Ads

শিশুর খাবারে অনীহা দূর করবেন যেভাবে

মনিরা ইসলাম

খাও খাও তুলি তুমি পেট ভরে খাও,
তোমায় আমি ভালোবাসি ইঁদুরের ছাও।

আজ নিয়ে মোট তিন দিন ধরে বাচ্চাদের খাবার খাওয়া বিষয় নিয়ে লিখছি। উদ্দেশ্য সব পরিবারে শিশু স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করুক। পরিবারগুলো মানসিক চাপ মুক্ত জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠুক। শুরুতে যে চরণ দুটি লিখা হলো তা আমার অনুবাদকৃত ব‌ই থেকে নেয়া। মূল লেখার দীর্ঘ কবিতা অনুবাদ করে এ বিষয়ে দীর্ঘ একটা কবিতা আমার ব‌ই এ আছে যা শিশুর খেতে আগ্রহ বাড়াবার ভিন্ন একটা পথ।

চার বছর বয়স থেকে বাচ্চাদের জন্য এই ব‌ই।অবশ্য যে বাচ্চা যথেষ্ট আলাপ আলোচনা বুঝতে পারে তার জন্য এই ব‌ই বেশী সাফল্য দিতে পারে । শিশু নবজাতক গন্ধ মাখা থাকতে থাকতে তার যেসব অভ্যাস আমরা রুটিন করে নিতে পারি ঘুম এবং খাওয়া তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। রাত নয়টা থেকে ভোর ছয়টা / সাতটা পর্যন্ত ঘুমাতে শেখানো আমাদের স্বাচ্ছন্দ্যকে নিশ্চিত করতে পারে।

গতকাল লিখেছিলাম যিনি রাতে খাবার দিতে চাইবেন তিনি শিশুর চোখ বন্ধ রেখেও খাওয়াতে পারেন। বলা আবশ্যক সে সময় যেন শিশুর মাথা উঁচু করে নেয়া হয়। আর রাতে খাবার অভ্যাস যত দ্রুত সম্ভব ছাড়িয়ে নিতে হবে। সারারাত ঘুমের ওরিয়েন্টেশন যত তাড়াতাড়ি দেয়া হবে, শিশুও ততো সহজে নিরব ঘুম ঘুমাতে পারবে।

বয়স এক বছর হতে হতে শিশুর ঘুম দুইবার হয়ে যায়। রাত নয়টা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত একবার এবং দুপুর বারোটায় দুপুরের খাবার খেয়ে এক ঘন্টা। শিশু ঘুমিয়ে নিজের সারাদিনের অভিজ্ঞতার বিশ্লেষণ করে। তার মানসম্মত বিকাশ নিশ্চিত করতে তার সারাদিনের অভিজ্ঞতাকে ইতিবাচক রাখতে চেষ্টা করা আমাদের পবিত্র কর্তব্য।

আরে! করলাম কি? শুরু করলাম খাওয়া দিয়ে।ঘুম ঘুম হয়ে গেল কেমন করে? যাক তাহলে আবার খাওয়ার দিকে যাই।পাঠক জেনেছেন ঘুম এবং খাওয়া একটা অভ্যাস যা শিশুর প্রথম জন্মদিন হবার আগে একদম গুছিয়ে ফেলতে হয়। শিশু যত বড় হতে থাকে ততো পরিবারের কাজ বেড়ে যায়।

শিশুকে দেখে রাখতে হয়। তাই শিশুর যথেষ্ট নড়াচড়া শুরু হবার আগে যা কিছু ঠিক করে নেয়া যায় সেখানে তাড়াতাড়ি সাফল্য আসে।এমন আরেকটা বিষয় শিশুর জিহ্বা ও মাঢ়ি পরিষ্কার।‌ মসৃণ পাতলা কাপড় বা ছোট মোলায়েম তোয়ালে দিয়ে তর্জনীকে মুড়িয়ে নিয়ে জিহবা এবং মাঢ়ি আলাদা আলাদা ভাবে পরিষ্কার করা যায়।

যে শিশু সব সময় খাবার খেতে বিরক্ত করে খাবারের অনীহা তার একটা অভ্যাস হয়ে যায়। শিশুর অভ্যাস সুন্দর করে গড়ে তুলতে মায়ের আত্মবিশ্বাস চূড়ান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আমার অনুবাদ করা গল্প এমন যে শিশুকে কোলে নিয়ে বসে পায়ের একদিকে তাকে রেখে হাত দিয়ে তাকে বেষ্টনী করে নিয়ে ব‌ই ধরে পড়তে হবে। ওষুধ যেমন বিশ্বাস করে খাই, তেমন বিশ্বাস নিয়ে গল্পটা পড়ে শোনাতে হবে।পরে তার সাথে গল্প নিয়ে আলাপ করতে হবে। বলতে হবে ইঁদুর কি করেছিল? গল্প পড়ে যে কথা তার মনে দাগ কেটেছে মনে হবে সেকথা নিয়ে আলাপ করতে হবে।

মজার ব্যাপার হলো যে বাচ্চা পড়তে শিখেছে তাকে গল্পটা নিজে পড়ে নিতে উৎসাহিত করলেও সুফল পাওয়া যায়।টি ভি কার্টুন দেখা বা সারাদিন টি ভি নিয়ে বসে থাকা অভ্যাস ছাড়াতে আমার বাচ্চাকে গল্পটা পড়তে দিয়েছিলাম।বড় বিস্ময় ছিল সে পড়ে হাসতে হাসতে আমাকে ব‌ই ফিরিয়ে দিয়েছে।আর কখনো টানা সময় ধরে টি ভি দেখেনি।

গল্পটা এমন ছিল যে: দুটা বাচ্চা বন্ধু।তারা পাশাপাশি বাড়িতে থাকে।তারা টি ভির পোকা। নিজেরা কথা বললে তারা টিভি নিয়ে কথা বলে। সবচেয়ে হাস্যকর হলো তারা স্কুলে বসে থাকলে মনে মনে বিজ্ঞাপনের গান গায়। টিচার পড়া ধরলে তার ডিটারজেন্ট পাউডারের গান মনে পড়ে ।অথবা চিপস এর বিজ্ঞাপন।

আসলে উন্নত দেশে শিশু নিয়ে যত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে তা শুধু আমাকে মুগ্ধ করেছে। পাশাপাশি আমার বাংলাদেশটার জন্য দিয়েছে একরাশ হাহাকার।

সবাইকে ধন্যবাদ।

লেখকঃ জার্মানি প্রবাসী লেখিকা
প্রাক্তন ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাক্তন শিক্ষক ক্যম্ব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বাংলাদেশ
প্রাক্তন শরীরচর্চা প্রশিক্ষক
শিশু প্রতিপালন বিশেষজ্ঞ ( প্যাডাগগ)

আরও পড়ুন