Ads

শিশুর জন্ম নিবন্ধন যেন ভুয়া তারিখে না হয় !

তৃপ্তি পোদ্দার

মানব সন্তান পৃথিবীতে আসার সাথে সাথে তার জন্ম নিবন্ধন তার অধিকার, এই কথা আমার নয়। Article 7 of the UNCRC says that “All children and young people have the right to a name and nationality, which they should be granted at birth. It also says that they have a right to as far as possible know and be cared for by their parents.”
প্রত্যেকটি শিশুর জন্মগত অধিকার তার জন্ম নিবন্ধন, যেখানে তার নিজস্ব নাম, জাতীয়তা এবং মা বাবা অথবা পরিচর্যাকারীর পরিচয় থাকতে হবে, শিশু জন্মের যত তাড়াতাড়ি এই জন্ম নিবন্ধন করা যায় ততো ভালৎ । ইউকে আইনগতভাবে শিশু জন্মের ৪২ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে নতুবা আইনগতভাবে মা বাবা অথবা পরিচর্যাকারীকে জরিমানা করা হয়। দেশভেদে এই আইনের পার্থক্য দেখা যায়। শিশুর জন্ম নিবন্ধন করতে প্রয়োজনীয় যে ডকুমেন্টস লাগে তা হলো, জন্মস্থান এবং জন্মতারিখ, নাম, বংশের নাম এবং লিঙ্গ, মা বাবার নাম , বংশের নাম এবং ঠিকানা, মা বাবার জন্মস্থান এবং তাদের জন্ম তারিখ, মা বাবার বিবাহ নিবন্ধন অথবা সিভিল পার্টনারশীপ প্রমাণপত্র এছাড়াও আরও কিছু প্রমাণপত্র।
কেন হঠাৎ করে এই বিষয় নিয়ে লিখছি, আমি ইউকে আসার পরপরই একটি ডে কেয়ারে চাকরি শুরু করি একজন পেশাজীবী হিসেবে। যদিও আমি তাদের প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষিত ছিলাম কিন্তু ভাষাগতভাবে প্রকাশ করতে একটু কষ্ট হতো বলে জুনিয়র লেভেল থেকেই আমার শুরুটা হয়েছিল, এক কথায় ইংলিশে দুর্বল ছিলাম, এখনও যে পারদর্শী তা নয় কিন্তু মনের ভাব কিছুটা প্রকাশ করতে পারি।

চাকরীর শুরুতেই বার্থডে উদযাপন খুব আনন্দের একটি বিষয় ছিল। প্রতি সপ্তাহে হয় সহকর্মী অথবা শিশুদের কারও না কার জন্মদিন থাকতো। বিপদটা হলো ১০ মার্চ, সবাই কেক, ক্যান্ডল নিয়ে আমায় যখন অভিনন্দন জানাতে আসলো, আমি বুঝতে পারিনি এটা আমার জন্মদিন ছিল কারণ আমার নাম ইংলিশে তৃপ্তি উচ্চারণ ওদের আসে না “টিপটি” বলে, আর সিনিয়ররা আদর করে “টিপ” বলতো। আর ২ বছরের নিচের শিশুদের ইশারা ভাষায় “টা” শুধু শেখানো হতো।
আমি লজ্জায় লাল হয়ে কিছু না বলতে পেরে খুব কষ্ট পাই কারণ ওটা আমার সঠিক জন্মদিন ছিল না। আজ যখন লিখছি এটা আমার সঠিক জন্মদিন, তাহলে ওই দিনটা কি ছিল, ওই দিনটি ছিল জন্ম নিবন্ধন না থাকার ভোগান্তি। আমার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, তিনি নিজের দ্বায়িত্ববোধ থেকে আমার জন্মদিনটি পরিবর্তন করে ওনার যেটি মনে এসেছিলো সেটি বসিয়ে দিয়েছিলেন।

