Ads

শিশুর ক্ষেত্রে শাস্তি বনাম নিয়মানুবর্তিতা

তৃপ্তি পোদ্দার

Punishment vs Discipline এই বিষয়টি নিয়ে নানান জনের নানা রকমের মতামত । উন্নত বিশ্ব অনেক আগে থেকে শিশুদের শারীরিক আঘাত নিষিদ্ধ করে দিয়েছে  । কিন্তু আমরা জেনে অথবা না জেনে শিশুদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে থাকি ।খুব রাগ হলো একটি চড় দিলাম কিন্তু একটি চড়ে শিশুর অনেক বড়ো ক্ষতি আমরাই করছি আমাদের অজান্তে।শিশুর মৃত্যুর কারণও হতে পারে একটি চড় । Punishment and discipline কখনই এক নয়, আপনি আপনার সন্তানকে Discipline করার জন্য positive এবং negative approach ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু তাকে কোন ক্ষতি করা যাবে না ।

একটি গল্পো বলি- আমার গল্প, আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি । কার্তিক স্যার আমাকে বেত দিয়ে আমার ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলে একটি বাড়ি দিয়েছিলেন। আমি অনেকদিন কলম ধরে লিখতে পারি নি । আমি শারীরিক কষ্ট পেয়েছিলাম বটে কিন্তু মানসিক ভাবে কষ্ট পেয়েছিলাম এই ভেবে স্যার আমাকে মারলেন কেন? আজও জানি না ভুলটি কি ছিল। কষ্ট আরও বেড়ে গেলো যখন মা অথবা বাবা আমাকে বললো আমি পড়া পারিনি এবং সবাই স্যার এর পক্ষ নিচ্ছিলো । আর বাবা এটাও বললো, দোকানে যাবার সময় স্যার কে বিলবো ”মেরে শুধু হাড়গুলো ফেরত দিলেই হবে”. এই গল্পোটি এখন শুনতে বা বলতে ভালো লাগলেও তখন আমার কিন্তু ভালো লাগেনি । মূলকথায় আসা যাক Punishment হলো শাস্তি আর একে বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় আভিযোগ, লজ্জা এবং কষ্ট । অন্যদিকে Discipline হলো একটি নিয়মানুবর্তিতা যা সঠিক আচরণের মাধ্যমে প্রতিদিন অভ্যাসে পরিণত করা । শিশুকে সময়ের প্রতি জ্ঞান, পরিকল্পনা এবং পরবর্তীতে কি করা হবে তার পূর্ব পরিকল্পনা এবং পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে । শিশুর আচারণগত ত্রুটি সঃশোধনের ক্ষেত্রে যে ৪ টি বিষয় অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে

১.পারিবারিক নিয়মাবলী

২. শিশুকে না বলবেন কিন্তু আপনি সেই কাজটি নিজে করছেন, নিজের অভ্যাস ও রোল মডেল ভূমিকাটি আনতে হবে

৩. শিশুকে প্রশংসা (Praise) করতে হবে, তার ভালো কাজটির সাথে সাথে যে কাজটি ভালো না সেই কাজটির পসিটিভ (positive) ফিডব্যাক দিতে হবে

৪. পরিবারে শিশু তার অবস্থান সম্পর্কে জানবে এবং কোন কাজটি করলে কি ধরণের সমস্যা হতে পারে সে সম্পর্কে ও ছোট বেলা থেকে জানাতে হবে ।

পরিকল্পনার ফলে যে সুবিধাগুলো হবে তা নিচে প্রতীয়মান:

#শিশুর ভাষা বিকাশ ।

#শিশু সময়নুবর্তীতা সম্পর্কে জানবে ।

#শিশু পরিকল্পনা করে কাজ করতে পারবে ।

#শিশু অযথা অবদার বা অনুরোধ করলে তা সমঝোতার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে ।

#শিশুকে মনোযোগী করতে হলে নিজেকে আগে শিশুর প্রতি মনোযোগি হতে ।

#পরিকল্পনা করে দিন শুরু করুন ।

পরিবারের সকলে শিশুর routine সম্পর্কে অবগত থাকবে। অযথা কেউ অসুবিধা করবে না । আপনার শিশু আগামী দিনের ভবিষৎ তাকে তৈরী করা আপনার, আমার এবং সমাজের কর্তব্য । একটু শিশু একা বড়ো হতে পারে না । একটি পরিবার, একটি সমাজ এবং একটি দেশ দরকার ।  যত ভালো অবকাঠামো ততো ভাল ফলাফল।

লেখকঃ কলামিস্ট ও শিশু শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, লন্ডন, ইউকে

আরও পড়ুন