Ads

বাবা-মা সন্তানের মোবাইল বা স্ক্রিন আসক্তি তৈরি করছে যেভাবে

।। উম্মে সালমা কলি ।।

 

এখনকার বেশীরভাগ বাচ্চারাই মোবাইলে আসক্ত। হতে পারে তা গেম খেলার জন্য বা ইউটিউব ভিডিও দেখার জন্য। যুগটাই যেহেতু প্রযুক্তির, ছেলেমেয়েদের চাইলেও এসব হতে দূরে রাখা সম্ভব নয়। আমি যদি আমার বাচ্চাকে নাও দেই, সে অন্যদের হাতে দেখবে, মন খারাপ করবে। যুগের হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলেও বিপদ, না গেলেও বিপদ। অনেকটা সেই প্রবাদের মতো – দিল্লিকা লাড্ডু যো খায়া সো পস্তায়া, যো ন-খায়া সো ভি পস্তায়া।

 

আমার বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতদের সাথে কথা বলে জেনেছি এখন বাচ্চাদের মাঝে পপুলার গেম হলো Minecraft, আর টিনেজারদের মাঝে পপুলার Fortnite. নেশার মতো খেলে বাচ্চারা। আমার এক বান্ধবী সেদিন বলছিল, ওর মেয়ে নাকি স্কুল হতে এসে সেই যে ট্যাবে বসে খেলতে, রাতে ঘুমাতে যাবার সময় ওঠে। বললাম
– এতোক্ষন খেলতে কেন দিচ্ছিস? স্ক্রিন টাইম তো ২ ঘন্টার বেশী দেয়াই উচিত না, পারলে সেটাকেও কমানো উচিত।
– না দিলে চিল্লাচিল্লি করে। ভালো লাগেনা ঝামেলা করতে। আমি এদিকে আমার কাজ শান্তিমতো করতে পারি।
এই হলো মা-বাবার অবস্থা, যেহেতু নিজেদের কাজ আরামে করতে পারে তাই বাচ্চা যতক্ষন ইচ্ছা ট্যাব বা ফোন নিয়ে থাকুক সমস্যা নেই।

 

গতকাল এক আন্টির সাথে কথা হচ্ছিল দীর্ঘ ২ বছর পর। কথায় কথায় একটা সমস্যার কথা জানালেন। উনার ছেলে উনাদের ফোনেই গেম খেলে। নিজেই ইচ্ছামতো ডাউনলোড করে নেয়, উনারা খেয়ালও করতেন না। তো সেই গেম খেলার সময় কিছু এডাল্ট গেমের এড আসে, কিসব যেন ফ্যান্টাসি টাইপ। ৭ বছরের ছেলে সেই গেম ডাউনলোড করে খেলেওছে। হঠাৎ করেই উনার চোখে পড়ে গেমটা, গেমের ভেতরে ঢুকে উনার তো চক্ষু চড়কগাছ অবস্থা। ছেলেকে জিজ্ঞাসা করায় ছেলে স্বীকার করেছে যে, সে খেলেছে এই গেম। এখন উনি ছেলেকে ফোন দেয়াই বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু ছেলের চিৎকার ও কান্নাকাটিতে অতিষ্ঠ হয়ে Nintendo কিনে দিচ্ছেন, যাতে মনিটর করতে পারেন।

 

অনেক বাচ্চা আবার স্কুলে গিয়ে গেমের নাম জেনে আসে। বন্ধুবান্ধবরা লুকিয়ে নিয়ে আসা মোবাইলে গেম দেখায়, আর যাদের ফোন নেই তারা বাসায় এসে আবদার করে মা-বাবার কাছে খেলতে দিতে ওই গেম। ওই গেম না খেললে তারা বন্ধুবান্ধবদের আলোচনায় শরীক হতে পারে না। কেউ কেউ আবার হুমকিও দেয়, আমার বন্ধু হতে চাইলে এই গেম খেলতে হবে, নইলে আমার সাথে থাকতে পারবে না। আর তখন বাচ্চা বাসায় এসে কান্নাকাটি করে কেন দিচ্ছেনা খেলতে আম্মু বা আব্বু। অনেকে নিজেই ফোনে ডাউনলোড করে খেলতে শুরু করে, Age appropriate হোক বা না হোক।

 

আমার সাড়ে ৫ বছরের ছেলেকে weekday তে ৩০ মিনিট করে দেয়া হয় স্ক্রিন, টিভিতে। আর উইকেন্ডে ২ ঘন্টা পায় ম্যাক্সিমাম। আমার পুরোনো ফোনটায় মাঝে মাঝে ও গেম খেলে, অবশ্যই আমি মনিটর করি সে কি খেলছে। সে মুলত নেটফ্লিক্সে Paw patrol এবং Youtube kids এ Minecraft এর ভিডিও দেখে, টিভিতে; মোবাইল বা ট্যাবে নয়। তার স্ক্রিন টাইম মানেই এটা।

 

মা বাবার ব্যক্তিগত ব্যবহারের মোবাইল বাচ্চাদের কখনও দেয়া উচিত নয়, যদি মনিটর না করা যায়।
পরিচিত এক পরিবারের একটি ঘটনা দিয়ে শেষ করি- বাচ্চার বয়স ৮, সে সবসময় বাবার ফোনে গেম খেলে। বাবা তার হাতে ফোন দিয়ে নিজের মতো কাজ করে। বাবাটির খেয়াল ছিল না যে ফোনে সে কিছু এডাল্ট ভিডিও স্টোর করে রেখেছে। অথবা ভেবেছিল, লুকানো আছে কেউ দেখতে পাবে না। কিন্তু তার ছেলে কিভাবে কিভাবে যেন সে ভিডিও বের করে ফেলে। কি কারণে যেন মা ছেলেকে ডাকতে এসে পিছন হতে দেখে যে, ছেলে ওই ভিডিওগুলো দেখছে। এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া, ছেলের হাতে ফোন দেয়া বন্ধ।অথচ একটু সতর্কতা এড়াতে পারতো এ ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি।

 

বাচ্চাদের আমরা স্ক্রিনটাইম দেব, সেই সাথে সতর্ক থাকবো সে স্ক্রিনে কি দেখছে বা কি করছে সে ব্যাপারে। প্যারেন্টস হিসেবে এটা আমাদের অবশ্য করনীয়, হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
The key is to teach them how to be safe with technology, because ultimately, we want our children to be in charge of technology, rather than feeling technology is in charge of them.
লেখকঃ প্রবাসী লেখক,  টরেন্টো, কানাডা

 

আরও পড়ুন