Ads

সন্তানকে ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার গড়ার আগে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন!

।।  প্রফেসর  ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন ।।

সন্তানকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের সমাজের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমরা সাধারণত সন্তানদের স্কুলে ভালো ফলাফল, পেশাগত সফলতা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে বেশি মনোযোগ দিই। তবে এসবের চেয়েও বড় কথা হলো, তাদেরকে মানবিক গুণাবলীতে সমৃদ্ধ করা। একাধারে, সৎ, দয়া, সহানুভূতি, সত্যনিষ্ঠা এবং ন্যায়পরায়ণতা শেখানো। আসলে, আমাদের সমাজের উন্নতির জন্য শুধু সুশিক্ষিত নয়, সুশীল এবং নৈতিকভাবে দৃঢ় ব্যক্তির প্রয়োজন।

মুসলিম সমাজে প্রকৃত মানুষ হওয়ার উদাহরণ:

আমরা ইসলামের প্রথম যুগ থেকে বেশ কিছু মহান চরিত্র দেখে শিখতে পারি, যারা শুধু পেশাগত দিক দিয়ে সফল ছিলেন না; বরং তাদের মানবিক গুণাবলীও ছিল অত্যন্ত উন্নত।

১. প্রকাশ্য আলেম ও সমাজ সংস্কারক:  

ইসলাম ধর্মে সেরা উদাহরণ হলো হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি একদিকে ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা, রাজনীতিক, বিচারক এবং যুদ্ধনেতা, অন্যদিকে তার হৃদয়ে ছিল অগণিত মানবিক গুণাবলী—মহান সহানুভূতি, দয়া, সহিষ্ণুতা এবং ন্যায়পরায়ণতা। তিনি শুধু তার অনুসারীদের জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি আদর্শ স্থাপন করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ, হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর একটি বিখ্যাত হাদীস রয়েছে:

“তুমি সেই ব্যক্তি, যে নিজের জন্য যা চাও, তা অন্যের জন্যও চাও।”

 আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ তোমাদের কেউ প্রকৃত মু’মিন হবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করবে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে। (সহীহ বুখারী )

এখানে তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, আমাদের চিন্তা ও কাজ কেবল নিজের জন্য সীমাবদ্ধ না রেখে অন্যদের কথাও ভালোভাবেও ভাবতে হবে।

২. সন্তান গড়ার দায়িত্ব:

ইসলামে সন্তানের সঠিক মানসিক ও নৈতিক গুণাবলী গড়ে তোলার বিষয়ে গভীর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

হযরত আলী (রা.) বলেন: “সন্তানকে এমনভাবে শিক্ষা দাও যেন সে তোমার চেয়ে ভালো হয়ে উঠে।”

তার মানে, একদিকে যেমন সন্তানকে ভালো শিক্ষায় দীক্ষিত করতে হবে, তেমনি তাকে চরিত্রগত দিক থেকেও মজবুত করতে হবে। সন্তানকে যেমন পৃথিবীজুড়ে সফল হতে শেখাতে হবে, তেমনি তাকে ইসলামের নীতিমালা অনুসরণ করতে শেখাতে হবে। যাতে সে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে পারে।

৩. উদাহরণস্বরূপ:

আজকের সময়ের অনেক মুসলিম ব্যক্তি ও আলেম-ওলামা আছেন যারা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ক্ষেত্রের অগ্রগামী। তবে, তাদের সফলতা শুধুমাত্র পেশাগত জীবনে নয়; বরং তাদের ব্যক্তিগত জীবন ও চরিত্রেও মানবিক গুণাবলীর অবদান অত্যন্ত বড়। যেমন, মালালা ইউসুফজাই—যিনি নারীদের শিক্ষা বিষয়ে বিশ্বের প্রশংসা পেয়েছেন। তার সাহস ও মানবিক মূল্যবোধ প্রমাণিত হয়েছে, যখন তিনি আত্মরক্ষার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাগিদ দিয়েছেন নারী শিক্ষার অধিকার নিয়ে। যদিও তার অবদান নিয়ে বেশ সমালোচনা রয়েছে ।

ড. জিলানী আল-জিলানি, একজন বিশিষ্ট মুসলিম চিকিৎসক, যিনি বিশ্বজুড়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন, তার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এই মানুষটি শুধু ডাক্তার হিসেবে সফল ছিলেন না; বরং মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ একটি আদর্শ স্থাপন করেছেন।

৪. অর্থনৈতিক সফলতা বনাম মানবিক মূল্যবোধ:

ইসলামে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বিশিষ্ট মূল্যবান জীবনকে অর্থনৈতিক সফলতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়েছে। আমাদের জীবনের লক্ষ্য শুধুমাত্র অর্থ উপার্জন নয়, বরং অন্যকে সাহায্য করা, তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং সমাজের জন্য কিছু ভালো কাজ করা। ইসলামের মহান আদর্শে এটি অঙ্গীকার করা হয়েছে—

“তোমরা একে অপরকে সহযোগিতা করো” (কোরআন, ৫:২)।

এর বাস্তব উদাহরণ হতে পারে মুহাম্মদ ইউনুস—যিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে দরিদ্র মানুষকে স্বাবলম্বী করেছেন। তিনি শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য নয়, দুঃস্থ মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত করতে কাজ করেছেন। এটি তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি উদাহরণ।

উপসংহার:

সন্তানকে বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ কিংবা উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার আগে তাকে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাকে এমনভাবে বেড়ে উঠতে হবে যে, সে মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য কাজ করবে, সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং সর্বোপরি সত্য, ন্যায় ও মানবিক গুণাবলী অনুসরণ করবে। ইসলামের শিক্ষায়, আমাদের সবার প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনে যে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তা অনুসরণ করলে আমাদের সন্তান শুধু পেশাগত জীবনে সফল নয়, একজন ভালো মানুষ হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হবে।

লেখকঃ প্রাবন্ধিক, গবেষক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ,  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-

[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১) ।

মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে।  আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।

আরও পড়ুন