মনিরা ইসলাম
গতকাল লিখতে পারিনি। শনিবার হলেও নিয়মিত প্রাপ্য ছুটিটা মিস করেছি। সারাদিন সেমিনার ছিল। তবে বিষয় হলো এখন খুব কম সেমিনারেই স্বশরীরে যেতে হয়।
এই সেমিনার যেহেতু অনলাইনে হলো। তাই মূল বিষয় শিশু শিক্ষা হলেও অনলাইনে আমাদের সচল রাখার ( দীর্ঘ সময় বসে থাকার জড়তা মুক্ত থাকার) যথেষ্ট আয়োজন ছিল। ভালো লেগেছে বলতে পারি।
বাচ্চাদের সচল রাখার জন্য সপ্তাহ শেষে কে কি করে তা প্রশ্ন করে আলাপ শুরু করা যায়।এই আলাপ থেকে সৃজনশীল চিন্তা করতে উৎসাহ দেয়া যায়। শূন্য থেকে দশ/বারো বছরের বাচ্চাদের যে কোনো কিছু আনন্দদায়ক আর উপভোগ্য হলে তাদের শিখন ভালো হয়। এই শিখনে আমরা পড়াশোনা শেখানোর ফাঁকে ফাঁকে সামাজিক আচরণ শিখিয়ে নিতে অনেক সফল হতে পারি।
শিশুর বিকাশ মানে শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ। তাই কোনো কাজ থেকে যেন সে একঘেয়ে, বিরক্ত, বীতশ্রদ্ধ না হতে পারে সেদিকে সজাগ থাকা মা বাবা অভিভাবক, শিক্ষক এবং সব ধরণের সেবাদাতার কর্তব্য। পারফরম্যান্স বা ভূমিকা পালন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা যখন যেখানে যেমন দরকার তেমন আচরণ করে থাকি। রিক্সাচালককে ধমক দেয়া, ঘরের সহকারীকে মানসিক চাপে রাখা আমাদের অনেকের জন্য স্বাভাবিক। এটা পারফরম্যান্স হিসাবে মানসম্মত হলো না মনে হয়।
এই প্রসঙ্গে আলাপ হলে অনেকেই তর্কে জড়িয়ে যেতে বিলম্ব করবেন না। আমি বলতে চাই পারফর্মার যেহেতু এক জনই তাহলে একি অঙ্গে এত রূপ ধারণ নিজের জন্য মানসিক চাপ এনে দেয়। কথাটা ‘যারে তুমি পশ্চাতে ঠেলিবে ,সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে’ হিসাবে কাজ করে। এসব কারণে একজস্টেড থাকা সন্দেহপ্রবণ হওয়া সহজ হয়।
ছোট একটা অভিজ্ঞতা থেকে বলি কিছু সমাজসেবা করার অভ্যাস আছে। এই কাজে একটা দল আছে যেখানে আমরা কয়েকজন প্রবাসী আছি। আমরা বাংলাদেশে কাউকে সেবা দিতে যেয়ে বার বার অভিজ্ঞতা পেয়েছি সেখানে মানুষ সেবা চাইতে এসেও ষোলআনা সন্দেহযুক্ত থাকে। তাদের এই সংকট এত গভীর যে দূর থেকে বুঝতে আমাদের একটুও অসুবিধা হয়নি। এখানে সেবা গ্রহণকারী হিসাবে তার সন্দেহ করার একটুও পথ নাই অথচ পথ যে নাই সেই বোধটাও তার নাই। আর সাহায্য এখানেও দরকার। মানসিকতা পরিবর্তনের সাহায্য। আরো বিস্ময়কর হয় তখন যখন বুঝা যায় সংকটকে সংকট হিসাবে না জানার আরো একটা সংকট তাকে ধরে রেখেছে।
তাই কারিকুলাম যদিও বিদ্যালয়গামী শিশুর জন্য হবে এর মাধ্যমে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সেবাদানকারী সহ বিরাট টার্গেট গ্রুপ সাথে নেয়া হবে। তাই কারিকুলাম এ প্রথম সাপোর্ট পরিবারের জন্য। হোমস্কুলিং এন্ড জিমন্যাস্টিক আইডিয়া শিশু ও পরিবারের কল্যাণে শতভাগ উপভোগ্য হয়ে উঠবে। ফলে মা বাবা প্যারেন্টিং পার্টনারশীপের মত দারুণ একটা উপায় পাবেন। প্যারেন্টিং এ নিজেকে কখনো একা মনে করবেন না। তাদের পারফরম্যান্স এ যে সংকট থেকে শিশু ক্ষতির শিকার হবে সে দিকগুলো বিমোচন হবে। পরিবার হচ্ছে প্রথম বিদ্যাপীঠ এই ধারণা মজবুত হবে।
শূন্য থেকে তিন বছর তারপর তিন থেকে সাত বছর শিশুর শেখার ক্যাপাসিটি বেশী থাকে।আর এই সময়টা যথাযথ গাইড দিয়ে পরিবারের সাহায্য নিয়ে ওয়ান টু ওয়ান সার্ভিস দেয়ার সুযোগ তৈরি হবে। ফলে একদিকে পারিবারিক বন্ধন সুন্দর হবে, বুঝাবুঝিতে ইতিবাচকতা থাকবে।
অন্যদিকে একজন শিক্ষক সম্পর্কে পরিবারের সঠিক ধারণা হবে। শুধু বিদ্যালয় একক চেষ্টা দিয়ে শিশুর কল্যাণ করতে সফল হবে না। যদি পরিবার এবং বিদ্যালয় যুগপৎভাবে কাজ করে তখন শিশু তার সব পারফরম্যান্সে সফল থাকবে।
লেখকঃ জার্মানি প্রবাসী বাংলাদেশী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী, প্রাক্তন শরীরচর্চা প্রশিক্ষক,
ডে কেয়ার পরিচালক ও শিশু প্রতিপালন বিশেষজ্ঞ ( প্যাডাগগ)