Ads

শিশুদের মগজের ধ্বংসযজ্ঞ হয় যেভাবে

ড. রউফুল আলম

রির্চাড ফাইনম্যান হলেন আমার এক সাইন্টেফিক হিরো। তার মতো জাদুকরী চরিত্রের বিজ্ঞানী ইতিহাসে খুব বেশি দেখা যায়নি। তার ভিতর সবসময় উচ্ছ্বাস থাকতো। প্রচুর কথা বলতেন। সঙ্গীত পছন্দ করতেন। ছিলেন অসাধারণ শিক্ষক। বিল গেটসের প্রিয় শিক্ষকের নাম ফাইনম্যান। মানুষ ফান করে বলে, ফাইনম্যান একটি ডায়াগ্রাম এঁকেই নোবেল পুরস্কার পেয়ে গেছেন। সেটি ‘ফাইনম্যান ডায়গ্রাম’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এতো সরল ডায়াগ্রাম বিজ্ঞানে খুব বেশি নেই। যাহোক, ফাইনম্যান বলতেন, I don’t create, what i don’t understand—যা বুঝিনা, তা গড়ি না।

শুধু বিজ্ঞান নয়, পৃথিবীর যে কোন বিষয়বস্তু বোধগম্য করতে পারাই আনন্দ। গভীরভাবে উপলব্ধি করে খুব সামান্য কিছু নিয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়। বিজ্ঞান, শিল্প, সঙ্গীত, দর্শন সবই গভীর ভাবনার বিষয়। সে ভাবনায় ডুবলেই সুন্দরের বহুমাত্রার সন্ধান মেলে।

আমাদের শিক্ষাজীবনে চিন্তার সুযোগ নেই। ভাবার সময় নেই। আমাদের কাজই হলো শর্ট-কাট। সাজেশন্স। মুখস্থ। বেশি নম্বর। তারপর ভালো ছাত্র-ছাত্রীর খেতাব নিয়ে পরিবার ও সমাজকে শান্ত রাখা। এই অছেদ্য চক্রের মধ্যে বন্দী করে রেখে আমাদের সহস্র সহস্র মগজকে ধ্বংস করা হচ্ছে। একটা শিশু কিংবা কিশোর যে কতো দারুণ দারুণ সব বিষয় ভাবতে পারে, সেটা আমরা উপলব্ধিই করতে চাই না। একটা পাঁচ-ছয় বছরের বাচ্চাকে আমরা জোর করে বুঝাই, বেশি নম্বরই হলো সফলতা। এর নামই জীবন। কম নম্বর প্রাপ্তি হলো ব্যর্থতা। কম নম্বর পেলে তুমি বাতিল ও পরিত্যক্ত। —তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না।

বেশি নম্বরই যেহেতু সফলতার চাবিকাঠি, তাই তারা যে করেই হোক সে চাবিকাঠি অর্জন করতে চায়। আর তার জন্য প্রথম এবং প্রধানতম হাতিয়ার হলো ‘মুখস্থকরণ’। শিশুদের মস্তিষ্ক উর্বর। তারা ছবি, সংখ্যা, বাক্য সবই মুখস্থ করতে পারে। এই মুখস্থকরণ যখন বছর কয়েক চলে, তখন তার মগজ একটা ধারায় নির্ভরশীল (dependent) যায়। সে মগজ দিয়ে আর বড়ো কিছু ভাবতে পারে না। ভাবনাটাই একটা ক্লান্তিকর (boring) বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

কী ভয়ঙ্করভাবে আমরা আমাদের শিশুদের মগজকে ধ্বংস করি সেটা আমরা টের পাইনা। আমরা কী কখনো তাদের বলি, তোমরা একটা মাছ নিয়ে ভাবো। একটা পাখি নিয়ে ভাবো। একটা গ্লাস নিয়েই ভেবে কিছু বলো। আমরা কী যাচাই করি, তারা পড়াটুকু কতটুকু বুঝতে পারছে! কখনো কী বলি বইয়ের বাইরে ভাবো! অথচ এই শিক্ষাগুলো তাদের জীবনে সবচেয়ে বড়ো অর্জন বয়ে আনতে পারে। শিশুদের সুন্দরতম মস্তিষ্ককে ধ্বংস করে, কী করে সুন্দর সমাজের কথা আমরা ভাবি—সেটা মাথায় আসে না কখনো!

লেখকঃ গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া (UPenn), যুক্তরাষ্ট্র।

 

আরও পড়ুন