Ads

স্মার্ট শিশু ও ভাষার সুন্দর ব্যবহার

আব্দুল্লাহ আল মামুর

অধিকাংশ শিশু জন্মের পর কান্না দিয়েই শুরু করে তাদের ভাষার ব্যবহার। শিশুর কান্নার অদ্ভুত আওয়াজের মাঝেও লুকিয়ে থাকে কিছু অর্থ যা তাদের মায়েরা বোঝে। অতঃপর সে তার চারপাশে যেসব শব্দ শুনে কিংবা উপলব্ধি করে তা দিয়েই তৈরি হয়ে শিশুর অভিধান বা শব্দকোষ। এর মধ্যে কিছু কিছু শব্দ মানুষের মুখের কথা হতে পারে, হতে পারে কোন যন্ত্র বা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস যেমন টিভি, কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের কোন শব্দ। কিংবা হতে পারে সেটা প্রকৃতির অন্য কোনো শব্দ। এমন অনেক মধুর কথাও আমরা আমাদের কচিকাঁচা সোনামণিদদের মুখে শুনি যা  নিতান্তই ঐ  শিশুটির উচ্চারণের পূর্বে আর  কখনো শোনা যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় একটি শিশু একটা বিষয়কে তার নিজের মতো নাম দিয়ে ডাকে যা শুনে আমরা অনেক মজা পাই। যেমন আমার ছেলে একেবারে ছোট থেকেই তার খালামণিকে “মাম্মাম” বলতো, সাপকে বলতো “আপ”। আমার মেয়ে পানিকে বলতো “মাম” আর মোবাইলকে বলতো “লোবেল”।
যাহোক, এভাবেই ধীরে ধীরে শিশুরা বড় হতে থাকে। সাথে সাথে বাড়তে থাকে তাদের  শব্দভাণ্ডার (vocabulary)। বিদেশী ভাষা শিক্ষার জন্য আমরা যেমন সে ভাষার  শব্দভাণ্ডার মুখস্থ করি তেমন মাতৃভাষা শিক্ষার জন্য কোন শব্দভাণ্ডার আলাদাভাবে  মুখস্থ করা লাগেনা। শিশুরা যখন কোন মনের ভাব প্রকাশ করতে চায় তখন তারা তাদের সেই অভিধানে সংরক্ষিত শব্দ ব্যবহার করেই কথা বলে। আমরা যেমন আমদের বাড়ির ছাদের পানির ট্যাংকিতে ময়লা পানি রেখে ট্যাপকলে শরবত আশা করতে পারি না। তেমনি যদি আমাদের সোনামণিদের অভিধানে ভালো কথা বা ভালো শব্দ না জমা হয়ে থাকে বা জমা করার ক্ষেত্রে আমরা বাবা মা কার্যকরী পদক্ষেপ না নিয়ে থাকি তবে তাদের কচি মুখ থেকে ভালো কথা আশা করতে পারি কি?
প্রশ্ন রইলো।

আমাদের শিশু যদি ভালো কথা আমাদের থেকে কিংবা তার চারপাশের পরিবেশ থেকে শুনে তবে সে সুন্দর সুন্দর কথা বলতে পারবে যা শুনে গর্বে বুক ভরে যাবে। বলতে ইচ্ছা করতেও পারে “দেখতে হবেনা বেবিটা কার! ”
অন্যদিকে যদি তার সামনে আমরা খারাপ কথা বলি বা বাংলা সিনেমার ভিলেনের ডায়ালগ বলি কিংবা টিভিতে সেইরকম কোনো প্রোগ্রাম দেখি তবে সেটাও আমাদের বাচ্চাদের চরম ভাবে প্রভাবিত করবে। অলুক্ষণে কথা হলেও সত্য যে, একদিন দেখবো সেই ডায়ালগ বাচ্চারা আমাদের উপর প্রয়োগ করছে কিংবা এমন একটা পরিবেশে বলছে যে আমাদের মান ইজ্জত নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হবে। তাই বাচ্চাদের সামনে কথা বলার ক্ষেত্রে সুন্দর সুন্দর কথা বলতে হবে। মিষ্টি কথার ছড়া, ভালো কার্টুন, বাচ্চাদের ঘুমানোর সময় নীতিকথার গল্প, মোটিভেশনাল কথাবার্তা, শিশুতোষ গান হতে পারে তাদের সুন্দর ভাষার জগৎ তৈরীর এক সুন্দর,  পরিকল্পিত ও কার্যকরী পদক্ষেপ।
আসুন আমরা সকলেই শব্দচয়নে সতর্ক হই ও সুন্দর ভাষায় কথা বলি। কচিকাঁচা সোনামণিদের সুন্দরের সাথে পরিচিত করায় এবং তাদের সুন্দর ও আদর্শ করে গড়ে তুলি।

আব্দুল্লাহ আল মামুর কবি ও সাহিত্যিক।

আরও পড়ুন