গল্পের শুরু এখন, আমাকে বলতে অনুরোধ করা হলো, আমার জন্মের কথা, আমার শিশুকালের গল্প, আমি কেমন ছিলাম, কি খেতে ভালোবাসতাম আর ও প্রশ্ন। আমি গল্প বলতে বলতে একটি সময়ে বলে ফেলি, “আমি অনেক শীতে জন্মগ্রহণ করেছি, একটি বছর শেষ হয়ে নতুন বছরের শুরুতে”, আমার একজন লাইন ম্যানেজার ছিলেন বাংলাদেশী সিলেট বংশউদ্ধভূত। আমায় প্রশ্ন করলেন এবং জানতে চাইলেন, “বাংলাদেশে কি মার্চ মাসে শীত থাকে”, আমি খুব লজ্জা এবং কষ্ট পাই এই ভেবে, উনি কি ভাবলেন আমি মিথ্যা বলছি নাকি আমি ইংলিশ বুঝতে না পেরে উল্টোপালটা বলছি। কিন্তু আমি কোনটাই করিনি, আমি আমার সত্য আনন্দের ঘটনা শিশুদের সাথে ভাগাভাগি করতে চেয়েছি কিন্তু বুকভরা একরাশ কষ্ট নিয়ে পুরোপুরি মন খারাপ করে ২/৩দিন ছিলাম।

আমার ম্যানেজার এখন জানেন, আমি মিথ্যা বলিনি। আমার প্রতিটি কথা সত্য ছিল কিন্তু সত্য ছিল না আমার পাসপোর্টে লেখা জন্ম তারিখটা। যেটি দেখে আমার জন্মদিনটি বোর্ডে লেখা হয়েছিল। আমায় আমার ম্যানেজার বলেছিলেন এই বিষয়ের উপর গবেষণা করা উঠিত।

আমি লন্ডন ইউনিভার্সিটি তে পড়াকালীন সময়ে একটি বাংলাদেশী পরিবারের সাথে থাকি, মেয়েটি বিয়ে করে লন্ডনে আসে। মেয়েটি ইংলিশ ভালো ছিল না অথার্ৎ বলতে পারতো না। আমাকে নিয়ে গিয়েছিলো ডাক্তারের কাছে, তার হয়ে বাংলা ভাষাকে ইংলিশে বলে ডাক্তারকে বুঝিয়ে দেব বলে। আমি তো অবাক ডাক্তার তাকে বলছে তুমি তো ১৯ বছর আর সে আমায় বলে বলতে আমি ১৫ বছর। আমি ডাক্তারকে কি বলবো আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম না কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম তার ও জন্ম তারিখ এবং সালে গরমিল। মেয়েটিকে শিশু অবস্থায় বিয়ে করিয়ে লন্ডনে আনা হয়, যেহেতু শিশু অর্থাৎ ১৮ বছরের নিচে, মেয়েটির জন্ম তারিখটি এবং সালটি পরিবর্তন করে বয়স বাড়িয়ে এই দেশে আনা হয়েছিল। আমার মাস্টারের গবেষণার বিষয় ছিল, “মিথ্যা জন্ম নিবন্ধন শিশুর শিক্ষা জীবনে কিভাবে প্রভাব ফেলে।”

শিশুর অধিকার, একটি জন্ম তারিখ নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে এবং সে জানবে তার জন্মস্থান, মা বাবার পরিচয়, তার জাতীয়তাবোধ। কোন শিশুকে কোন মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা উঠিত নয়। একজন মা অনেক কষ্ট করে পৃথিবীতে সন্তানটি নিয়ে আসেন, সন্তান জন্ম দানের দিনটি অবশ্যই সত্য থাকা মা ও শিশু দুজনের জন্য জরুরি।

শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে শিশুর সঠিক জন্ম নিবন্ধন অর্থাৎ শিশুর সঠিক বয়সটি দরকার।

লেখকঃ আর্লি ইয়ার্স এক্সপার্ট, ইউকে

আরও পড়ুন