।। সুলতানা নাহিদ ।।
আমার বড় ননাস কানাডার টরোন্টোতে একটা স্কুলে পড়াতেন। বেশ কয়েক বছর আগে উনি মারা গেছেন। আজকে ১১ বছর বয়সী সুবার এই এই স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আপার একটা কথা মনে পড়ে গেলো।
উনার সাথে একদিন বাচ্চাদের পড়ালেখা নিয়ে কথা হচ্ছিলো। কেন এখনকার বাচ্চাদের পড়ালেখার উৎসাহ কম। কেন তারা আধা ঘন্টাও ধৈর্য্য ধরে পড়তে পারে না অথচ ঘন্টার পর ঘন্টা টিভি দেখে, গেইম খেলে।
আপা বললেন, “কারণ, পড়ালেখা খুব স্লো জিনিস। পড়ার বই বাচ্চাদের মাঝে কোন এক্সাইটমেন্ট তৈরী করতে পারে না। সেখানে কার্টুন, গেমস, এগুলো এত ফাস্ট, এক্সাইটিং বলে সেগুলো তাদের কাছে পড়ার থেকে অনেক বেশী এনজয়েবল মনে হয়। তাদের হ্যাপি হরমোন নি:সরন হয়, তারা ধীরে ধীরে সেটার প্রতি এডিক্টেড হয়ে যায়।”
সে কারণেই উন্নত বিশ্বে বেশিরভাগ স্কুলই বাচ্চাদেরকে থিওরী মুখস্ত করানোর বদলে একটিভিটি বেইজড এডুকেশন দেয়া হয়, প্র্যাক্টিকেল নলেজ দেয়া হয়। মানে, গাছের সালোক সংশ্লেশন তারা মুখস্ত না করিয়ে গাছ লাগিয়ে দেখায়।
যে কোনো স্লো জিনিস এর প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাবে এটাই স্বাভাবিক। সেই কারণেই আমরা বিটিভি না দেখে প্রাইভেট চ্যানেল দেখি, বাংলা সিনেমা না দেখে, বলিউড, হলিউড ম্যুভি দেখি।
সুবার যে বাসায় ভাল লাগে না, এটা কোনো নতুন বিষয় নয়। সুবার বয়সে আমাদের কারোরই বাসায় ভাল লাগতো না। কারণ বাসায় আলাদা করে ভালো লাগার কোনো কারন নাই। বাসায় কোনো এক্সাইটমেন্ট নেই। কোনো কালেই ছিলো না। এক্সাইটমেন্ট ছিলো পাড়ার বন্ধুদের সাথে খেলায়। রিক্সায় করে ঘুরতে যাওয়ায় , আর নিতান্ত বাসায় থাকতেই হলে গল্পের বই পড়ায়। কারন আমাদের হাতে আর অপশন ছিলো না।
সুবার ভালো লাগে না কারণ সুবা বই পড়ে না, খেলতেও যায় না। সুবা টিকটক করে। টিকটক তার কাছে, বই বড়া, খেলাধুলায় চেয়ে অনেক বেশী এক্সাইটিং একটা অপশন। টিকটকের ইন্সট্যান্ট ভ্যালিডেশন, এডমায়ার, লাইক, কমেন্ট তাকে আন্দোলিত করে। তার মনে হয় সে কিছু এচিভ করেছে। শত শত অপরিচিত লোক তার বন্ধু, সবাই প্রসংশা করে, প্রেম করতে চায়। সে নিজের অজান্তেই নিজের থেকে নিজেকে বড় ভাবতে শুরু করেছে, ঠিক অনলাইন তাকে যেভাবে ট্রিট করে।
আমি জানি না সুবার মার শারীরিক অসুস্থতা ঠিক কোন পর্যায়ে। একজন ক্যান্সার পেশেন্ট, তিনি হয়তো মেয়েকে ঠিকভাবে সময় দিতে পারেননি। বাবা নিশ্চয়ই কর্মজীবী। হয়ত তিনিও কোয়ালিটি টাইম দিতে পারেননি। তাদের অপারগতার জন্য তাদেরকে শুলে চড়ানোরও কোনো অধিকার ফেসবুক আদালতের নেই। কারন দূর থেকে বড় বড় অনেক কথাই বলা যায়, কিন্তু দিন শেষে যার ঘানি তাকেই টানতে হয়।
আরও পড়ুন-
সুবার হয়তো এবার টিকটকের থেকেও বেশী এক্সাইটিং লেগেছে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া। হয়ত মোমিন নামের সেই লোক তাকে আরো এক্সাইটিং কিছুর স্বপ্ন দেখিয়েছে। দুইজন একসাথে সংসার করবে, টিকটক করবে, অনেক টাকা ইনকাম করবে এই জাতীয় কিছু।
আমি ঘুম ঘুম চোখে লেখছি, যা মাথায় আসছে। হয়তো এক প্যারার সাথে অন্য প্যারার কোন রেলেভেন্স নেই। শেষে শুধু এইটুকু বলি, সুবার বাবা মায়ের জন্যও আমার অনেক কষ্ট হয়। সুবার জন্য তার থেকে বেশী। তার কাছে এই মুহুর্তে এটাই মনে হবে, যে পৃথিবী তাকে তার প্রেমিকের সাথে থাকতে দেয় না সেই পৃথিবী নিষ্ঠুর।
তাই তাকে খুব ডেলিকেট ভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে। পরম মমতায়, কাউন্সেলিং করে, তার মধ্যের শিশুটিকে জাগিয়ে তুলতে হবে । টিকটকের বাইরে যে একটা সুন্দর পৃথিবী আছে সেটা দেখাতে হবে। সেটার প্রথম পদক্ষেপ হলো, আমাদের এই ব্লেম গেমটা বন্ধ করা।
একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে, তার চিকিৎসা হবে। রোগীকে নিয়ে টানা হ্যাচড়া করে লাভ নেই। সুবা যেহেতু আমার আপনার কারো বাড়িই আসেনি, তদন্তকারী পুলিশও আপনার আমার কাছে আসবে না, তাই তার বাবা মাকে বোঝার সময় দিন তারা কী করবেন। মোমিনের বাবাকে ধরা হয়েছে, মোমিনও যথা সময়ে ধরা খাবে। তার শাস্তিও আমরা ফেসবুকে ধার্য না করে ফেলি।
বরং ভাবি, এই ঘটনা একটা Eye opener. তাই এই উছিলায়, আমরা আমাদের বাসার মোমিন এবং সুবাদের প্রতি নজর দেই, তাদের নিয়ে ভাবি…..
ফেসবুক পেজ রৌদ্রময়ী থেকে সংগৃহীত
আরও পড়ুন-
যেভাবে সুবা-মোমিনের পরিচয় হয়েছিল
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-
[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১) ।
মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে। আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।