Ads

শিশুদের সাথে নবিজি

।। শহীদ সিরাজী ।।

সব মানুষের সেরা মানুষ আমাদের নবিজি (সা)। তিনি ছিলেন রহমাতাল্লিল আলামিন। ছিলেন সব যুগের সব কালের সেরা মানুষ। ছিলেন সকলের আপনজন। যারাই একবার তাঁর পরশে এসেছেন তারাই বদলে গেছেন। যেন পরশ পাথর; সোনার ছোঁয়ায় সকলে সোনা হয়ে যেতেন। তিনি শুধু বড়দের প্রিয় ছিলেন না; শিশুরদের প্রতিও ছিল তাঁর গভীর মমতা, সীমাহীন স্নেহ, নিবিড় ভালোবাসা।

নবিজি শিশুদের দেখলেই শিশু হয়ে যেতেন। খুবই আদর করতেন। কাছে নিতেন। চুমু খেতেন। হাত ধরে হাঁটতেন। গল্প করতেন‌। খেলতেন। ওদের কথা শুনে হাসতেন।

আয়েশা (রা) বলেন, একবার এক বেদুইন নবিজির কাছে এসেছে। তিনি তখন এক ছোট্ট শিশুকে চুমু দিচ্ছিলেন। লোকটি যেন অবাক হয়েছে। বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি শিশুদের চুমু খান? নবিজি বললেন, হাঁ। সে বলল, আমরা তো শিশুদের চুমু দিই না। শুনে নবিজি বললেন,আল্লাহ তোমার দিল থেকে রহম ছিনিয়ে নিলে আমার কী করার আছে।

একবার কিছু সাহাবি নবিজির সাথে দাওয়াত খেতে বের হলেন। বেরোতেই চোখে পড়ল নবিজির আদরের নাতি হুসাইন রাস্তায় খেলা করছে! তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন। কোলে নিতে দুহাত বাড়িয়ে দিলেন। দেখে ছোট্ট হুসাইনের দুষ্টুমি বেড়ে গেল। ধরা না দিয়ে এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করতে লাগলো। মজার দৃশ্য! নবিজিও তাকে ধরার জন্য এটা-সেটা বলে হাসাতে লাগলেন। শেষে ধরে ফেললেন। এরপর এক হাত থুতনির নিচে, অন্য হাত তার মাথার পিছনে রাখলেন। তারপর মাথাকে নিচু করে মুখে মুখ রেখে তাকে চুমু খেলেন। পরে সকলকে বললেন, হুসাইন আমা হতে, আমি হুসাইন হতে। এ কথা বলে নবিজি বোঝাতে চাইলেন, আমাকে যে ভালবাসে সে হুসাইনকেও ভালবাসবে। হুসাইনকে ভালবাসা মানে আমাকে ভালবাসা। যে হুসাইনকে স্নেহ করবে, ভালোবাসবে আল্লাহও তাকে ভালোবাসবে।

শিশুদের প্রতি নবিজির ভালোবাসার ছিল নানান মধুর দৃশ্য। কখনো তিনি মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতেন। কখনো বা চিবুক ধরে আদর করতেন। এক সাহাবা জাফর (রা) মূতার যুদ্ধে শহীদ হলেন। নবিজি তখন পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে তার বাড়িতে গেলেন। তার সন্তানদের আদর করলেন, সান্তনা দিলেন। স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিলেন। শেষে পুরো পরিবারের দায়িত্বও গ্রহণ করলেন। পরে জাফরের ছেলে আব্দুল্লাহ বড় হয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেদিন নবিজি এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেছিলেন। দুআও করে বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি নিজেই জাফরের সন্তানদের অভিভাবক হয়ে যান।

আরও পড়ুন-

শিশু বয়সের শিক্ষা মানুষের জীবনের সেরা পাথেয়

সাহাবি জাবের ইবনে সামুরা (রা)। অনেকদিন নবিজির সাথে ফজরের নামায আদায় করলেন। নামাযের পর নবিজি বের হলেন। সাথে সেই সাহাবিও বের হলেন। দেখতে পেলেন কয়েকটা শিশু নবিজির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তার কৌতুহল দেখা যাক নবিজি কি করেন! দেখতে পেলেন মজার দৃশ্য। দেখলেন নবিজি মিটিমিটি হাসতে হাসতে এক এক করে সবার গালে আদরের ছোঁয়া দিচ্ছেন।

সাহাবি আনাস (রা) বলেন, নবিজি মাঝে মাঝে আনসারদের সাথে দেখা করতে যেতেন। তাদের শিশুরা নবিজিকে পেয়ে খুশিতে ঘিরে ধরতো। তিনি সেই শিশুদের সালাম দিতেন, মাথায় হাত বুলাতেন, দুআ করতেন‌।

