Ads

ভয়াবহ প্রসঙ্গ: দেহব্যাবসাকে শ্রমের মর্যাদা ও পতিতাদের শ্রমিকের স্বীকৃতি দেয়া

।। হোসনে আরা পারভীন ।।

গত শুক্রবার ১৬ মে বিকেলে বরেন্দ্র নারী কণ্ঠের আয়োজনে রাজশাহী নগরীর পালকি কনভেনশন সেন্টারে ‘নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা: বাংলাদেশ মুসলিম সমাজের প্রেক্ষাপট ও প্রাসঙ্গিকতা’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এই বৈঠকে প্রফেসর ড. সালেহা জেসমিনের সভাপতিত্বে মূখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- প্রফেসর ডা. উম্মে আবরার, প্রফেসর ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা, ড. শারমিন সুলতানা, অধ্যাপিকা হোসেন আরা পারভীন, ড. মঞ্জিলা শরীফ, শাহানারা খাতুন রহীমা, লামিয়া তাসনীম, সেলিনা পারভীন রুমা, ফারহানা শরমীন প্রমুখ। এছাড়াও মডারেটর নাসরিন আখতার আব্বাসীর সঞ্চালনায় প্রোগ্রামে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বরেন্দ্র নারী কন্ঠ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সামশাদ জাহান লিপি।

আমার আলোচ্য বিষয় ছিলো-যৌন পেশাকে শ্রমের মর্যাদা ও পতিতাদের শ্রমিকের স্বীকৃতি দেয়া নিয়ে-

নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ৩৪ নম্বর পৃষ্ঠায় দাবি করা হচ্ছে, “গণিকাবৃত্তির বিষয়টি বাদ দিতে হবে। কারণ জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতার নামে যৌনকর্মীদের পেশাকে নিরোধ করা মানবাধিকার লঙ্ঘন।”

একইসাথে ৩.২.১.৩.৩ অনুচ্ছেদে সুপারিশ করা হচ্ছে- “যৌন পেশা কে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করা এবং শ্রম আইনে একে স্বীকৃতি দেয়া।” অর্থাৎ আমার ক্ষুদ্রমস্তিষ্ক বলে পতিতাকে শ্রমিকের সম্মান দেয়া এবং তার নিষিদ্ধ হারাম ইনকামকে বৈধতা দিয়ে তার শ্রমের মর্যাদা দেয়া।

অর্থনীতির ভাষায় উৎপাদন কাজে নিয়োজিত মানুষের সবধরণের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম, যার বিনিময়ে অর্থ উপার্জিত হয় তাকে শ্রম বলে। পতিতারা কী করে? যাকে শ্রম বলা যায়! তারা অর্থের বিনিময়ে একাধিক পুরুষের সাথে মিলিত হয়ে ইসলামের পরিভাষায় যেনা করে। যারা তাদের সাথে মিলিত হয় তারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করে না। তারা মদ, জুয়াসহ নানারকম মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ী। ফলে এদের নৈতিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে সমাজের পচন ত্বরান্বিত হয়। মারাত্বক যৌনরোগ ছড়িয়ে পড়ে।

‘নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা: বাংলাদেশ মুসলিম সমাজের প্রেক্ষাপট ও প্রাসঙ্গিকতা’ বিষয়ক রাজশাহীতে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

পবিত্র কোরআন মাজিদের সূরা বনি ইসরাঈল: ৩২ এ বলা হয়েছে- “আর ব্যভিচারের নিকটেও যেও না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ এবং খুবই নিকৃষ্ট পথ।”

বিয়ে বহির্ভূত নারী পুরুষের শারীরিক সর্ম্পককে বলে ব্যভিচার। আজকাল দেশে পুরুষ দেহব্যবসায়ীর কথাও শোনা যাচ্ছে। বর্তমান সমাজে পারিবারিক অশান্তি ও ভাঙ্গনের একটা বড় কারণ এই ব্যাভিচার। সূরা আন-নূরের আয়াত: ২ এ বলা হয়েছে- “ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী; তাদের প্রত্যেককে তোমরা একশ করে বেত্রাঘাত করবে। আল্লাহর বিধান কার্যকর করতে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবিত করতে না পারে যদি তোমরা আল্লাহ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাকো এবং মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে”।

আরও পড়ুন-

যৌনকর্মীদের “শ্রমিক” হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের সুপারিশ কীভাবে করে ?!!

