Ads

সন্তানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং ভালোবাসা প্রকাশ করুন

।।  প্রফেসর  ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন ।।

আমরা আমাদের সন্তানদের এটা কর, ওটা কর না । কেন এটা ভাল হল না?  তোমাকে ডাক্তার হতে হবে, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে এরকম ক্যারিয়ার গঠনের নানা প্রতিযোগিতায় দাড় করিয়ে তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলি । জীবনের সঠিক মূল্যবোধ বোঝানের চেয়ে বস্তুবাদী চিন্তায় মত্ত হয়ে তাদেরকে দুনিয়াবি সফলতা অর্জনের দৌড়ে বিজয়ী হতে তাড়া দেই । একজন অভিভাবক হিসেবে আসলে আমাদের করণীয় কি তা কিছুটা বুঝা যেতে পারে একটা লেখা পড়লে । এখানে  একটা লেখা শেয়ার করলাম, সাথে শিক্ষণীয় ও করণীয় কি তাও উল্লেখ করা হলো,

“সিঙ্গাপুরে একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল পরীক্ষার আগে অভিভাবকদের কাছে একটি চিঠি লিখেছেন, চিঠিটির বাংলায় অনুবাদ :

প্রিয় অভিভাবক,

কয়েক দিনের মধ্যেই আপনার সন্তানের পরীক্ষা শুরু হবে। আমি জানি, আপনারা খুব আশা করছেন যে, আপনাদের ছেলে-মেয়েরা পরীক্ষায় খুব ভালো রেজাল্ট করবে।

⊕ একটা বিষয় মনে রাখবেন যে, যারা পরীক্ষা দিতে বসবে, তাদের মধ্যে একজন নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে শিল্পী হবে, যার গণিত শেখার কোনো দরকার নেই।

⊕ একজন নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হবে, যার ইতিহাস কিংবা ইংরেজি সাহিত্যে পাণ্ডিত্যের প্রয়োজন নেই।

⊕ একজন সংগীতশিল্পী হবে, যে রসায়নে কত নম্বর পেয়েছে তাতে তাঁর ভবিষ্যতে কিছু আসে-যায় না ৷

⊕ একজন খেলোয়াড় হবে, তাঁর শারীরিক দক্ষতা পদার্থবিজ্ঞান থেকে বেশি জরুরি।

⊕ যদি আপনার ছেলে বা মেয়ে পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বর পায়, সেটা হবে খুবই চমৎকার। কিন্তু যদি না পায়, তাহলে প্লিজ, তাদের নিজেদের ওপর বিশ্বাস কিংবা সম্মানটুকু কেড়ে নেবেন না।

⊕ তাদেরকে বুঝিয়ে বলবেন যে, পরীক্ষার নম্বর নিয়ে যেন তারা মাথা না ঘামায়, এটা তো একটা পরীক্ষা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদেরকে জীবনে আরো অনেক বড় কিছু করার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

⊕ আপনি আপনার সন্তানকে আজই বলুন যে, সে পরীক্ষায় যত নম্বরই পাক, আপনি সব সময় তাকে ভালোবাসেন এবং কখনোই পরীক্ষার নম্বর দিয়ে তার বিচার করবেন না!

⊕ প্লিজ, এই কাজটি করুন, যখন এটা করবেন দেখবেন যে, আপনার সন্তান একদিন পৃথিবীটাকে জয় করবে!

⊕ একটি পরীক্ষা কিংবা একটি পরীক্ষায় কম নম্বর কখনোই তাদের স্বপ্ন কিংবা মেধা কেড়ে নিতে পারবে না ৷

⊕ প্লিজ, আরেকটা কথা মনে রাখবেন যে, এই পৃথিবীতে কেবল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অফিসার, প্রফেসর বা আইনজীবীরাই একমাত্ৰ সুখী মানুষ নন।”

আরও পড়ুন-

যেভাবে বখে যায় আমাদের সন্তানেরা

শিক্ষণীয় বিষয়গুলো:

১. পড়াশোনার বাইরে ভবিষ্যত কর্মযাত্রা:

– পরীক্ষায় যারা অংশ নেবে, তাদের মধ্যে কেউ একজন ভবিষ্যতে শিল্পী হতে পারে, যার জন্য গণিত শেখার দরকার নেই।

– কেউ একজন উদ্যোক্তা হতে পারে, যার ইতিহাস কিংবা ইংরেজি সাহিত্যে পাণ্ডিত্যের প্রয়োজন নেই।

– কেউ একজন সংগীতশিল্পী হতে পারে, যার রসায়নে নম্বর পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়।

– কেউ একজন খেলোয়াড় হতে পারে, যার শারীরিক দক্ষতা পদার্থবিজ্ঞান থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

২. পরীক্ষার ফলাফল এবং মনোবল:

– যদি আপনার সন্তান পরীক্ষায় ভালো নম্বর পায়, সেটি চমৎকার, কিন্তু যদি না পায়, তবুও তাদের ওপর বিশ্বাস এবং সম্মান রাখতে হবে।

– তাদের বুঝিয়ে বলবেন যে, পরীক্ষার নম্বর নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই, কারণ এটা শুধুমাত্র একটি পরীক্ষা, জীবনে আরো অনেক কিছু করতে প্রস্তুত হতে হবে।

৩. অপরিবর্তনীয় ভালোবাসা এবং সমর্থন:

– সন্তানকে বলুন, পরীক্ষায় যে নম্বরই পাক, আপনি সব সময় তাকে ভালোবাসবেন এবং কখনোই পরীক্ষার নম্বর দিয়ে তার বিচার করবেন না।

৪. স্বপ্ন এবং মেধার প্রতি বিশ্বাস:

– একটি পরীক্ষা বা কম নম্বর কখনোই আপনার সন্তানের স্বপ্ন বা মেধা কেড়ে নিতে পারবে না।

৫. সুখী হওয়ার একমাত্র পেশা নয়:

– পৃথিবীতে কেবল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অফিসার, প্রফেসর বা আইনজীবীরাই সুখী মানুষ নন।

করণীয় বিষয়গুলো:

১. অভিভাবক হিসেবে সন্তানের প্রতি সমর্থন এবং বিশ্বাস রাখুন:

– সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল কী হোক না কেন, তাদের প্রতি আপনার বিশ্বাস এবং ভালোবাসা বজায় রাখুন। পরীক্ষার নম্বর তাদের মান, মেধা বা ভবিষ্যতকে নির্ধারণ করবে না।

২. পরীক্ষার চাপ কমানোর চেষ্টা করুন:

– সন্তানকে বোঝান যে, পরীক্ষার ফলাফল শুধুমাত্র একটি মুহূর্তের বিষয়, এবং তাদের জীবনে অনেক বড় অর্জন ও সফলতা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন-

সন্তানকে মুমিন হিসেবে গড়ে তুলতে করণীয়

৩. সন্তানকে প্রস্তুত করুন জীবনের বড় লক্ষ্য অর্জনের জন্য:

– তাদের জীবনের মূল লক্ষ্যগুলি চিহ্নিত করে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করুন। তাদেরকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিন যাতে তারা জীবনে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়।

৪. সন্তানকে পরীক্ষার নম্বরের গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করুন:

– পরীক্ষা দিয়ে তাদের জীবনের লক্ষ্য ও স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার সমর্থন এবং ভালোবাসা জানান।

৫. সমাজের সফলতার ধারণা পুনরায় মূল্যায়ন করুন:

– সমাজের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সফলতা ও পেশার গুরুত্ব তুলে ধরে সন্তানের মনোযোগ গাইড করুন। একমাত্র কিছু নির্দিষ্ট পেশা যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর বা আইনজীবী হওয়ার মাধ্যমে সফল হওয়া সম্ভব, এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন।

সবশেষে, আপনি সন্তানকে বলুন:

“তুমি যে কোনো পরীক্ষায় নম্বর পেলে, আমি সব সময় তোমার পাশে আছি এবং তোমাকে ভালোবাসি। তোমার স্বপ্ন এবং মেধার কোনো সীমা নেই, এবং আমি বিশ্বাস করি তুমি একদিন পৃথিবীটাকে জয় করবে। কোনো পরীক্ষার ফলাফল তোমার ভবিষ্যত বা তোমার খুশি নির্ধারণ করবে না। তুমি যেভাবে তোমার জীবন গড়বে, তাতে আমি গর্বিত। তোমার প্রতিটি প্রচেষ্টা এবং যাত্রা মূল্যবান, এবং আমি সব সময় তোমার পাশে আছি।”

এভাবে, সন্তানের প্রতি আপনার পূর্ণ সমর্থন এবং ভালোবাসা প্রকাশ করুন, যাতে তারা নিজের বিশ্বাসে দৃঢ় থাকে এবং জীবনের পথে এগিয়ে যেতে সাহসী হয়।

লেখকঃ প্রাবন্ধিক, গবেষক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ,  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-

[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১) ।

মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে।  আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।

আরও পড়ুন