শিশুদের প্রতি নবিজি ছিলেন খুবই সংবেদনশীল। তাদের চাওয়া-পাওয়া, ভালোলাগা বুঝতেন। মূল্যও দিতেন। দেখা হলেই তিনি আদর-সোহাগ করে কাঁধে উঠাতেন। শিশু হয়ে যেতেন। শিশুর মত আচরণ করতেন। হাসি দিয়ে কাছে ডেকে নিতেন।

শাদ্দাদ ইবনুল হাদ (রা) বর্ণনা করেন, একদিন নবিজি হাসান বা হুসাইনকে কোলে নিয়ে মাগরিব বা ইশার নামাযের উদ্দেশে বের হলেন। মসজিদে পৌঁছে তাকে পাশে রেখে তিনি সামনে এগোলেন। যথারীতি তাকবীর বলে নামাযও শুরু করলেন। নামাযে একটি সিজদা খুব লম্বা করলেন। সাহাবি বললেন, আমি মাথা উঠিয়ে দেখি নবিজি সিজদায়, আর শিশুটি তার পিঠের উপরে! নামায শেষ হলে সকলে জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নামাযে একটি সিজদা বেশ দীর্ঘ করেছেন! চিন্তা হচ্ছিল, কোনো দুর্ঘটনা ঘটল না-কি, না আপনার প্রতি কোনো ওহী নাযিল হচ্ছে! নবিজি বললেন, এগুলোর কিছুই ঘটেনি বরং আমার এই নাতি আমার উপর সওয়ার হয়েছে। আমার ইচ্ছে হলো না তার শিশুমনের ইচ্ছে পূরণ হওয়ার আগে তাকে সরিয়ে দিই।

সব সময় নবিজি শিশুদের আনন্দ দিতেন।কাঁধে চড়িয়ে আবদার পূরণ করতেন।

আবু কাতাদা (রা) বলেন, একদিন আমরা মসজিদে বসে আছি। নবিজির তাঁর মেয়ে যয়নবের মেয়ে উমামাকে কাঁধে করে আমাদের সামনে এলেন। নামাযের ইমামতিও শুরু করলেন। দেখা গেল উমামা তখনও নবিজির কাঁধে। রুকু করার সময় নবিজি তাকে নামিয়ে রাখছেন। সিজদা থেকে উঠে আবার উঠিয়ে নিচ্ছেন। পুরো নামায তিনি এভাবেই আদায় করলেন।

এক ঘটনা সাহাবি আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেছেন। একবার তিনি দেখলেন নবিজি হুসানইকে কাঁধে উঠিয়ে রেখেছেন আর তার লালা গড়িয়ে পড়ছে নবিজির শরীরে।

আরও পড়ুন-

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ইসলামী ব্যাংক

নবিজি শিশুদের আনন্দ দেয়ার জন্য নানা কৌশল করতেন। নিজের বাহনে চড়িয়ে বসাতেন, আনন্দ দিতেন। আব্বাস (রা) বলেন, এক সফরে নবিজি মক্কায় আসলেন। নবিজিকে স্বাগত জানানোর জন্য মুত্তালিব গোত্রের শিশুরা এগিয়ে এলো। তখন তিনি আব্বাসের দুই ছেলে কুসাম ও ফযলকে নিজের বাহনে উঠিয়ে নিলেন। একজনকে বসালেন সামনে, অন্যজনকে পেছনে।

একদিন নবিজি তাঁর ছোট্ট নাতি হাসানকে চুমু খাচ্ছিলেন। এক সাহাবি আকরা ইবনে হাবিস। পাশে বসে ছিলেন। বললেন, আমার দশটা সন্তান। একজনকেও কখনো চুমু দিইনি। । নবিজি তার দিকে তাকিয়ে বললেন, নিশ্চয় যে দয়া করে না তার প্রতিও দয়া করা হবে না।

তিনি নিজে শুধু তাদের সাথে কোমল আচরণ করতেন না; অন্যদেরও দয়া ও সহানুভূতি দেখানোর উপদেশও দিতেন। তিনি বলেছেন, ‘যারা ছোটদের প্রতি রহম করে না সম্মান করে না তারা ইসলামের দলভুক্ত নয়।’

আমাদের প্রিয় নবি যিনি রাহমাতাল্লিল আলামিন। শিশুদের প্রতি নবিজির ভালোবাসা কতটা সীমাহীন! আসুন আমরা সকলে নবীজির মতো হই। শিশুদের আদর স্নেহ ভালোবাসা দেই। নবীজির মত মমতা দিয়ে তাদেরকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাই। আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলি।

কবিঃ কবি , সাহিত্যিক এবং  সাবেক এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে  লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ  লেখা, গল্প, কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের  লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ;  মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই ।  আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন