প্রদোষের প্রহ্লাদ
– নুরে আলম মুকতা
এক হাঁড়ি স্বপ্ন
নিয়ে আমি তোমার
সোনা মানিক, দরজায়
কতক্ষণ করাঘাত করছি মা
কেউ তো এলো না !
গলা শুকিয়ে গিয়েছে
আমার, কপালে
চিক চিক করছে ঘাম
কেউ মুছে দিলো না ।
ধুসর পান্ডুর চোখ
দেখে তো কেউ আৎকে
ওঠে নি গো মা !
আমার বিনিদ্র চোখের নীচে
অনেক কালি জমে গিয়েছে
কেউ কিছুই বলে না ।
কত রাত দিন আমি
শরীর আর মন দিয়ে উজ্জল
স্বপ্নের তোড়া বানানোর
ইমারত বানাচ্ছি গো মা
কেউ বলেনা,
আমার সোনা মানিক
অনেক শ্রান্ত
ওকে একটু আদর করে দাও ।
আমি একদিন অনেক
কেঁদেছিলাম, তোমার উত্তরীয়
গায়ে আত্মজা চোখ মুছে বলেছিলো,বাবা তোমার
মা কি আসবে না কোনদিন ?
তোমার টমেটো আর মসুর ডালের পাঁচফোড়ন
আমার নিঃশ্বাসে প্রতিদিন ।
মাংশ কষার ঘ্রাণ
কেন নেই গো মা আর
মশলা গুলো একই আছে !
একভরি গলার মালা
কত কষ্টে আমি উদ্ধার করলাম
তোমার ললাটের স্পর্শের
জন্য ওটা কাঁপা হাতে
আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি মা।
আয়নাটির ফ্রেম জোড়া দিয়ে
কত বার পালিশ করলাম
তোমার রেহেলটি তেমনি আছে
নেপথলিনের গুলির ঝাঁঝ কি
তোমার কাছে বেড়ে যেত ?
তোমার দারুন পান পাতা বাহারী
শাড়িটি আমি রোজ স্বপ্নে দেখি
গো মা ।
কদিন আগে তোমার
ছোট বোনের ছবি দেখে ,
আমার কথা থেমে গিয়েছিলো
ওরা বলেছিলো
আমি নির্বাক হয়ে গিয়েছি ।
তোমার সোনা মানিক
রোগাটে ছেলে
কত ডুব দেয় ,
সাঁতার কাটে
রাস্তা দাঁপিয়ে ঝামটা মারে ।
আঙ্গুলে পেঁচিয়ে
তোমার শাড়ি ,
বাবার সাথে
তোমার প্রেম আর লুকিয়ে লুকিয়ে
দেখে না
লজ্জাবনত তোমার স্বর্গীয় হাসি।
একদিন আমি ক্ষুধায় কাতর
আমসত্ত্ব চুষতে চুষতে
ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম ,
তোমার সে কি মর্ম বেদনা
এখন আমি বুঝতে পারি ।
আমি তোমার সোনা মানিক
ক্লান্ত মা,শ্রান্ত পথিক
খোঁজ কেউ নেয় না ।
প্রদোষে কেউ
অপেক্ষার প্রহর গুনে না
প্রহ্লাদিত সোনা মানিক
তোমার কেমন আছে?
নুরে আলম মুকতা,কবি,সাহিত্যিক ও সহ-সম্পাদক,মহীয়সী।