহেপবার্ণ হতে পারবো না?  কিংবা একটু অন্য ধারার নজরুল কিংবা বেগম রোকেয়া ।তাহলে আসবে না আমার পূর্ণতা ? যাবো না আমার লক্ষ্যকে সাফল্যের পথে পৌছেঁ দিতে ?

বিয়ে নামের শব্দটা হঠাৎ করেই ঘাড়ে এসে পড়লো । সংসার করতে এসে দেখলাম, কল্পনার স্বামী আর বাস্তবের স্বামী একরকম হলো না, শুনেছি স্বামীরা দেবতা । বউ তার কাছে মধুর মত । কিন্তু এত দেখলাম কসাই খানা । হিসাব নিকাষের জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গা আর হয় না ।কে বলেছে খাতা কলমে কিংবা কম্পিউটার ডিজিটাল হিসাবকারী ? সংসারে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটাকে আমি এর থেকে বড় করে দেখতে পারলাম না ।দেনা পাওনার এমন মধুর স্থান পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আছে বলে আমার মনে হয় না ।

কেবলই মায়ের কোল মনে পড়ে, যতদিন ছোট ছিলাম, শুধু ততদিন মাই ছিলো সব থেকে নিরাপদ, দু:শ্চিন্তামুক্ত স্থান, বড় হতে হতে যে যুদ্ধ তা শুধু দেওয়ার যুদ্ধ । দিয়ে কি খাটিঁ জিনিসটি পেলাম ?সেই তো নকল, মেকি আর ফাকিঁ !

এখন শুধু চেয়ে থাকি জানালা খুলে অসীমের পানে, অনেক ছুটেছি, আর পারছি না, সে ধরা দেয় না । তুমি নেমে আসো, আমাকে নিয়ে যাও হাত ধরে । যেখানে গেলে আর অপূর্ণতার জ্বালা আমাকে তাড়া করবে না, বোধের উর্ধে থেকে, অসীমের মাঝে এসো পূর্ণতায় বিলিন হই, তবেই আমার পূর্ণতা আসবে ।

লেখকঃ কবি ও সাহিত্যিক

 

আরও পড়ুন