Ads

নির্মম ইতিহাস

-নুরে আলম মুকতা

 

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হলে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ওদের শাসন ভারতের বুকে বিস্তৃত করে দেয়। আসলে ওরা তো ছিলো মুলত দস্যু বণিক। অত্যাচারী শাসক। ঠিক ঐ সময়টিতে ইউরোপে বস্ত্র বিপ্লব হয়েছিলো। এজন্য কালারের ব্যাপক চাহিদা বেড়ে গিয়েছিলো।  বৃটিশ কোম্পানি যেখানেই নিরীহ  মানুষ পেয়েছে সেখানেই অত্যাচারের স্টীম রোলার চালিয়ে ওদের ব্যবসায়িক লাভ হাসিল করেছে। বাংলায় নীল চাষ ঐ সময় ওদের জন্য খুবই লাভজনক হয়ে উঠেছিলো।   বিনিময়ে কৃষক কিছুই পেতনা বললেই চলে। ইতিহাস ঘেটে দেখা গিয়েছে, বিঘা প্রতি কৃষক পেত দুই টাকা আর বৃটিশরা পেতো নয় টাকা। কি বিস্তর ফারাক ! এজন্য কৃষক ঐ জমিতে আর অন্য কোন ফসল চাষাবাদ করতে পারতো না। ফলে ক্ষুধা আর দারিদ্র্যতায় নিস্পেশিত হয়ে বাংলার কৃষক কুল সর্ব শান্ত হয়ে গিয়েছিলো। এ নির্মমতার সামান্যই আমাদের জানা আছে। বিখ্যাত নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র তাঁর নীল দর্পন নাটকে এর বিভৎসতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন। বৃটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার মালদহ জেলায় উৎকৃষ্ট মানের নীল চাষ হতো। আমাদের চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলা মালদহ জেলার ইংরেজ বাজার থানার অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ভোলাহাট উপজেলার থানা হেডকোয়ার্টারের পুলিশ ষ্টেশনের পুরাতন ভবনটি ছিলো নীল কুঠি। তার পাশে বাংলাদেশ সেরিকালচার বোর্ডের জোনাল হেড কার্যালয় কেন্দ্রে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও রাখা আছে নীল সিদ্ধ করার বৃটিশ নির্মিত বয়লার আর চিমনী।

নীল সিদ্ধ করার জন্য বয়লার। স্থানঃ ভোলাহাট রেশম বীজাগার।
নীল সিদ্ধ করার চুল্লি থেকে ধোঁয়া নির্গত হওয়ার চিমনী।

পাশে দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি ভগ্নপ্রায় শিবমন্দির আর কালী মন্দির।

ভগ্নপ্রায় শিব মন্দির।

ভোলাহাট উপজেলা সদরে এগুলো অবস্থিত। ইতিহাস আজও কথা বলে কৃষকের হৃদয় ক্ষরণের আর হাহাকারের। আমার পূর্বপুরুষের রক্তাক্ত ইতিহাসের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো বাংলায় নীল চাষ।

ঐতিহাসিকদের মতে, ১৭৬৯ সাল থেকে এ নীল চাষ ১৮৮৮ সাল পর্যন্ত বাংলার কৃষকদের ওপর চলেছিলো এ নির্মমতা। কৃষকদের নীল বিদ্রোহ তাই আমাদের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছিলো। বাংলাদেশের এ এক অন্যতম ইতিহাস। কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লার সাথে সুর মিলিয়ে বলি,
আমি আমার পূর্ব-পুরুষের কথা বলছি।
তাঁর করতলে পলিমাটির সৌরভ ছিল
তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল।

লেখক: কবি, সাহিত্যিক ও সহ-সম্পাদক, মহীয়সী।

আরও পড়ুন