নিজস্ব প্রতিবেদক,মহীয়সী
জীবন-সংগ্রামের বৈরী বাতাসে পাল উড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে সঙ্গীত। সঙ্গীতের চলমান প্রবাহের পাদদেশে নির্ভয়ে বিচরণ করে সবুজ স্বপ্নের চঞ্চলা ডাহুক। তাইতো গান মানেই জীবন-স্রোতের ইতিবাচক ঢেউ। গান মানেই সামনে চলার উদ্দীপ্ত মশাল। তবে সব গান জীবন-জাগানিয়া সঙ্গীত নয়। সবগানেই ইতিবাচক সবুজ স্বপ্নের ঢেউ ওঠে না। গানের অস্থিমজ্জায় থাকতে হয় ঐতিহ্যের আহ্বান, শেকড়ের গন্ধ, বিশ্বাসের প্রতিধ্বনি। গীতিকবি আব্দুস শাকুর তুহিন সে ধারার গানে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে হেঁটে চলেছেন সাহসী পথিকের মতো। তাঁর গানে স্বপ্নভাসে, বিশ্বাসের পতাকা ওড়ে, অন্ধকারে উঠে আসে পূর্ণিমা চাঁদের কোমল জোছনা। এখানেই তুহিনের স্বার্থকতা।
জীবনের টানাপোড়েন, একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতা, নিরবতা, নিজের সাথে নিজের দ্বন্দ্ব, দ্বন্দ্ব ভুলে ছন্দে ফিরে আসার আকুতি, সবকিছু নিয়ে জীবনের গল্প মানেই তো গান। এসব কিছুই উঠে এসেছে তুহিনের গানে-
“এতো এতো ভালো লাগা, স্বপ্নিল রাত জাগা
সাধজাগে চাঁদটারে ছুই,
এলোমেলো হাল ধরি, ধরি ছাড়ি ধরি করি
হার মানে চাষ করা ভুঁই”
জীবনের দোটানায় সৃষ্টিশীলতা হারিয়ে আর্তনাদ করেছেন তিনি বন্ধ্যাত্ব ও মাতম গানে-
“আমার হাতের কলমটা হায়
কোথায় জানি হারিয়ে গেছে,
কলম! না, সে তূর্ণ শায়ক-
মরীচাতে জড়িয়ে গেছে!”
“ও পাখি তুই কোথায় গেলি উড়ে,
তোরি মাতম সারা বাগান জুড়ে।
তোর বিরহে–
তন্ত্রী বিণায় ঢেউ খেলে না ধ্বনি,
নেইকো ফুলে অলীর গুঞ্জরণী \
আয় না ফিরে সুরের খাঁচায় রাখবো এবার মুড়ে।”
তবে শুধু দ্বন্দে থেমে না গিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে বেরিয়ে আসার আকুতি জানিয়েছেন দোদুল দোল গানে-
“মনের গাড়ির লাগাম ছিঁড়ে মন্ত্রণা দেয় কে যে,
হৃদ কাননে ক্ষণে ক্ষনে কান্না ওঠে বেজে।
ঝাপসা দেখি দোদুল দোলায়
স্বপ্নদাতা বলি তোমায়
পথ দেখাও এই বেলা।”
দেশকে নিয়ে অনুভূতির যে ঢেউ খেলেছে মনে সেসব নিয়েই উঠে এসেছে কিছু দেশের গান-
“আমারও দেশেরও মাটি
যেন বিছানো এক অপরূপ শীতল পাটি”
“স্বপ্নের ঘুড়ি ওড়ে আকাশে আকাশে,
সুখ দু:খ ডানা মেলে বাতাসে বাতাসে,
মানুষ মানুষের জন্য
জীবন বিলিয়ে ধন্য,
সে আমার দেশ, আমার বাংলাদেশে।”
নিখাঁদ প্রেমের অনুভূতি থেকে নিঃসৃত গান ঠাঁয় পেয়েছে এখানে-
“চাঁদে আর জোছনায় ভালবাসাবাসি
শ্রাবন আর বৃষ্টির জলে ভাসাভাসি,
আমার তো চাঁদ নাই,
শ্রাবনের জল নাই
শুধু তাই ভেসে যাই তোমারি টানে”
অথবা-
“লজ্জাবতী লতার মেয়ে
লাজুক চোখে থাকলে চেয়ে
কেন?
ঘোমটা তুলে হঠাৎ করে
আলোয় দিলে হৃদয় ভরে
যেন-“
বিশ্বাসী মানুষ হিসেবে বিশ্বাসের রং আর মায়ের মমতাও ছুঁয়ে গেছে গানের কলি, স্থান পেয়েছে কিছু ফোক গান, ঈদের গান।
“চোখের পলক ফেলতেও তো একটু সময় লাগে
জীবন বাজার তার চেয়েও কম সময়ে ভাঙে,
ভাঙলে বাজার কূল পাবি না সওদা নে কিনিয়া।”
এবং-
“দিন যায় রাত যায়, কেটে যায় কত না প্রহর,
সময়ের জোছনায়
স্বপ্নেরা দোল খায়
আসে না, আসে না, আসে না ভোর।
ঘুম আসে যায় ঘুম,
নি:ঝুম নি:ঝুম
তোর চুম পাই নাকো মা।”
“ঈদ এসেছে নীদ ভেঙ্গেছে হাজার মনের
ফুলপাখিদের মৌমাছিদের তমাল বনের”
লেখক পরিচিতিঃ
আব্দুস শাকুর তুহিনের জন্ম ২৪ অক্টোবর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার রাজারামপুর গ্রামে শৈশব আর বটতলাহাট এলাকায় কৈশোর এবং বেড়ে ওঠা। কর্মজীবি পিতা গোলাম মোস্তফার কঠোর পরিশ্রম আর স্নেহময়ী মা কায়েমা বেগমের মায়া মাখা আদরের মানসে ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতির কঠিন পথে হাঁটার সূচনা। স্কুল বেলায় গান কবিতা অভিনয়সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় থানা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে পুরস্কার প্রাপ্তি অনুপ্রাণিত করে তাঁকে। পরবর্তীতে রাজশাহী শহরে দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে বসবাস। বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে পথচলা। আব্দুস শাকুর তুহিন মূলত গান ভালোবাসেন। এই ভালোবাসা থেকেই গান লেখা বা সুর আরোপের পথে হাঁটাচলা। সম্পাদনা করেছেন বেশ ক’টি লিটল ম্যাগ এবং কণ্ঠ দিয়েছেন একাধিক অডিও গানের এলবামে। গানের পাশাপাশি অভিনয়ও করেন তিনি। বাংলাদেশ বেতার রাজশাহীর তালিকাভুক্ত নাট্যশিল্পী।
পড়ালেখা করেছেন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। কর্মজীবনে একটি প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংকে কর্মরত।
সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য শব্দকলা সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯ এ সম্মাননা পেয়েছেন।
পরিলেখ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত “সুর পবনের ঢেউ” আব্দুস শাকুর তুহিন এর প্রথম গানের বই হলেও গীতিকাব্যের তরঙ্গে নাব্যতার ঢেউ দোলাতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদী।
বইঃ সুর পবনের ঢেউ
প্রকাশনাঃ পরিলেখ প্রকাশনী
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৮০
স্টল নংঃ৭১৩