শহিদুল হক
ফিনল্যান্ডের স্কুলে পড়াশোনার মান বিশ্বে এক নাম্বার। এর কারণ উৎঘাটন করতে গিয়ে এক আমেরিকান গবেষক অবাক হয়ে দেখলেন, একটা গণিতের টপিক্স তারা ক্লাস ফাইভ থেকে নাইন পর্যন্ত টানা চার বছর পড়ায়। কোনো খারাপ স্টুডেন্ট এই বছরে এই চ্যাপ্টার না বুঝলে এর পরের বছর তো আছেই। না হলে এর পরেও টাইম আছে। কিন্তু পাশ কাটিয়ে যাওয়ার বা টেনে টুনে পাশ মার্ক নিয়ে চলে যাওয়ার চান্স নাই।
একই টপিক্স। কিন্তু ভালোভাবে বুঝে শুনে যেতে হবে। সেই সাথে একই প্রশ্নের সময়ে সময়ে ভিন্ন ভিন্ন উত্তর তৈরী করতে শিখবে।শেখার বিষয় কম। কিন্তু কম বিষয়ে বেশি জানার সুযোগ।
বছর দুই আগে আহনাফের বয়স তখন ৫ বছর। আহনাফের সাথে দেখা হলেই, একটু পর পর জিজ্ঞেস করতাম, “আহনাফ, কেমন আছো?” সে বলতো, “ভালো।” তারপর প্রশ্ন করতাম, “কতটুকু ভালো?” ৫ বছরের বাচ্চার জন্য এটা অনেকটাই ট্রিকি প্রশ্ন। সে কোন স্কেলে উত্তর দিবে সেটা ইন্টারেস্টিং। ভালো কে তো অনেকভাবেই বলা যায়। কোনভাবে বললে উত্তর মানানসই হবে?
প্রথমদিকে, একটু চিন্তা করে রিপ্লাই দিতো, “দুইটা ভালো। তিনটা ভালো। দশটা ভালো। একশোটা ভালো।…..” উল্লেখ্য, সে তখন স্কুলে গণনা শিখছে মাত্র। এক থেকে একশো।কিছুদিন পর একই প্রশ্নের জবাব সে ভিন্নভাবে দেয়া শুরু করলো, “আমাদের গাড়িটার সমান ভালো। তোমার সমান ভালো। ওই গাছটার সমান ভালো।……”
মনে হলো, ভিন্ন উত্তর। যাক এবার সে ডাইমেনশনের পারসেপশন বাড়াচ্ছে। আশেপাশের পরিবেশ শিখছে।
তারও কিছুদিন পর তার আগ্রহের বিষয় হয়ে গেলো, “মহাকাশ”। এবার তাকে যদি প্রশ্ন করি, “কতটুকু ভালো?” তার উত্তর, “পিথিবীর সমান।” (সে বাংলাদেশকে বলতো বাংলাদেছ আর পৃথিবীকে পিথিবী….)
অবাক হলাম কারণ এখন তার গণনা শেখা শেষ। সে জানে সংখ্যা শুধু একশো আর হাজারে শেষ হয় নাই। মিলিয়ন বিলিয়নও আছে। সব সংখ্যার বড় সংখ্যা নিশ্চয়ই পৃথিবী?
তাই প্রশ্ন একটা বাড়ালাম, “কয়টা পৃথিবীর সমান ভালো আছো?” এখনো মনে আছে, সে অনেকক্ষন চুপ ছিল প্রথমবার উত্তর দিতে। May be, he was thinking, how can something be bigger than Earth? তারপর একটু ভেবে উত্তর দিতো, “দুইটা পিথিবীর সমান। তিনটা পিথিবীর সমান।….”
কয়েকমাস আগে তার ফ্রেন্ড রিওনার সামনে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “কতটুকু ভালো আছো?” পাশ থেকে রিওনা বলে দিলো, “থ্রি হান্ড্রেড পার্সেন্ট।” নতুন কিছু শেখার আনন্দ আর উচ্ছাসে এবার উত্তর দিলো, “থ্রি হান্ড্রেড পার্সেন্ট।”
আহনাফ এখন পার্সেন্টেজ বুঝে। এখন সব ভালোর উত্তরই পার্সেন্টেজে দেয়। কতটুকু ভালো? “থ্রি হান্ড্রেড পার্সেন্ট। ফাইভ হান্ড্রেড পার্সেন্ট। টেন হান্ড্রেড পার্সেন্ট।”
পৃথিবীর সকল বাচ্চারাই স্মার্ট। অনেক সময় আমাদের মতো বুড়োদের চেয়েও স্মার্ট। They know how to solve a problem in different ways, in different environment. But they need time.
আমাদের অভিবাবক আর স্কুলগুলো ছাত্রছাত্রীদের একটা জিনিসই কম দেয়, তা হলো – শেখার টাইম। আর একটা জিনিসই বেশি দেয়, তা হলো – কাঁধে ১২টা বই ঝুলানো। আহা, ছাত্রছাত্রীদের স্কুলব্যাগটা যদি একটা ভ্যানগাড়ির সমান হতো তাহলে তো আরো কত কত বই ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয়া যেত।
ফলাফল, আমাদের সিন্ধু থেকে বিন্দু তৈরী হয়। আর পৃথিবীব্যাপী চলছে বিন্দু থেকে সিন্ধু তৈরীর নানারকম নিত্যনতুন আয়োজন।