হিন্দুধর্মে ভাগবত পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ এবং গরুড় পুরাণে অন্তত তিনটি নরকে ব্যভিচারী পুরুষ ও নারীকে নরক যন্ত্রণা ভোগ করার কথা বলা হয়েছে। তাহারা ইহজন্মে ও পরজন্মে শাস্তি পাবে। পৃথিবীতে তার আয়ুক্ষয় হবে, মৃত্যুর পর নরকে যাবে।

খৃষ্টধর্মে “তুমি ব্যাভিচার করো না”-সপ্তম আজ্ঞা বলে। পুরাতন নিয়মে বলা হয়েছে, “যে ব্যভিচার করে তার কোন বুদ্ধি নেই এবং যে তা করে সে নিজেকে ধ্বংস করে।” প্রভু যীশুর মতে, ব্যভিচারী অনুভূতিতে লিপ্ত হওয়া আত্মার জন্য সমানভাবে ক্ষতিকর, কারণ এটি একটি প্রকৃত অবিশ্বাসের কাজ এবং উভয়ই একই বিশ্বাস বহন করে।

সংস্কার কমিশনের সুপারিশে যৌনপেশাকে শ্রমের মর্যাদা ও পতিতাদের শ্রমিকের স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে অপরাধে জড়িতদের শাস্তি না দিয়ে সম্মান দেয়া। যা যে কোনো ধর্মের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।

কোনো নারী স্বেচ্ছায় এপথে আসতে চায় না। যারা ঘটনাচক্রে এসে পড়ে তাদের জীবন যে কত দূর্বিসহ সেটা তারাই জানে। তাইতো আত্মহত্যার মত ঘটনা প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে। দেহব্যবসা শ্রমের স্বীকৃতি পেলে ধর্মীয় জ্ঞান থেকে বিচ্যুত অনেকে বিনা পরিশ্রমে ইনকামের সুযোগ পেয়ে এই পঙ্কিল পথে পা বাড়াবে। তৈরি হবে মুনিয়ার মত হাজার হাজার মেয়ে। আর এই সুযোগ পুরোপুরি ভোগ করবে সায়েম সোবহানের মতো ধনকুবেরগণ। অপরদিকে অর্থলিপ্সু যারা এইপথ তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে তারা আরও বেশি এ কাজ করার অনুপ্রেরণা পাবে! বিনা বাধায় আরো বিভিন্ন আলয় গড়ে দালালি করবে, টাকার পাহাড় করবে।

পতিতার জরায়ু থেকে ছড়িয়ে পড়ে সিফিলিস (syphilis) বা ফিরিঙ্গি রোগ, গনোরিয়া (Gonorrhoea) বা বিষমেহ, ক্ল্যামাইডিয়া (Chlamydia), ট্রাইকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis), জেনিটাল হার্পিস (Genital herpes), জেনিটাল ওয়ার্টস (Genital warts), হেপাটাইটিস বি এবং সি (Hepatitis B & C) এইডস (এইচ আইভির জীবাণু) ইত্যাদি। এইসব রোগ হওয়ার বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা আছে।

একজন ইহুদি ভ্রূণ বিশেষজ্ঞ রবার্ট গিলাম, যিনি পরবর্তিতে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। যার একমাত্র কারণ ছিল কুরআনে উল্লেখিত তালাক প্রাপ্ত নারীর ইদ্দতের আদেশ সম্পর্কিত আয়াত এবং ইদ্দতের জন্য তিন মাসের সীমা নির্ধারণের পেছনের রহস্য ও হিকমত সম্পর্কে অবগতি। আল্লাহ তায়ালা কোনো তালাক প্রাপ্ত নারীকে দ্বিতীয় বিয়ের পূর্বে তিন মাসের একটি গ্যাপ রাখতে বলেছেন। তিনি পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন, ‘তালাকপ্রাপ্তা নারীরা তিন মাসিক পর্যন্ত অপেক্ষা করবে’ (সূরা আল-বাকারাহ ২২৮:২) এই আয়াতটি একটি আধুনিক জ্ঞান ডিএনএ এর উদ্ভাবনের রাস্তা সুগম করেছে এবং দেখা গেছে যে একজন পুরুষের বীর্যে থাকা প্রোটিন অন্য পুরুষের থেকে ৬২% পৃথক ও ভিন্ন থাকে। যখন একজন পুরুষ তার সাথে ইন্টারকোর্স করে তখন সেই নারীর শরীরে পুরুষ থেকে আসা শুক্রাণু, ডিএনএ, প্রোটিন জমা হয়। অতএব, বিবাহ বিচ্ছেদের পরপরই, যদি একজন মহিলা অন্য পুরুষকে বিয়ে করে বা একই সাথে বেশ কয়েকজনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে, তাহলে তার শরীরে বিভিন্ন ধরণের ডিএনএ জমা হয় যা বিপজ্জনক ভাইরাসের রূপ নেয় এবং মারাত্মক রোগ সৃষ্টির কারণ হয়।

আরও পড়ুন-

যৌনকর্মীদের “শ্রমিক” হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের সুপারিশ কীভাবে করে ?!!

বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখে যে, প্রথম মাসিক আসার পর একজন মহিলার শরীর থেকে ৩২% থেকে ৩৫% পর্যন্ত প্রোটিন শেষ হয়ে যায়, এবং দ্বিতীয় মাসিক আসার পর তার শরীর থেকে ৬৭% থেকে ৭২% ডিএনএ ধ্বংস হয় এবং তৃতীয় মাসিকের পর ৯৯.৯% পর্যন্ত প্রোটিন নির্মূল হয়ে যায়। এরপর জরায়ু আগের ডিএনএ থেকে সম্পন্নরূপে পরিষ্কার হয়ে যায় এবং কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই নতুন ডিএনএ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকে। একজন গণিকা অনেক মানুষের সাথে মিলিত হয়। যার ফলে বিভিন্ন পুরুষের শুক্রাণু তার জরায়ুতে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন ধরণের ডিএনএ তার মধ্যে জমা হয় এবং সে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

‘নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা: বাংলাদেশ মুসলিম সমাজের প্রেক্ষাপট ও প্রাসঙ্গিকতা’ বিষয়ক রাজশাহীতে গোলটেবিল বৈঠক

বিধবা মহিলার ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান হলো, তার ইদ্দত তালাকপ্রাপ্ত মহিলার চেয়ে বেশি অর্থাৎ ৪ মাস ১০ দিন। এর কারণ হলো দুঃখ ও দুশ্চিন্তার কারণে তার শরীর থেকে প্রাক্তন ডিএনএ দ্রুত শেষ হয় না, এটি শেষ হতে আগের চেয়ে বেশি সময় লাগে, আর এ জন্য মহিলাদের ইদ্দত চার মাস দশ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্য হতে যারা স্ত্রীদেরকে রেখে মারা যাবে সে অবস্থায় স্ত্রীরা নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন বিরত রাখবে।’ (আল-বাকারাহ, ২৩৪)

রবার্ট গিলাম নিশ্চিত হয়ে ঘোষণা দেন যে ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা নারীদের নিরাপত্তা এবং সমাজের সম্প্রীতির নিশ্চয়তা দেয় এবং এই বিষয়েও নিশ্চিত হন যে, একমাত্র প্রকৃত মুসলিম নারীরাই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন, বিশুদ্ধ ও পবিত্র।

ইসলামে একজন মহিলার জন্য এক‌ই সময়ে একাধিক বিয়ে বা একাধিক স্বামী রাখার অনুমতি দেয়া হয়নি। সেখানে একসাথে একাধিক পুরুষের সাথে মিলিত হওয়ার বৈধতা দেয়ার সুপারিশ!

আরও পড়ুন-

যৌনকর্মীদের সংশোধনে সমাজ ও রাষ্ট্র যেমন পদক্ষেপ নিতে পারে

ধর্মের সঠিক জ্ঞানের অভাব, মূল্যবোধের অবক্ষয়ে সমাজ আজ টালমাটাল। এহেনো পরিস্থিতিতে গণিকাবৃত্তিকে “শ্রম”, দেহব্যবসায় নিয়োজিত নারী অথবা পুরুষকে “শ্রমিক” হিসেবে মর্যাদা দিলে পারিবারিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়বে। সুখ-শান্তি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

সবচেয়ে চরিত্রহীন লম্পট পুরুষও কোনো দেহব্যবসাহীকে স্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে পারে না। তাই এইসব শ্রমিকের কখনো সংসার হবে না, তাদের গর্ভজাত সন্তান পাবে না পরিবার, পিতৃপরিচয়, বাবার আদর, সম্পত্তির অধিকার। সমাজের বিষবৃক্ষ হয়ে তারা বেড়ে উঠবে। মাকে ঘৃণার মধ্যদিয়ে পুরো নারী জাতিকে ঘৃণা করবে।

তাই আমি মনে করি ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে একজন ব্যভিচারী পুরুষের সাথে স্বেচ্ছায় ব্যভিচারের লিপ্ত হবার অপরাধে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার অপরাধে অভিযুক্তদের শ্রমিকের মর্যাদা দেয়া, তাদের পেশার সম্মানজনক স্বীকৃতি দেয়া আত্মহনন ছাড়া আর কিছু নয়? মহান আল্লাহতালা আমাদের বিবেক বুদ্ধি জাগ্রত করে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

লেখকঃ লেখক ও গোলটেবিল বৈঠকের বক্তা

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-

[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১) ।

মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে।  আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।

আরও পড়ুন