।। শাহ্ মোহাম্মদ নিয়ামত উল্লাহ্।।
পূজা মণ্ডপে আমন্ত্রণ পেয়ে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির (একটি ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠন) সংগীত পরিবেশন নিয়ে নেট-দুনিয়া থেকে শুরু করে গলির মুখের চা-দোকান পর্যন্ত আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। এটা সর্বজন বিদিত যে, তারা (চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি) কিন্তু পূজা মণ্ডপে (চট্টগ্রাম জেএমসেন হলে) জোর করে যায় নাই, জোর করে গায়ও নাই। আমন্ত্রণে গিয়েছে, অনুরোধে গেয়েছে। তারা যে গান দুটো গেয়েছে দুটিই সম্প্রীতির গান। ওই গান দুটি ওখানে উপস্থিত সবার করতালি ও বাহবা পেয়েছে, যা খবরে জানা গেছে এবং ভিডিয়োতেও দেখা গেছে। যারা সমালোচনা করছেন, তারা গানের লাইনগুলো ঠিকমতো শুনেছেন বা পড়েছেন কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
দেখা যাক তাদের গাওয়া গান দুটিতে আসলে কি বলা হয়েছে—
এক
আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম
গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান
মিলিয়া বাউলা গান ঘাটুগান গাইতাম।।
বর্ষা যখন হইত গাজির গাইন আইত
রঙ্গে-ঢঙ্গে গাইত আনন্দ পাইতাম
বাউলা গান ঘাটুগান আনন্দের তুফান
গাইয়া সারিগান নাও দৌড়াইতাম।।
হিন্দু বাড়িন্ত যাত্রাগান হইত
নিমন্ত্রণ দিত আমরা যাইতাম
কে হবে মেম্বার কে হবে গ্রামসরকার
আমরা কি তার খবর লইতাম।।
বিবাদ ঘটিলে পঞ্চাইতের বলে
গরিব কাঙালে বিচার পাইতাম
মানুষ ছিল সরল ছিল ধর্মবল
এখন সবাই পাগল-বড়লোক হইতাম।।
করি ভাবনা সেদিন আর পাব না
ছিল বাসনা সুখী হইতাম
দিন হতে দিন আসে যে কঠিন
করিম দীনহীন কোন পথে যাইতাম।।
আরও পড়ুন-
দুই
শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম
বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান
হিন্দু বলো বৌদ্ধ বলো কিংবা খ্রিস্টান
সবাই হেথা শান্তি পাবে পাবে রে সম্মান
নির্ভয়ে নিজ নিজ ধর্ম
পালন করবে নিজ কর্ম
সব ধর্মের সব মানুষের
ইসলাম দিল সেই সম্মান ॥
ভিন ধর্মের কারো উপরে যদি
কোন মুসলিম করে অবিচার
শেষ বিচারে রাসুল নিজে
দাঁড়াবে বিপক্ষে তার
রাসুলের শাসনামলে
খোলাফায়ে রাশেদার কালে
ভিন ধর্মের লোক সব চেয়ে সুখে ছিল
ইতিহাস গাইছে গান।
দ্বীন ইসলাম সার্বজনীন
সব মানুষের তাই
চন্দ্র সুরুজ সবার তরে যেমন
আলো ছড়িয়ে যায়
এসো সেই ইসলাম বুঝি
সত্য ন্যায়ের পথ খুঁজি
বিশ্ব মানুষের মুক্তির শেষ পথ
বিপ্লব ইসলামী বিপ্লব।
উপরের দু’টি গানের মধ্যে সমালোচকদের আপত্তি দ্বিতীয় গানটা নিয়ে। অথচ এর আহবান কত চমৎকার দেখুন— (উপস্থিতি নিয়েও তাদের আপত্তি আছে, তার জবাবও এখানে খুঁজে পাবেন, আশা করি)
এই গানে মুসলিমদেরকে অমুসলিমদের ধর্ম পালনের অধিকার প্রতিষ্ঠার আহবান করা হয়েছে। সনাতনীদের আমন্ত্রণে পূজায় উপস্থিত হয়ে এই গানের মাধ্যমে বলা হয়েছে, আমরা মুসলমানদের পক্ষ হতে জানাচ্ছি— আপনাদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ও অধিকার আমাদের ইসলাম দিয়েছে। সুতরাং, আপনাদের ধর্মপালন বাধাগ্রস্ত করা, হামলা ও অবিচার করা কোন প্রকৃত মুসলমানের কাজ হতে পারে না। কেউ এমন অন্যায় করলে নবীজি সা. আখেরাতে তার বিপক্ষে দাঁড়াবেন। কোন প্রকৃত মুসলমান নবীজির সা. এর আসামী (বিপক্ষ) হতে উপরোক্ত কাজগুলো করতে পারে না। সুতরাং আপনারা নির্ভয়ে আপনাদের ধর্ম পালন করুন।। আমি মনে করি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই গান গাওয়া খুবই যৌক্তিক এবং সময়োপযোগী হয়েছে। এই গানের মাধ্যমে মুসলমানের পক্ষ থেকে সনাতনী ভাইদের জানানো হয়েছে— অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালনের অধিকার ইসলামে স্বীকৃত। খোলাফায়ে রাশেদা তা ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে গেছেন। ইতিহাস বলে, তখন ভিন্ন ধর্মের লোকেরা স্বাধীন ও সুখে ছিল। গানের শেষে ইসলামী বিপ্লব মানে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বুঝানো হয়েছে।
আমরা (মুসলিমরা) হরহামেশা বলি, ইসলাম সকল ধর্মের মানুষদেরকে তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার দেয়। পূজা মণ্ডপে আমন্ত্রণ পেয়ে ইসলাম যে সম্প্রীতির কথা বলে সেটা গানে গানে কোন কালচারাল সংগঠন বললে অসুবিধাটা কোথায়? অথচ, সাংস্কৃতিক উপায়ে (গানে গানে) এই অধিকারের কথা জানানোয় যেখানে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি প্রশংসা পাওয়ার কথা, সেখানে উল্টো এত বিষোদগার কেন? তারা তো নবীজি সা. এর সুমহান সম্প্রীতির বাণী সনাতনী ভাইবোনদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন মাত্র। তাও উক্ত জেএমসেন হল পূজা উদযাপন পরিষদের আমন্ত্রণ পেয়ে এবং সবিশেষ অনুরোধে।
মূলত একটি মহল হিন্দু-মুসলিম বিভেদ ও বিদ্বেষ তৈরিতে লিপ্ত। ওদের থেকে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের সজাগ থাকা সময়ের দাবি।
লেখকঃ কবি, প্রাবন্ধিক ও সংগঠক
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে । আসুন ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।